ঢাকা, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

ট্রাম্প কী পুনরায় হোয়াইট হাউসে ফিরছেন

২০২৪ জুলাই ২৬ ১৩:৫৪:৩১
ট্রাম্প কী পুনরায় হোয়াইট হাউসে ফিরছেন

গোপাল নাথ বাবুল


চলতি বছরের ৫ নভেম্বর আমেরিকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। মৃত্যুমুখ থেকে ফিরেই সরকারিভাবে উক্ত নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে তিনি বেছে নিলেন নয়া রানিং মেট অর্থাৎ তাঁর সহকারি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ৩৭ বছর বয়সি জেডি ভ্যান্সকে। যদিও ট্রাম্পের একজন কট্টর সমালোচক হিসেবে রিপাবলিকানদের মধ্যে তিনি ট্রাম্পের রানিং মেট হিসেবে পছন্দের ছিলেন না। তবে ধীরে ধীরে জেডি ভ্যান্স ট্রাম্পের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন।

ট্রাম্পের সহকারি হিসেবে ভ্যান্সের নাম ঘোষণার পরে ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেন, ‘জেডি আমাদের সংবিধানের জন্য লড়বে, আমেরিকাকে সেরার সেরা করে তোলার জন্য কাজ করবে’। পাল্টা হিসেবে জো বাইডেনের দল ডেমোক্র্যাট পার্টি বিবৃতি দিয়ে বলেন, ট্রাম্প-ভ্যান্স জুটি আমেরিকানদের অধিকার কেড়ে নেবে, মধ্যবিত্তদের সমস্যা বাড়াবে, ধনীদের হয়ে কাজ করবে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার ডেমোক্র্যাটদের যাবতীয় বিরোধীতা উড়িয়ে দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পই আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হবে।

গত ১৩ জুলাই রাতে পেনসিলভানিয়ার বাটলারে নির্বাচনী প্রচারের মঞ্চে বক্তব্য রাখার সময় ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় টমাস ম্যাথিউ ক্রুকস্ নামের মাত্র ২০ বছরের এক যুবক। গুলি তাঁর ডান কান ছুঁয়ে যায়। ভাগ্যক্রমে ট্রাম্প বেঁচে গেলেও ওই সভায় এক রিপাবলিকান সমর্থক প্রাণ হারান এবং আহত হন আরো কয়েকজন। মাত্র হাফ ইঞ্চি এদিক-সেদিক হলেই ট্রাম্পকে হয়তো আর বাঁচানো যেত না। এরপরও তিনি ভীত না হয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত ওপরে দিকে তুলে চিৎকার করে ‘ফাইট ফাইট ফাইট’ বলে তাঁর সমর্থকদের সাহসিকতাকে কুর্ণিশ জানান। কারণ, হামলার সময় একজন সমর্থকও নিজেদের আসন ছেড়ে পালিয়ে যাননি। গত ১৫ জুলাই মিলাউকিতে অনুষ্ঠিত রিপাবলিকানদের সম্মেলনে কার্যত নায়কের মতো করে বরণ করে স্বাগত জানানোর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে তাঁকে রিপাবলিকানদের অধিকাংশই সিলমোহর দেন। যদিও আগেই নির্বাচনে জিতে রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

হত্যাচেষ্টার শিকার হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে আমেরিকানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে লিখেন, ‘এ মুহূর্তে সবকিছুর চেয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং আমেরিকানদের শক্তিশালী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকার সত্যিকারের বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোটাই বেশি জরুরি। অশুভকে জয়ী হতে দেবেন না। আমি সত্যিই আমার দেশকে ভালোবাসি, আপনাদের সবাইকে ভালোবাসি। আমি উইসকনসিনে এ সপ্তাহে আমাদের মহান এ জাতির সামনে বক্তব্য রাখার অপেক্ষায় আছি’। যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি ভাগ্য ও ঈশ্বরের জোরে রক্ষা পেয়েছি। সবচেয়ে অবিশ্বাস্য বিষয় হলো, তখন আমি শুধু আমার মাথা ঘুরাইনি, সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণে ঘুরিয়েছি। আমার মারা যাওয়ার কথা ছিল। আমার এখানে থাকার কথা ছিল না’।

ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে আবেগঘন একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘পেনসিলভানিয়ার বাটলারে আজকের নির্বোধ সহিংসতার ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আমার বাবার জন্য এবং অন্যান্য আহতদের জন্য ভালোবাসা ও প্রার্থনার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই’। তিনি আরো লিখেন, ‘আমি সিক্রেট সার্ভিস এবং অন্যান্য সব আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের কাছে তাদের দ্রুত এবং সিদ্ধান্তমুলক পদক্ষেপের জন্য কৃতজ্ঞ। আমি আমাদের দেশের জন্য প্রার্থনা করছি’। পোস্টের শেষদিকে যোগ করেন, ‘তোমাকে অনেক ভালোবাসি বাবা, আজ এবং সব সময়’। হামলার বিবৃতি দিয়ে জুনিয়র ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি মাত্রই আমার বাবার সঙ্গে কথা বলেছি এবং তিনি ভালো আছেন। আমেরিকাকে রক্ষার লড়াই তিনি কখনো-ই বন্ধ করবেন না, উগ্রবাদীরা কী ছুড়ল, তাতে কিছু যায় আসে না’।

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বজুড়ে। নির্বাচনী জনসভায় কী করে বন্দুকবাজ ঢুকে পড়ল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে বিস্ফোরক দাবি করে সংবাদ সংস্থাকে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ট্রাম্প মঞ্চে থাকাবস্থায় শুটারকে ঘুরতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু খবর পেয়েও তখন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ! ওই প্রত্যক্ষদর্শী আরো বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম মাত্র ৫০ ফুট দুরে আমাদের পাশের বিল্ডিংটার ছাদে লোকটাকে ঘুরে বেড়াতে। আমি বুঝতে পাচ্ছিলাম না কী হচ্ছে। কেন এখনো ট্রাম্প মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। কেন তাঁকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে না’।

ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে আমেরিকার তদন্তকারী সংস্থা এফবিআই বলেছে, একেবারে প্রাণে মেরে ফেলার জন্যই হামলা চালানো হয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর। তবে একটি সূত্র জানায়, ইরান তাদের সেনাকর্তা সুলেমানির হত্যাকান্ডের বদলা নিতেই এ হামলা চালিয়েছে। আগামী ৫ নভেম্বর নির্বাচনের আগেই হত্যা করা হতে পারে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। এ নিয়ে সিক্রেট সার্ভিস যথেষ্ট প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি করে সূত্রটি। সাক্ষাৎ মৃত্যুমুখ থেকে ফেরা এ বর্ষিয়ান নেতার ওপর হামলার বিষয়ে মার্কিন প্রশাসন কিছু না বললেও সূত্রের খবর- শীর্ষ দুই মার্কিন আধিকারিকের দাবি, প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসনের কাছে আগে থেকেই খবর ছিল যে, ট্রাম্পকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে ইরান। এমনকী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নানা হিংসামূলক ঘটনাতেও ইরানের হাত ছিল বলেও নাকি সতর্ক করা হয়েছিল মার্কিন গোয়েন্দাদের। আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির এক কর্মকর্তারও দাবি, পেনসিলভেনিয়ার বাটলারের সভার আগে সিক্রেট সার্ভিসকে ইরানের হুমকির বিষয়ে অবগত করা হয়েছিল। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই ট্রাম্পের নিরাপত্তাও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু জাতিসংঘে ইরানের ইসলামিক রিপাবলিকের এক মুখপাত্র তাদের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের চোখে ট্রাম্প একজন অপরাধী। তাঁর নির্দেশে সুলেমানিকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই অপরাধের জন্য তিনি শাস্তি পাবেন ঠিকই। কিন্তু সেটা আইনের পথে। বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে ট্রাম্পকে শাস্তি দিতেই ইরান বদ্ধপরিকর’। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ভালো নয়, তা সবার জানা। শীর্ষ সেনাকর্তা কাশেম সুলেমানির হত্যা মামলায় ইরান ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। কুটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান জানে ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরলে ফের ইরানে হামলা চালাবেন। ফলে আমেরিকার আসন্ন নির্বাচনের ওপর কড়া নজর রাখছে এ ইসলামিক দেশটি।

সবকিছুর পরেও রিপাবলিকানরা বাইডেনকেই দুষছেন। জনৈক ট্রাম্প সমর্থক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করেছেন, বাইডেনের উস্কানিমূলক বক্তৃতাই এমন ঘটনার জন্য দায়ী। বিশিষ্টজনরা সমাবেশের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও রিপাবলিকানদের নিশানা সরাসরি বাইডেনের দিকেই। ট্রাম্পের রানিং মেট সিনেটর জেডি ভ্যান্স তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারের বেশিরভাগ জুড়ে্‌ই ছিল ট্রাম্পের নিন্দা। তিনি বারবার দাবি করেছেন, ট্রাম্প একজন স্বৈরাচারী তথা ফ্যাসিস্ট, তাই তাঁকে যেনতেন প্রকারেই ক্ষমতায় আসা থেকে আটকাতে হবে। বাইডেনের এমন উস্কানিমূলক কথায় আজ এ ধরনের ঘটনার দিকে নিয়ে গেছে’। আরেক রিপাবলিকান নেত্রী মাজোর্রি টেলর গ্রীনের দাবি, ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকদের নিকেশ করতে চান। বেনি টমসনের নেতৃত্বে হাউস ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পকে আমেরিকান সিক্রেট সার্ভিস সুরক্ষার সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার জন্য একটি বিল পর্যন্ত উত্থাপন করেছিল। গ্রীন এক সাক্ষাৎকারে জানান, ‘আমরা ভুলব না, আজকের কথা রিপাবলিকানরা মনে রাখবে’। এছাড়াও তিনি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘আজ প্রতি বিন্দু রক্তপাতের জন্য একমাত্র মিডিয়া এবং ডেমোক্র্যাটরাই দায়ী’। আমেরিকার কংগ্রেস সদস্য মাইক কলিন্স হামলার জন্য সরাসরি বাইডেনকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘খুনের চেষ্টায় প্ররোচনা দেওয়ার জন্য রিপাবলিকান ডিস্ট্রিক্ট এটর্নির উচিত, এখনই বাইডেনের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া’।

৭৮ বছর বয়সি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর প্রাণঘাতী হামলায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ভারতের নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু, তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে, এক্সের কর্ণধার এলন মাস্ক, মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা-সহ আরো অনেকে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই ধরনের সহিংসতার কোনো জায়গা এই আমেরিকায় হবে না। সমগ্র জাতির এক হয়ে এই ঘটনার নিন্দা জানানো উচিত’।

বিশিষ্টজনরা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা তাঁর হোয়াইট হাউসে ফেরার সম্ভাবনা আরো উজ্জ্বল করেছে। এমনিতেই ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনায় আগেই ডলারের মূল্য বেড়েছিল। সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইস্টস্প্রিং ইনভেস্টমেন্টসের পোর্টফোলিও ম্যানেজার রং রেন গোহ জানান, আগামী সপ্তাহগুলোতে বাজার আরো চাঙা হতে পারে। তাই মনে করা হচ্ছে, আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্প অনেকটা এগিয়ে যেতে পারেন। ভেণ্টেজ পয়েণ্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা নিক ফেরেস জানান, ‘স্মৃতি থেকে বলছি, তাঁকে হত্যার চেষ্টার পর সমীক্ষায় তিনি আরো ২২ পয়েণ্ট এগিয়ে যান। এই নির্বাচনে মনে হয় তাঁর ভূমিধস জয় হবে। সম্ভবত অনিশ্চয়তা আগের চেয়ে কমে যাবে’। হেজফান্ড ব্যবস্থাপক বিল অ্যাকম্যান এবং টেসলার প্রধান ইলন মাস্কের মতো কোম্পানির নির্বাহীরা ট্রাম্পের প্রতি তাঁদের সমর্থন ঘোষণা করেছেন। তাঁকে বর্ণনা করেছেন, ‘শক্ত’ মানুষ হিসেবে। এর বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বাইডেনের প্রতি আহ্বান দিনদিন জোরদার হচ্ছে। দু’সপ্তাহ আগে ট্রাম্পের বিপক্ষে এক নির্বাচনী বিতর্কে দুর্বল পারফরম্যান্সের পর অর্থদাতা, সমর্থক ও ডেমোক্র্যাটদের অনেকেই বিশ্বাস হারাচ্ছেন যে, বাইডেন আদৌ ট্রাম্পকে হারাতে পারবেন কিনা অথবা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবেন কিনা।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, এবারের নির্বাচনে মূল্য ইস্যু অভিবাসন ও অর্থনীতি। সে কারণে ভোটারদের অনেকেই মনে করেন, অর্থনীতি বিবেচনায় ট্রাম্প তুলনামূলক ভালো প্রার্থী। যদিও অর্থনীতি শক্তিশালী আছে, মূল্যস্ফীতি কমছে এবং বেকারের সংখ্যাও কম। বাইডেন এসব দেখিয়ে নির্বাচনে জেতার চেষ্টা করলেও বিশ্লেষকরা প্রত্যাশা করছেন, ট্রাম্পের অধীনে আরো কঠোর বাণিজ্য নীতি হবে, কর নিয়ন্ত্রণ থাকবে এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত নীতিমালা শিথিল থাকবে। বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষকদের মতে, ‘গত ২০ বছরের ৫টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সিইও-দের আস্থা, ভোক্তার মনোভাব এবং বিশেষ করে ছোট ব্যবসার আশাবাদ ডেমোক্র্যাট জয়ের চেয়ে রিপাবলিকান জয়ের দিকে বেশি ঝুঁকেছে। বড় ধরনের নীতি পরিবর্তন ছাড়াই কিছু কোম্পানির আয়ের সম্ভাবনা আরো বাড়তে পারে, যদি ট্রাম্প নির্বাচনে জেতেন’।

নিউইয়র্ক টাইমস্/সিয়েনার জরিপেও দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প নির্বাচনী দৌঁড়ে অন্তত ৫ পয়েণ্ট এগিয়ে আছেন। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে মাত্র ২৩ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা বাইডেনের ব্যাপারে উৎসাহী। রিপাবলিকানদের মধ্যে ট্রাম্পের ব্যাপারে উৎসাহী ৫০ শতাংশ। ‘রান ফর সামথিং’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা আমান্ত লিটম্যান বলেন, ডেমোক্র্যাটরা একটা সর্বনাশা চক্রে আটকা পড়েছে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি গেল বছরের পুরোটাই গণতন্ত্র রক্ষায় কাজ করেছি। আর সবচেয়ে বেশি যে কথাটা শুনেছি, তা হলো, আমি ক্লান্ত। আমার আর আগ্রহ নেই’। আমান্তর প্রতিষ্ঠানটি মিলেনিয়াল ও জেন-জি ডেমোক্র্যাটদের দলে অন্তর্ভূক্ত করে ও যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সমর্থন দিয়ে থাকে। লরি গোল্ডম্যান ট্রাম্পকে হারাতে আট বছর ধরে কাজ করছেন।

‘ফেমস্ অ্যান্ড ডেমস্’-এর প্রতিষ্ঠাতা গোল্ডম্যান মিশিগানে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে সদস্য সংগ্রহ, প্রার্থীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া, তহবিল সংগ্রহের কাজ করছেন। ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পর পরবর্তী নির্বাচনগুলোয় ডেমোক্র্যাটিক দল যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিযে অংশ নিয়েছে, এবার সেই পরিবেশ নেই। এটা বেশ পরিষ্কার। দলের কর্মীরা ক্লান্ত। স্বেচ্ছাসেবীরা পা ঘষছেন। পাঠক-শ্রোতা-দর্শকরা আর রাজনৈতিক খবরে আগ্রহ পান না। জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলে রাজনৈতিক খবরের চাহিদা পড়ে গেছে। মাঠ পর্যায়ে তহবিল সংগ্রহের কাজেও ভাটা পড়েছে। ফলে ডেমোক্র্যাটিভ সংগঠনগুলো বাজেট কাটছাঁট এবং কর্মী ছাঁটাই করেছে।

এক সময়ের ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র সমালোচক নিকি হ্যালি ও রন ডিস্যাণ্টিসও রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান। তাঁরা দেশবাসীর প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন ও ভোট দেওয়ার আহ্ববান জানান। নিকি হ্যালি বলেন, ‘আমাদের দেশের জন্যই ট্রাম্পকে ভোট দিতে হবে’।
এরমধ্যে খবর হয়েছে, জো বাইডেন সরে দাঁড়িয়েছেন এবং ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তারপরও বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় হোয়াইট হাউসে অতিথি হতে পারেন।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট।