প্রচ্ছদ » ঘুরে এলাম » বিস্তারিত
অবরোধে পর্যটন শিল্পে ধ্বস
পর্যটক শূন্য চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল
২০২৩ নভেম্বর ১২ ১৬:২২:০৭মো: আল-আমিন, শ্রীমঙ্গল : চায়ের রাজধানী হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজারে ভরা মৌসুমেও দেখা নেই পর্যটকদের। অথচ গত মাসের মধ্যবর্তী সময়ও জেলার যেসব পর্যটন কেন্দ্র সকাল-সন্ধ্যা কোলাহল মুখর ছিল, সেসব এখন সুনসান নীরবতা। অলস সময় পার করছেন শতাধিক হোটেল, গেস্টহাউস, মোটেল, রিসোর্টের কর্মীরা। এতে মৌসুমের শুরুতেই ক্ষতির মুখে পড়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। টানা অবরোধ, হরতাল ও দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায়ে এমন অবস্থা বলে জানান তারা। ক্ষতির পরিমাণ প্রতিদিন কোটি টাকা বলে জানান শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী সেলিম আহমেদ।
জেলার অন্যতম পর্যটন স্পটগুলো হলো- কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর স্মৃতিসৌধ, মণিপুরী পাড়া, শ্রীমঙ্গলের সবুজাভ চা বাগান, রাবার বাগান, বধ্যভূমি একাত্তর চত্বর, হাইল হাওর, বাইক্কা বিল, কুলাউড়ার হাকালুকি হাওর, সদর উপজেলার মুন ব্যারেজ প্রভৃতি। সম্প্রতি এসব কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে প্রায় পর্যটকশূন্য। অথচ গত এক মাস আগেও মুখরিত ছিল দেশি-বিদেশি পর্যটকে।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে পরের বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত মৌলভীবাজারের প্রায় শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্টাহাউস থাকত শতভাগ অগ্রিম বুকিং। চলতি বছরেও অগ্রিম বুকিং হয়েছিল। তবে অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখ থেকে অবরোধ-হরতাল ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রায় ৯৫ শতাংশ বাতিল হয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ায় চরম হতাশায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। দ্রুত এ অবস্থা থেকে উত্তরণ না হলে পর্যটনশিল্পে চরম বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা করছেন তারা।
শ্রীমঙ্গল গ্রীনলিফ গেস্ট হাউজের স্বত্বাধিকারী এস.কে.দাশ সুমন বলেন, ‘ইদানীং শ্রীমঙ্গলে ট্যুরিস্ট অনেক কমে গেছে। শুক্রবার ও শনিবার কিছুটা দেখা গেলেও বাকি দিনগুলোতে কেউ আসে না। অথচ এখন পর্যটনের ভরা মৌসুম। প্রতি বছর এ সময়ে পর্যটন স্পটগুলোতে থাকত উপচে পড়া ভিড়। এখন ক্ষতির মুখে ট্যুর অপারেটর ব্যবসায়ীরা। আমরা দ্রুত দেশের এমন সংকটের সামাধান চাই।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাশের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, লাউয়াছড়ায় ডাব বিক্রি করে সংসার চলে। বিগত ১০-১৫ দিন এ উদ্যানে কোনো ট্যুরিস্ট নাই। বেচা-বিক্রিও নাই। বর্তমানে দুরবস্থায় আছি। সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে।
শ্রীমঙ্গলের নীরব-নিসর্গ ইকো রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী কাজী সামছুল হক বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসার ধকল গেছে। করোনাভাইরাস, বন্যাসহ নানা কারণে পর্যটনশিল্প ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবার আশায় ছিলাম, অতীতের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারব। সেপ্টেম্বর ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারব কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। এ অবস্থা চলমান থাকলে কর্মচারী ছাঁটাই করতে হবে।
সেলিম আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতায় পুরো জেলার পর্যটন ব্যবসা ধ্বস নেমেছে। জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট রয়েছে। সবগুলোই এখন ফাঁকা। প্রতিদিন এক কোটি টাকার মতো ক্ষতি হচ্ছে আমাদের। এ অবস্থা চলমান থাকলে কর্মী ছাঁটাই করতে হবে। ইতোমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান ছাঁটাই শুরু করেছে। অনেকের ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে হিসাবরক্ষক আফজালুল হক বলেন, ‘গত বছরও এই সময়ে প্রতিদিন ৫০০-৭০০ ট্যুরিস্ট আসতেন। এখন গড়ে ১০০-১৫০ জন।’ বিট কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান বলেন, ‘মানুষ নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে না, যানবাহন চলে না-তাই ভ্রমণে আসে না। প্রতি বছর যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় হতো, তার সিকিভাগও হচ্ছে না।
ট্যুরিস্ট পুলিশ মৌলভীবাজার জোনের উপপরিদর্শক প্রবাণ সিনহা বলেন, ‘নানা কারণে তুলনামূলকভাবে এবার পর্যটক অনেক কম। তবে ট্যুরিস্ট পুলিশ জেলার পর্যটন স্পটগুলোতে নিয়মিত টহল দিচ্ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসব ব্যাপারে সোচ্চার। পর্যটকরা যাতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হয়, সে লক্ষ্যে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
(এএ/এসপি/নভেম্বর ১২, ২০২৩)