ঢাকা, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

এটাই আমার শেষ যাওয়া

২০২৪ অক্টোবর ০১ ১৯:৪৭:৪৭
এটাই আমার শেষ যাওয়া

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : বাবা মাকে দেওয়া কথা রাখতে পারলেন না সৌরভ কুমার সাহা। কথা রাখার আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হলো সৌরভকে। ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে স্বপ্নও পুড়ে ছাই হয়ে গেল এ অসহায় পরিবারের। চট্টগ্রামে জাহাজে বিধ্বংসী প্রাণ হারিয়েছেন ২৫ বছর বয়সী সৌরভ কুমার সাহা।

সৌরভ পেশায় জাহাজের ডেক ক্যাডেট। নৌ ক্যাডেট সৌরভের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কবিরপুরে। মাত্র দু’মাস আগে বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে চাকরীতে যোগ দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাবা-মাকে,সংসারে সুদিন ফিরিয়ে আনবেন তিনি। এমনকি পুজোর ছুটিতে বাড়ি আসবেন সেই কথাও দিয়েছিলেন। দু’চোখ ভরে বাবা-মাকে দেখবেন,জড়িয়ে ধরে দুঃখ ঘোচাবেন তিনি। তবে সেই আশা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বিধ্বংসী আগুনে।

চট্রগ্রাম বন্দরের ডলফিন জেটিতে নোঙ্গর করা ‘এমটি বাংলা জ্যেত্যি’তে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত হয়েছেন সৌরভ। সোমবার দুপুরের পর সৌরভের মৃত্যুর খবর পৌছায় বাড়িতে। তারপর থেকেই পরিবারে নেমেছে শোকের ছায়া। এক এক করে প্রতিবেশি ও আত্নীয়রা ভীড় করেন তার বাড়িতে। সৌরভের বাবা-মা বিলাপ করে চলেছিলেন। যারা সান্ত্বনা দিতে এসেছেন তাদের চোখেও ছিল জল। বাবা-মা আশা করেছিলেন,ছেলে হয়ত পরিবারে সুদিন ফিরিয়ে আনবেন। সব সামর্থ্য দিয়ে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছিলেন তারা। কিন্তু সেই স্বপ্ন মুহূর্তেই আগুনে পুড়ে গেছে।

সৌরভের বাবা মানিক সাহা ছোট্ট একটা মুদি দোকান চালান। দুই ছেলের বড় সৌরভ। পরিবারের সদস্যরা জানান, সৌরভ বরিশাল মেরিন একাডেমি থেকে পাস করে অগাস্টেই বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনে যোগ দিয়েছিলেন। তার চাকরির বয়স মাত্র দুই মাস।

সৌরভের মা সীমা সাহা জানান, ‘তার ছেলের সঙ্গে রোববার দুপুরে শেষ কথা হয়। সে বলেছিল কুতুবদিয়া থেকে তেল নিয়ে রওনা হয়েছে। সোমবার সকালে চট্টগ্রাম পৌঁছাবে। আমি বলেছিলাম একটু ভিডিও কল দিতে। কিন্তু জাহাজের ডেকে অনেক কষ্ট, সেটা দেখে আমরা কষ্ট পাবো ভেবে আমাদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতো না।’

সৌরভের দাদু শচীন সাহা কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘সে বলেছিল পূজার ছুটিতে বাড়িতে আসবে। কিন্তু তার আসা আর হলো না। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।’

সৌরভের প্রতিবেশী নিপুণ বিশ্বাস বলেন, ‘সৌরভদের পরিবার নিম্নবিত্ত। ছোটবেলা থেকেই সে অত্যন্ত মেধাবী ছিল। তার বাবা খুব কষ্ট করে তাকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার পড়িয়েছিলেন। পরিবারটির সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।’

সৌরভের দিদিমা মিনতী সাহা জানান, ‘তার নাতী সৌরভ বাড়ি থকে জাহাজে যাওয়ার আগে সমস্ত ঘরে রঙ দিয়ে যায়। আর যাওয়ার সময় বলেছিল, এটাই আমার শেষ যাওয়া।’

বিকালে সৌরভদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনদের ভিড়। তারা পরিবারটিকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কারো কান্নাই থামছে না।

সৌরভের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে আজ মঙ্গলবার শৈলকুপার কবিরপুরে তার বাড়িতে পৌঁছানোর কথা। তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার মরদেহ শৈলকুপায় পৌছায়নি।

(এসআই/এসপি/অক্টোবর ০১, ২০২৪)