প্রচ্ছদ » পাঠকের লেখা » বিস্তারিত
দিল্লিতে মোদীর নেতৃত্বে কোয়ালিশন সরকার
২০২৪ জুন ০৭ ১৬:৪০:১৩
শিতাংশু গুহ
নরেন্দ্র দামোদর মোদী শনিবার ৮ জুন ২০২৪ তৃতীয়বারের মত ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন। মোদীর আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এতে যোগ দেবেন। ভারত সার্কভুক্ত শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়কদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্যে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, পাকিস্তান ও মালদ্বীপ আমন্ত্রণ পায়নি।
ভারতে লোকসভা নির্বাচনে এবার কোন দল এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। বিজেপি বা কংগ্রেস কেউই ম্যাজিক নাম্বার ২৭২টি আসন পায়নি। বিজেপি সমর্থিত এনডিএ (ন্যাশনাল ডেমক্রেটিক এলায়েন্স) জোট পেয়েছে ২৯৩টি আসন, কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স) পেয়েছে ২৩১।
বেশ কিছুকাল পর দিল্লিতে কোয়ালিশন সরকার গঠিত হচ্ছে। একক দল হিসাবে বিজেপি পেয়েছে ২৪০টি আসন, কমেছে ৬৩টি। কংগ্রেস পেয়েছে ৯৯টি, বেড়েছে ৪৭টি আসন। পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল পেয়েছে ২৯টি আসন, বেড়েছে ৭টি; বিজেপি পেয়েছে ১২টি, কমেছে ৬টি; কংগ্রেস ১টি আসন পেয়েছে। বামেরা শূন্য।
নির্বাচনী ফলাফলে স্পষ্ট যে, মোদী ম্যাজিক কাজ করেনি। এক্সিট পোল গাঁজাখুরি ছিলো, মিডিয়া গ্রাউন্ড ওয়ার্ক না করে দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে মনমত এক্সিটপোল দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিশেষত: উত্তর প্রদেশে বিজেপি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, কংগ্রেস ভাল করেছে। ওড়িষ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা বিধানসভায় বিজেপি ভালো করেছে। মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, কর্ণাটক, আসামে ইন্ডিয়া জোট ভালো করেছে।
ভারতে ৭ দফায় নির্বাচন সম্পন্ন হয় ১ জুন, শুরু হয়েছিলো ১৯ এপ্রিল। ৪ জুন ফলাফল প্রকাশিত হয়, মোট আসন ৫৪৩। এবার লোকসভা নির্বাচনের বিশেষত্ব হচ্ছে: এনডিএ জিতেছে, কিন্তু মনে হচ্ছে তারা হেরেছে; ইন্ডিয়া জোট হেরেছে, কিন্তু মনে হচ্ছে তারা জিতেছে। ফলাফল প্রকাশিত হলে বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল বিজয় উৎসব করেছে। এক নেতা বলেছেন, এটাই মোদীজির ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-সবাই খুশি। সবচেয়ে খুশি নির্বাচন কমিশন, ইভিএম নিয়ে কোন কথা ওঠেনি।
বলা হচ্ছে, রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জুড়ো’ পদযাত্রা বা প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর যুক্তিনির্ভর প্রচারণা ইন্ডিয়া জোটের সফলতায় কাজে লেগেছে। অন্যরা বলছেন, বিজেপি’র যথেষ্ট ভালো না করার কারণ হচ্ছে, মুসলিম ভোট ছিলো পুরোটাই ‘এন্টি-বিজেপি’, যা পেয়েছে কংগ্রেস, মমতা ও অখিলেশ। বিজেপির অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী হেরেছেন। অযোধ্যায় পর্যন্ত বিজেপি হেরেছে। মোদী, অমিত শাহ, রাহুল গান্ধী জিতেছেন, প্রিয়াঙ্কা নির্বাচনে দাঁড়াননি।
মহারাষ্ট্রে শিবসেনা, উদ্ধব ঠাকুর, ও শারদ পাওয়ারের কাছে বিজেপি হেরেছে। রাম মন্দির হিন্দুদের উৎসাহিত করলেও মুসলিমদের বিজেপি’র বিরুদ্ধে একজোট করেছে। মুসলিম এলাকায় ভোটের নমুনা দেখে বলা যায়, মুসলিম ভোট পড়েছে আনুমানিক ৭০%, পক্ষান্তরে হিন্দু ভোট ৪৫-৫০%, বিজেপি’র জন্যে এটিও একটি দুঃসংবাদ। লোকসভায় কংগ্রেস ও রাহুল গান্ধী এবার আগের চেয়ে যথেষ্ট শক্তিশালী। মোদির একচ্ছত্র আধিপত্য হোঁচট খাবে।
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু’র পর মোদী টানা তিনটার্ম প্রধানমন্ত্রী হবার কৃতিত্ব অর্জন করলেন। ইন্দিরা গান্ধী ১৫ বছর ৩৫০ দিন ক্ষমতায় থাকলেও টানা তিনটার্ম ক্ষমতায় ছিলেন না (১৯৬৬-৭৭ এবং ১৯৮০-মৃত্যু)? তবে কোয়ালিশন সরকার নিয়ে মোদীকে এবার যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে। কংগ্রেস বলেই দিয়েছে, স্বৈরাচারের জবাব দেয়া হবে, দজ্জ্বাল মমতা বা তৃণমূল তো আছেই। তবে শরিকগন ঠিক থাকলে সরকার ঠিকঠাক চলবে।
এনডিএ জোটের নীতিশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডু-কে নিয়ে শুরুতেই যথেষ্ট জলঘোলা হলেও তারা পরিষ্কার বলেছেন যে, তারা জোটেই আছেন। বিশেষত: এই দুই নেতা ও তাদের দলকে খুশি রাখতে হবে। অন্ধ্রপ্রদেশের টিডিপি (তেলেগু দেশম পার্টি) নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু’র রয়েছে ১৬টি আসন। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের জেডিইউ (জনতা দল ইউনাইটেড)’র রয়েছে ১২টি আসন। ইতিমধ্যে এঁরা দাবিনামার লম্বা ফর্দ মোদিকে ধরিয়ে দিয়েছেন।
মিডিয়া জানায় টিডিপি স্পিকারের পদটি চান, সাথে ৫ জন মন্ত্রী। জেডিইউ রেল মন্ত্রণালয় চাইছেন। মহারাষ্ট্রের শিবসেনার একাংশ একনাথ সিন্ধে’র ৭টি আসন রয়েছে, তাকে হাতছাড়া করা যাবেনা। এলজেপি’র চিরাগ পাসোয়ানের রয়েছে ৫টি আসন। দেবগৌড়ার দল কৃষি মন্ত্রণালয় চেয়েছে। কুমার সিং-কে বাদ দেয়া যাবেনা। জেডিএস’র ২টি আসন রয়েছে, তারাও একটি মন্ত্রিত্ব চায়।
দেখার বিষয়, মোদী কিভাবে সামলান। তবে ইন্ডিয়া জোট চাইলেও সরকার গঠন দুঃসাধ্য হবে। এজন্যে তারা আগেই বলে দিয়েছেন তারা বিরোধী দলেই থাকবেন। মোদীর বিরুদ্ধে কখনো অনাস্থা প্রস্তাব এলে এবং তা পাশ হয়ে গেলে ভারতে মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না। এটিও সত্য, সরকারি দল বিজেপি স্বতত্র এমপিদের কাছে টানতে চাইবে। ইন্ডিয়া জোটে ইতিমধ্যেই ভাঙনের সুর শোনা যাচ্ছে। উপমহাদেশের শান্তি ও অগ্রগতির স্বার্থেই দিল্লিতে স্থিতিশীল সরকার দরকার।
লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।