ঢাকা, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

বিষ্ণুপুর পিকেএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অবরুদ্ধ!

২০২৪ জুন ১২ ২০:৩৮:২৮
বিষ্ণুপুর পিকেএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অবরুদ্ধ!

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : অসম্পূর্ণ নিয়োগ বোর্ডের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে কম্পিউটার অপারেটর পদে মধুসুধন মণ্ডল ও আয়া পদে তাপসী মণ্ডলের নিয়োগপত্রে সাক্ষর করতে যেতে রাজী না হওয়ায় ফটকে তালা লাগিয়ে তিনজন শিক্ষক ও লাইব্রেরিয়ানের নির্দেশে বিষ্ণুপুর প্রাণকৃষ্ণ স্মারক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজয় কুমার ম্ডলকে ঘণ্টাব্যাপি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। এঘটনায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

বিষ্ণুপুর প্রাণকৃষ্ণ স্মারক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজয় কুমার মণ্ডল জানান, চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি তার প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর ও আয়া পদে নিয়োগ বোর্ডে বসে। বোর্ডে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বাকী বিল্লাহ হাজির ছিলেন না। এমতাবস্থায় কম্পিউটার অপারেটর পদে মধুসুধন মণ্ডল ও আয়া পদে তাপসী মণ্ডলের পক্ষে সভাপতি ও তিনিসহ চারজন সাক্ষর করেন। এর ১৫ দিন পর সভাপতি দেবদাস মণ্ডল ও দাতা সদস্য গোবিন্দ লাল মণ্ডল বিশেষ ব্যবস্থায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ওই ফলাফল শীটে সাক্ষর করিয়ে নিয়োগ বৈধ করার পরিকল্পনা নেন। এত তিনিসহ ১১ সদস্য বিশিষ্ট বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাতজন সদস্য নাখোশ হন। একপর্যায়ে তারা একসাথে সাক্ষর করে নিয়োগ বোর্ড বাতিল করে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার জন্য যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি লেখেন।

পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের রেজুলেন খাতাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সভাপতি দেবদাস মণ্ডল ও দাতা সদস্য গোবিন্দ লাল সরদারের নির্দেশে লাইব্রেরিয়ান রাধেশ্যাম সরদার নিজের হেফাজতে রাখেন। এ নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়। পরবর্তীতে নিয়োগ বাতিলের দাবিতে বিদ্যোৎসাহী সদস্য সমীর কুমার মণ্ডল ও নিয়োগের দাবিতে মধুসুধন মণ্ডল ও তাপসী সরদার কালিগঞ্জ সহকারি জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। গত ১৫ মে রাতে তার উপর সভাপতি, দাতা সদস্য তার উপর হামলা করলে তিনি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত বছরের ২৩ নভেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকে ছয় মাস পার হয়ে যাওয়ায় এখন আর নিয়োগ বোর্ডের কোন কার্যকারিতা নেই বলে মধ্যিমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিপেত্র অনুযায়ি নিশ্চিত করা হয়েছে।

অবৈধ নিয়োগপত্রে সাক্ষর না করায় সভাপতি দেবদাস মণ্ডল শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের মে মাসের বেতন বিলে সাক্ষর করেননি। নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নোটিশে মঙ্গলবার বড়সিমলা কারবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গেলে তাকে সভাপতি দেবদাস মণ্ডল ও বরেয়া মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত বৈদ্য দুটি নিয়োগপত্রে জোরপূর্বক সাক্ষর করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি চলে আসেন। নিয়োগপত্রে সাক্ষর না করলে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের বেতন বিলে সভাপতি সাক্ষর কররেন না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।

অজয় কুমার মণ্ডল আরো জানান, বুধবার সকাল আটটার দিকে তিনি বিদ্যালয়ে আসেন। সাড়ে ৯টার দিকে সহকারি প্রধান শিক্ষক নির্মল ঘোষ, সহকারি শিক্ষক সন্ন্যাসী সরকার, রাধেশ্যাম বিশ্বাস ও লাইব্রেরিয়ান রাধেশ্যাম সরদার বেতন বিলে সভাপতি সাক্ষর না করার কারণে তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন। একপর্যায়ে তাকে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে যেতে চাপ সৃষ্টি করা হয়। তিনি নিয়োগপত্রে সাক্ষর করতে যাবেন না বলায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই তিনজন শিক্ষক ও লাইব্রেরিয়ান তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। একপর্যায়ে বিদ্যোৎসাহী সদস্য সমীর কুমার মণ্ডল ছুটে এলে হট্টগোল শুরু হয়।

খবর পেয়ে তার শ্বাশুড়ী ছুটে এসে তাকে বারান্দায় ডেকে আনলে সহকারি প্রধান শিক্ষক নির্মল ঘোষ, সহকারি শিক্ষক সন্ন্যাসী সরকার, রাধেশ্যাম বিশ্বাস ও লাইব্রেরিয়ান রাধেশ্যাম সরদারের নির্দেশে দারোয়ান বিশ্বজিৎ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা মেরে দিয়ে তাকে ঘণ্টাব্যাপি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের সামনে তাকে গালিগালাজ করা হয়। একপর্যায়ে সাড়ে ১১টার দিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভাঙা প্রাচীরের পাশ দিয়ে তিনি চলে আসেন।

বিষ্ণুপুর প্রাণকৃষ্ণ স্মারক বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিদ্যোৎসাহী সদস্য সমীর কুমার মণ্ডলসহ কয়েকজন সহকারি শিক্ষক এ প্রতিবেদককে জানান, নিয়োগ বাণিজ্যের হোতা দাতা সদস্য গোবিন্দ লাল সরদারের পরামর্শে সভাপতি বেতন বিলে সাক্ষর না করায় প্রধান শিক্ষককে দিয়ে অবৈধ নিয়োগপত্রে সাক্ষর করানোর চেষ্টা চলছিল কয়েকদিন ধরে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধান শিক্ষককে যেভাবে অপমান অপদস্ত করে প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হলো তা বিদ্যালয়ের স্মরণকালে ঘটেছিল কিনা তা এলাকাবাসী জানে না। এর প্রতিকার হওয়া উচিত।

বিদ্যারয়ের দারোয়ান বিশ্বজিৎ বিশ্বাস জানান, তিনি ছোট কর্মচারি। তাই সহকারি প্রধান শিক্ষক নির্মল ঘোষ, সহকারি শিক্ষক সন্ন্যাসী সরকার, রাধেশ্যাম বিশ্বাস ও লাইব্রেরিয়ান রাধেশ্যাম সরদারের নির্দেশে প্রধান শিক্ষককে বাইরে যেতে না দিতে প্রধান ফটকে তালা মেরেছিলেন তিনি।

এ ব্যাপারে সহকারি শিক্ষক রাধেশ্যাম বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বেতন ছাড়া তারা মাস চালাবেন কি করে। প্রধান শিক্ষকরে কারণে সভাপতি তাদের বেতন বিলে সাক্ষর না করলেও বুধবার বোনাসের বিলে সাক্ষর করেছেন। বেতন না পাওয়ায় তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রধান শিক্ষককে যেতে বলেছিলেন। তিনি যেতে রাজী না হওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা তাকে আটকাতে দারোয়ানকে ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়।

বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হক জানান, বিষ্ণুপুর পিকিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ঐতিহ্য রয়েছে। নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি না হওয়ায় এখানে নতুন করে ক্রাইসিস সৃষ্টি হয়েছে। নিয়োগপত্রে প্রধান শিক্ষক সাক্ষর না করলে সভাপতি দেবদাস মণ্ডল শিক্ষক -কর্মচারীদের বেতনশীটে সাক্ষর করবেন না এটা হতে পারে না। তাছাড়া প্রধান শিক্ষককে যারা অপমান অপদস্ত করে চলেছেন তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। যেহেতু নিয়োগদাবিদাররা আদালতে মামলা করেছেন তাই এর সমাধান আদালতেই হওয়া উচিত।

(আরকে/এএস/জুন ১২, ২০২৪)