ঢাকা, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » পাশে দাঁড়াই » বিস্তারিত

অর্থের অভাবে গুলিবিদ্ধ সিফায়েতের চিকিৎসা সেবা বন্ধ, সাহায্যের আকুতি

২০২৪ সেপ্টেম্বর ১২ ১৩:৩৪:৪৪
অর্থের অভাবে গুলিবিদ্ধ সিফায়েতের চিকিৎসা সেবা বন্ধ, সাহায্যের আকুতি

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হন নড়াইলের কালিয়া উপজেলার শিক্ষার্থী মো. সিফায়েত চৌধুরী (২৬)। গত ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ সিফায়েতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান অন্য আন্দোলনকারীরা।

সেখানে চিকিৎসার পর তাকে নেওয়া হয় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। এরপর কিছুটা সুস্থ হলে ৩০ আগস্ট ছাড়পত্র নিয়ে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের চাপাইলে গ্রামের বাড়িতে আসেন।

পরিবার বলছে, এখনো পুরোপুরি সুস্থ নয় সিফায়েত। ভালো করে কথা বলতে পারছেন না। অর্থের অভাবে তার উন্নত চিকিৎসা দূরে থাক, পরিপূর্ণ যত্ন ও ওষুধ কিনতে পারছেন না তাঁরা।

গত বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সিফায়েতের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, আসাদ চৌধুরী ও মরজিনা বেগমের চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোট সিফায়েত। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে অনেক আগে। বড় দুই ভাই মসজিদে ইমামতি করে কোনোমতে সংসার চালান। ভাইদের সহযোগিতা ও টিউশনি করেই এত দিন পড়ালেখা চলেছে সিফায়েতের। ডিগ্রি শেষ করে গত ১৫ জুলাই ঢাকায় উঠেছিলেন বড় বোনের বাসায়। উদ্দেশ্য ছিল মাস্টার্সে ভর্তি হওয়া ও চাকরির চেষ্টা করা।

কথা হয় সিফায়েতের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট নবীনগরে আন্দোলনে গিয়েছিলাম, আরও অনেক লোক ছিল। আন্দোলনে পুলিশ ছররা গুলি মারছে। পরের কিছু মনে নাই।’

সিফায়েতের মেজ ভাই বলেন, জুলাইয়ের ১৫ তারিখে ঢাকা যায় সিফায়েত। ৫ আগস্ট হঠাৎ একটি নম্বর থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয়, আন্দোলন গিয়ে সিফায়েত মারা গেছে। তিনি ঢাকায় গিয়ে দেখেন, সিফায়েতের চার থেকে পাঁচটি গুলি লেগেছিল, অপারেশন করে তা বের করা হয়েছে। প্রথম দিকে দামি ওষুধপত্র অধিকাংশই নিজেদের কিনতে হয়েছে। পরে সরকারিভাবে চিকিৎসা হয়। কিন্তু ঢাকায় থাকা-খাওয়া ও টুকটাক ওষুধপত্র কেনার খরচ বহন করতেই তাঁদের হিমশিম খেতে হয়েছে। এখন আর সিফায়েতের চিকিৎসা ব্যয় টানার মতো সক্ষমতা তাঁদের নেই।

বড় ভাই রুবেল চৌধুরী বলেন, ‘সিফায়েতের ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। টাকার অভাবে ওষুধ কিনতে পারছি না। সুস্থ হতে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু আমরা আর্থিক সমস্যার কারণে চিকিৎসা করাতে পারছি না। সরকারের কাছে আমরা উন্নত চিকিৎসার দাবি জানাই।’

প্রতিবেশী চাচা ইউনুস চৌধুরী বলেন, ‘এরা আর্থিকভাবে খুবই অসচ্ছল। দুই ভাই ইমামতি করে ৪ হাজার টাকা করে বেতন পায়, তাই দিয়ে সংসার চলে। সিফায়েতের গুলি লাগার খবর পাওয়ার পর ঢাকা যাওয়ার টাকাও আমরা সবাই মিলে দিছি।’

পহরডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মল্লিক মাহমুদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার এলাকার ছেলে সিফায়েত আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। ঢাকায় চিকিৎসা হলেও সে পুরো সুস্থ হয়নি। তার আরও চিকিৎসার প্রয়োজন। তাদের আর্থিক অবস্থাও ভালো নয়। উন্নত চিকিৎসা হলে সে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।’

(আরএম/এএস/সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪)