প্রচ্ছদ » মুক্তিযুদ্ধ » বিস্তারিত
রবিবার কোটালীপাড়া মুক্ত দিবস
২০২৩ ডিসেম্বর ০২ ১৪:২৩:০৭গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : রবিবার (৩ ডিসেম্বর) কোটালীপাড়া মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া হানাদার মুক্ত হয়েছিল। কোটালীপাড়ায় এদিন আনন্দের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। অনেক দুঃখ বেদনার পরও সেদিন এলাকার মানুষের মধ্যে ছিল আনন্দের জোয়ার।
কেননা সেদিন কোটালীপাড়ার মানুষ মুক্তির স্বাদ পেয়ে দলে দলে রাস্তায় নেমে পড়ে। এদিন কোটালীপাড়া হানাদার মুক্ত হয়। কোটালীপাড়ার কাকডাঙ্গা রাজাকার ক্যাম্পে হামলা করে হেমায়েত বাহিনী ক্যাম্পের পতন ঘটায়। রাজাকার ক্যাম্পের সদস্যরা হেমায়েত বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। রাজাকার ক্যাম্পের পতনের মধ্য দিয়ে ৩ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে গোপালগঞ্জের মধ্যে প্রথম কোটালীপাড়া হানাদার মুক্ত হয়।
এ অঞ্চলে পাকবাহিনী ও তাদের দোষরা ছিল খুবই শক্ত অবস্থানে। কোটালীপাড়ার সন্তান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সৈনিক হেমায়েতউদ্দিন যুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তান থেকে দেশে পালিয়ে আসেন। গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী। কোটালীপড়ায় তিনি একটি মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্প গড়ে তোলেন। যেখানে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরকেও যুদ্ধের ট্রেনিং দেয়া হতো। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে বেশ কয়েকটি সম্মূখ যুদ্ধে অবতীর্ন হয় হেমায়েত বাহিনী। উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হয় হরিণাহাটি, মাটিভাঙ্গা, বাঁশবাড়িয়া, ঝনঝনিয়া, রামশীল, জহরের কান্দি, কোটালীপাড়া সদর প্রভৃতি স্থানে। এ ছাড়া ছোট যুদ্ধ হয়েছে বেশ কয়েকটি। আর এসব যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন হেমায়েত বাহিনী প্রধান হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রম।
ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়েছিল “হেমায়েত বাহিনী”। ৭২টি গ্রুপের সমন্বয়ে গঠিত এই হেমায়েত বাহিনী যুদ্ধ করেছিল মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গনে। হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে এই বাহিনীর ২৪ জন আহত ও ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে হেমায়েত বাহিনীর সদস্যরা ১৩৪টি অপারেশন পরিচালনা করেন। এর মধ্যে রামশীলের যুদ্ধ অন্যতম। এই যুদ্ধটি অই অঞ্চলে ঐতিহাসিক রামশীলের যুদ্ধ বলে পরিচিত। হেমায়েত বাহিনীর প্রধান হেমায়েত উদ্দিন ঐতিহাসিক রামশীলের যুদ্ধে মারত্মক ভাবে আহত হন। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদানের জন্য দেশ স্বাধীনের পর হেমায়েত উদ্দিনকে রাষ্ট্র “বীর বিক্রম” খেতাবে ভুষিত করে।
গোপালগঞ্জের প্রবীণ সাংবাদিক ও ইতিহাস গবেষক রবীন্দ্র নাথ অধিকারী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে হোমায়েত বাহিনীর আবদানকে স্মরনীয় করে রাখতে সরকার কোটালীপাড়া উপজেলার টুপুরিয়া গ্রামে হেমায়েত বাহিনী স্মৃতি জাদুঘর করে দিয়েছে। জাদুঘরটি মুক্তিযুদ্ধের স্মারক বহন করছে। নতুন প্রজন্ম এই জাদুঘর থেকে বীর বিক্রম হেমায়েত বাহিনীর বীরত্বগাথা সম্পর্কে জানতে পারছে।
হেমায়েত বাহিনীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ লুৎফর রহমান বলেন, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে শুধু যৌথবাহিনীই দেশ মাতৃকার জন্য যুদ্ধ করেনি। পাক হানাদার বাহিনীকে এদেশ থেকে বিতাড়িত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে তৎকালীন সময়ে এদেশে বেশ কিছু অঞ্চলে গঠিত হয়েছিল কয়েকটি বাহিনী। ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়েছিল “হেমায়েত বাহিনী”।
আমরা এই হেমায়েত বাহিনীর অধিনে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। দেশ স্বাধীন করেছি। নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের অভূদ্যয়ের ইতিহাস জানান দিতে হবে। তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত করতে হবে। এই জন্য মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে হেমায়েত বাহিনী জাদুঘর নির্মাণ করে দিয়েছে। এই জাদুঘরকে আরো সমৃদ্ধশালী করতে হবে। এটি তরুণ প্রজন্মের কাছে বাঙ্গালীর বীরত্বগাথার ইতহাস জানান দেবে।
(এমএস/এএস/ডিসেম্বর ০২, ২০২৩)