ঢাকা, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে আমার অবস্থান

২০২৪ সেপ্টেম্বর ২৯ ১৭:২৯:১৭
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে আমার অবস্থান

আবদুল হামিদ মাহবুব


শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। এটা শুনে শুনেই বড় হয়েছি। বড় হতে হতে এখন বুড়ো। এইসময়ে এসে মিলিয়ে দেখতে গিয়ে দেখলাম, সেই ছোটবেলা শোনা কথাটাই এখনো ঠিক আছে। কিন্তু এই ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এমন কেনো হলো? কিছু শিক্ষকের উপর শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকের কেনো এতো ক্ষোভ? এর কি কারণ আছে? নিশ্চয় আছে। তা হলে সে কারণটা কি? এক কথায় উত্তর ‘দলীয়করণ’।

অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকার গত ষোল বছরে শিক্ষকের চেয়ারে বসিয়ে ছিলো তাদের দলীয় লোক। যেসব শিক্ষক জাতির মেরুদণ্ড গড়ার কারিগর হিসাবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার কথা, তারা সেটা না করে, নিজেদের এবং দলের স্বার্থ নিয়ে সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকতেন। পট পরিবর্তনে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেবার সুযোগটা হাত ছাড়া করেননি। তাই এমনটা হয়েছে বলে আমি মনে করি। প্রশ্ন উঠতে পারে, আমি এমন কর্মকা- সমর্থন করি কি না? আমার সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘করি না।’ তবে ক্ষেত্রবিশেষে কিছু শিক্ষা হওয়া প্রয়োজন। কেনো প্রয়োজন? পরবর্তীরা সচেতন থাকার জন্য।

আমার অভিজ্ঞতার কথাই বলি। আমার একটি মাত্র পুত্র সন্তান। সে তার মেধায় দেশের সর্বচ্চো বিদ্যাপীঠ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে’ ভর্তির সুযোগ পেলো। সেটা ২০১৫ সালে। যথারীতি ভর্তিও হলো। গণরুমে কিছুদিন থাকার পর ভাগ্যক্রমে জহুরুল হক হলের বর্ধিত একটি হলে সিটও পেয়ে গেলো। সে তার রুমের সিটে উঠলো। শুরু হলো বিপত্তি। হলে থাকলে ছাত্র সংগঠণ করতে হবে। সেটা কোন ছাত্র সংগঠণ? ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ ছাত্র সংগঠণ। আমার মাথায় ‘বাজ’ পড়লো। আমি কখনো কোনো রাজনীতি করিনি। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলাম। আমার ছেলেকেও কোনো রাজনীতির সাথে যুক্ত হতে দিইনি। তাকে দিয়েছি বই, কেবল বই, আর বই। বই পড়ে পড়ে সে রাজনীতি সচেতন হিসাবে বেড়ে উঠেছে। মাঝেমধ্যে ছেলেটি আবৃত্তি, গল্পবলা, বিতর্ক, প্রবন্ধ-নিবন্ধ লেখা প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়েছে, পুরস্কারও পেয়েছে।

এভাবে বেড়ে উঠা আমার ছেলেটি এখন ভার্সিটি হলে থাকতে হলে রাজনীতি করতে হবে। বড়ভাইদের কথা মতো মিছিলে যেতে হবে। গলা ফাটিয়ে শ্লোগান দিতে হবে। এসব জেনে আমি ছেলেকে বললাম, না বাবা, তোমার হলের সিটে থাকার কাজ নেই। তোমার অন্যকোথাও থাকার ব্যবস্থা করি। মধ্যবিত্ত বাপের অবস্থা আমার ছেলে জানে। তাই সে আমাকে বুঝায়, মিছিলে গেলে শ্লোগান দিলে তেমন কিছু ক্ষতি হবে না, সে ঠিকঠাক ক্লাস করবে, পড়ায় ফাঁকি দেবে না। আমাকে আশ্বস্ত করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বাড়ি ফিরে আমার অশান্তি কমে না। ঘন ঘন আমি ঢাকা যাই, ছেলেকে দেখে আসি। মধ্যে আমার কি এক ব্যস্ততায় ক’মাস কেটে গেলো। একদিন অস্থির হয়ে ঢাকা গেলাম। ছেলের খোঁজখবর নিতে তার হলে যাই। তার কক্ষে ঢুকবো, দেখি দরজা ভিতর থেকে লাগানো। মোবাইলে কল করলাম। আমার ছেলে ধরলো। সে রুমেই। আমি বলি তোমার দরজার সামনে আমি। বেশ কিছু সময় পর দরজা খুললো। তখন তার রুমে আরো অনেকজন ছিলো। ছেলে আমাকে নিয়ে বাইরে চলে আসলো। বসলাম একটি রেষ্টুরেন্টে। সে যা জানালো, তা শুনে তো আমার আক্কেলগুড়ুম অবস্থা।

কি জানালো? নিশ্চয় পাঠকের জানতে ইচ্ছে করছে? এইতো, সেটাই বলছি। তার রুমে চারজন ছাত্র থাকে। সকলেই তার মতোই নিরিহ। কিন্তু তাদের প্রতিদিনই বড় ভাইদের এটা ওটা ফরমাইশ খাটতে হয়। এতেও অসুবিধা নেই। কিন্তু ক’দিন আগে আমার ছেলের খাটের নীচে এনে এক বস্তা অস্ত্র রেখেছিলো। বড় ভাইরা বলেছে, যখনই খবর পাঠাবে বস্তা যেনো তারা ঠিক জাগায় পৌঁছায়। আমার ছেলে এটা পারবে না বলে প্রতিবাদ করেছিলো। তাকে শাসিয়েছে। সে চুপ হয়ে গিয়েছিলো। তারপর বড় ভাইরা প্রায়ই এই রুমে এসে গাঁজা সেবন করে। কখনো ফেনসিডিলও খায়। এসব নিয়ে ক্রমাগত প্রতিবাদ করায় আজ তার বিচারে সবাই বসেছিলো। এইসময়ই আমি এসে গেছি। আমি এসেছি, মোবাইলে এটা জানানোয় বড়ভাইরা বিরক্ত হয়েছে। তাদের বিচার কাজ সমাপ্ত হয়নি। শাসিয়ে দিয়েছে, আমাকে যেনো কিছু না জানায়।

ছেলের বর্ণণা শুনে আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেলো। আমার যেনো মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরুলো না। ছেলের পিঠে কেবল হাত বুলাছিলাম। চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরলো। আমি হাউস টিউটরের সাথে দেখা করতে চাইলাম। পেলাম না। ছেলেকে নিয়ে প্রভোস্টের কাছে যেতে চাইলাম। উদ্দেশ্য এসবের প্রতিকার চাওয়া। প্রভোস্ট অফিসে গিয়ে জানলাম প্রভোস্ট আছেন, তবে তিনি অন্য একটি মিটিং করছেন। আমি ওয়েটিং রুমে বসে থাকলাম। ছেলে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। অনেকক্ষণ পর একজন এলেন, আমি কি জন্য দেখা করতে চাই জানতে চাইলেন। আমি বললাম প্রভোস্ট স্যারকেই সব বলবো। তখন তিনি আমার পরিচয় চাইলেন। আমি ছাত্রের অভিভাবক পরিচয়ই দিলাম। কারণ আমি আমার নিজের কাজ নিয়ে কোথাও গেলে সাংবাদিকতার পরিচয় ব্যবহার করি না। ওই লোকটি ভিতরে গিয়ে আবার এসে জানালেন, প্রভোস্ট স্যার ভীষণ ব্যস্ত, আজ দেখা করতে পারবেন না, আপনি অন্য একদিন আসুন। আমার ছেলেও সেসময় সামনে ছিলো। সে আমাকে বলে, ‘বললাম না চাইলেই উনাদের সাথে দেখা করা যায় না। তুমি সাংবাদিক এটা বললে না কেনো? তা হলে ঠিকই দেখা করতেন। চলো। এগুলো নিয়ে তুমি ঝামেলা করতে যেয়ো না। আমি বুঝেশুনে চলবো নে।’

হঠাৎ মনে পড়লো ভার্সিটির জনসংযোগ ডাইরেক্টার বন্ধু ড. সেলু বাসিতের কথা। বললাম চলো, তোমার সেলু চাচার কাছে যাই। সেও বললো চলো যাই। ছেলেকে নিয়ে তার কাছে গেলাম। পুরোটা বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, ভার্সিটির হলোগুলোতে এই অবস্থাই। সে যদি মানিয়ে থাকতে পারে তবে হলে রাখুন, আর মানাতে না পারলে বইরে কোথাও থাকার ব্যবস্থা করুন। হল টিউটর, প্রভোস্ট অফিসের অভিজ্ঞতার কথাও বললাম। ভিসিকে জানানোর চেষ্টা করবো নাকি? তিনি বলেন, কাউকে জানিয়ে কোনো লাভ নেই। সবাই এসবই জানেন। জানালে উল্টো ছেলের ক্ষতি হবে। আমার ভিতর কেঁপে উঠে। পাশে বসা ছেলেকে জড়িয়ে ধরি। আমার ছেলেও বলে, ‘বাবা তুমি এই নিয়ে আর কারো সাথে কিছু বলো না। তুমি চলে যাও, আমি ম্যানেজ করবো। আমার ভিতরে আরো শূন্যতা সৃস্টি হয়। ছেলে বলে তাকে দোজকে রেখে আমি চলে যেতে!

এইভাবে ছেলেকে রেখে চলে আসা কি আমার ঠিক হবে? এ আমি কেমন বাবা? নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করি। সেলু বাসিতের অফিস কক্ষ থেকে ছেলেকে নিয়ে বাইরে আসি। আমার মাথা কোনো কাজ করছে না। ছেলেকে বলি, চলো তোমার হলে যাই। হলের পথে রওয়ানা দিয়ে কিছুদূর আসার পর একটি বৈদ্যুতিক খুটিতে লাগানো রুম ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি আমার চোখে পড়ে। সেখানে দাঁড়াই। মোবাইল নাম্বার দেওয়া আছে। ছেলেকে বলি, বাবা ওই নাম্বারটায় ফোন দাও। ছেলে আমাকে জিজ্ঞেস করে তুমি কি আমাকে হল থেকে নিয়ে আসতে চাচ্ছো? আমি ধমক দিয়ে বলি, ‘ফোন দে।’ সে কল করলো। ধরলেন একজন। আমি বলি আপনার রুম ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি দেখে ফোন দিয়েছি। রুম কি এখনো আছে? ভাড়া নিতে পারবো? তিনি জানান, হ্যাঁ খালি আছে। গেলেই দেখতে পারবো। ঠিকানা জেনে একটি গলির ভিতরে গিয়ে খোঁজতে খোঁজতে গিয়ে পৌঁছালাম। তিনি রুম দেখালেন। ছয়তলা পুরাতন একটি ভবনের ছাদের উপর। অনুমান আট ফিট উচ্চতায় টিনের একচালা ছোট ছোট চারটি রুম। সাথে ছোট একটা বাথরুমও আছে। তিন রুমেই লোকজন থাকেন। একটি রুমই খালি আছে। আরো কয়েকজন দেখে গেছে। আমি নিতে চাইলে আজই অগ্রীম দিয়ে দিতে হবে।

বাসার মালিক জানান, আমি নিতে চাইলে উনি রুমটা পরিস্কার করিয়ে দেবেন। তিনিই বলেন, একচালা ঘর হওয়ায় গরম একটু বেশি লাগবে। উপর দিকে ফ্যান লাগালে ভুলে কখনো হাত উপরে তুললে লেগে যাবার সম্ভাবনা আছে। তিনিই পরামর্শ দিলেন, একটি স্ট্যান্ড ফ্যান নিতে পারেন। আমি লোকটার সাথে কথা বলছি, আমার ছেলে কেবল শুনেই যাচ্ছে। কিছু বলছে না। ভাড়ার পরিমাণ যখন জিজ্ঞেস করি তিনি বললেন অন্যরা যেভাবে থাকছে, সেই ভাড়াই। বিদ্যুৎ পানি সব মিলিয়ে সাত হাজার। আমি রাজি হয়ে গেলাম। ছেলে আমার আপত্তি করে। আমি ধমক দিই। সে চুপ হয়ে যায়। অগ্রীম দিয়ে বলি আগামীকালই আমার ছেলে উঠবে। সেখান থেকে চলে আসি।

আমার সাথে আমার লুঙ্গি ও গেঞ্জির একটি পলিথিন ব্যাগ। তখন বিকেল হয়ে গেছে। ছেলেকে বলি কোনো রেষ্টুরেন্টে গিয়ে কিছু খাই। রেষ্টুরেন্টে খাবার শেষ করে পাশের একটি হোটেলে গিয়ে রুম নিলাম। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। ছেলেও আমার সাথে বিছানায় গড়াগড়ি করলো।

সন্ধ্যা হলে ছেলে তার হলে যেতে চাইলো। আমি যেতে দিলাম না। আমার সাথেই থাকলো। পরদিন সকালেই ভাড়া নেওয়া রুমের জন্য একটি ম্যাট্টেস, ষ্ট্যান্ড ফ্যানসহ অনুসাঙ্গিক কিছু কিনে নিয়ে সেই রুমে উঠে গেলাম। ছেলেকে নিয়ে হলে গেলাম, তার যা কিছু ছিলো সেসব গুছিয়ে তার রুমমেটদের সাথে কথা বলে সেই ভাড়া নেওয়া রুমে চলে আসলাম। সামনে ছিলো ছেলের প্রথম বর্ষের ইয়ার ফাইনাল। আমি সেই ভাড়া রুমে ছেলের সাথে থাকলাম। ওই সময় সে অসুস্থও হয়েছিলো। কয়েকদিন জ্বর এসেছে। ১০৩ ডিগ্রি পর্যন্ত জ্বর উঠেছেও। তার মামা ডাক্তার। ওর সাথে ফোনে কথা বলে বলে ছেলেকে ঔষধ খাইয়েছি। আল্লাহর রহমতে সুস্থ হয়েছে। অসুস্থতা নিয়েও সে ভার্সিটি যেতো। আমি পেছন পেছন যেতাম। ছেলে বিরক্ত হতো। আমি ধমক দিয়ে থামিয়ে দিতাম। মাসাধিককাল আমি তার সাথে থাকলাম। এই একমাস আমরা খাওয়া দাওয়া করেছি, কখনো হলের কেন্টিনে, কখনো বাইরের কোনো রেষ্টুরেন্টে। পরীক্ষা শেষ হবার পর জোর করেই ছেলেকে নিয়ে বাসায় ফিরলাম। মনে হলো যেনো বেহেশতে ফিরেছি।

বাসায় কিছুদিন যাবার পরই আমার ছেলেটি আবার তার ভার্সিটিতে ফিরতে চায়। আমি ছেলেকে বলি, ‘বাবা, আমি তোমাকে আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে চাই না। সামনের ভর্তি পরীক্ষায় দেখো সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাও কি না।’ আমার কথা শুনে সে ভীষণ রাগ করে। আমি আমার ছেলে কে চিনি জানি। সে যতই রাগ করুক আমার অবাধ্য হবে না। অনেক বুঝানোর পর সে আমার কথা মেনে নেয়। সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞার পড়ার সুযোগ পায়। ছেলে বলে, এখানে ভর্তি হবার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেওয়া মূল কাগজগুলোতো উঠাতে ঢাকা যেতে হবে। আমি বলি, ‘দেখি বাবা, না গিয়ে হয় নাকি।’ আমি ড. সেলু বাসিতকে ফোন করে সব বললাম। তার সহযোগিতা চাইলাম। তিনি আমার কথা শুনে প্রথমেই বললেন, ‘আপনি ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ঢাবিতে পড়ার সুযোগ পাওয়া অনেক বড় বিষয়। আর আপনি তার ভর্তি বাতিল করে ফেলতে চাচ্ছেন!’ আমি বুঝাই, ‘সিলেট আমার থেকে দূরত্ব দেড় দুই ঘণ্টার। আর ঢাকা সাত আট ঘণ্টার। তারপর যে জ্যাম, আমার ছেলের কোনো বিপদ হলে তার পাশে দাঁড়ানোর আগেই আমি হার্টফেল করে মরবো। তিনি আমার মনের অবস্থা বুঝেন। বলেন, আমি সব কাগজ তৈরি করে পাঠাচ্ছি। সে (আমার ছেলে) যেনো স্বাক্ষর করে দেয়। আপনারও স্বাক্ষর লাগতে পারে।

যথারীতি এসব হয়ে গেলো। আমার ছেলে সাস্টে ভর্তি হলো। তবে তার পড়ার জীবনে একবছর লম্বা হয়ে গেলো। বাবার মুখের দিকে চেয়ে আমার ছেলেটি সেটা মেনে নিলো। ক’দিন পর ছেলে আমাকে বলে, ‘তুমি আমার স্কলারশীপটা নষ্ট করে দিলে?’ ও বিষয়টা আমার মনেই ছিলো না। ছেলেকে বলি, ‘আচ্ছা, তোমার সেলু চাচার সাথে কথা বলে দেখি, তিনি কিছু করতে পারেন কি না। ড. সেলু বাসিতকে ফোন করে স্কলারশীপটার কথা জানাই। তিনি আশ্বাস দেন এটা স্থানান্তর করা যাবে। ড. সেলু বাসিত সব কাজ করে কাগজপত্র পাঠিয়ে দিলেন। সাস্টেও আমার ছেলের স্কলারশীপ বহাল হয়ে গেলো। ড. সেলু বাসিতের আন্তরিক সহযোগিতা আমি ও আমার ছেলে জীবনেও ভুলবে না।

সাস্টে ভর্তি হবার পরও ছাত্ররাজনীতি নিয়ে সেই একই অবস্থায় পড়তে হলো। তাই তাকে বাইরে রেখেই পড়িয়েছি। আল্লাহর রহমতে মেধা তালিকায় স্থান নিয়ে অনার্স মাষ্টার্স করে আমার ছেলে এখন যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছে।

আমি সংক্ষিপ্ত করে আমার কিছু অভিজ্ঞতার কথা এখানে তুলে ধরেছি। আমি একজন অভিভাবক। ছেলেকে পড়তে পাঠিয়ে কেনো আমি এমন যন্ত্রণা পোহাবো? রাষ্ট্র কেনো এমন হবে? এমন হবার পেছনে কারণ কি? আমি এই প্রশ্নগুলোর একটাই জবাব পাই, সেটা হচ্ছে ‘দলীয়করণ’। দলীয়করণ আমাদের সব সর্বনাশের মূল। শিক্ষকরা দলবাজি না করলে তাদের ছাত্ররা এমন হতো না। শিক্ষাঙ্গণের পরিবেশ এমন খারাপের পথে যেতো না। দেশের শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গণকে খারাপ পথে নেওয়া শিক্ষকরা যখন ছাত্র-জনতা দ্বারা লাঞ্চিত হন আমার কোনো ভাবাবেগ হয় না। এই খারাপ পথে চলে যাওয়া শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গণ ঠিক করতে হলে এইদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। তাই আমি অবস্থান নিয়েছি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষে।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও ছড়াকার, সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব।