ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়

২০২৪ অক্টোবর ১৮ ১৭:৩২:২২
ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়

গোপাল নাথ বাবুল


সম্প্রতি প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ, পরিবেশবান্ধব পর্যটন ব্যবস্থা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার বাহানা দিয়ে সেন্টমার্টিনে সাধারণ জনগণের যাতায়াত সীমিত করার ঘোষণা দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। অপরদিকে ৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবন জেলায় ভ্রমণ না করার অনুরোধ জানিয়েছে তিন পার্বত্য জেলা প্রশাসন।

স্বভাবত প্রশ্ন জাগে, আসল ঘটনা কি! একই সময়ে ২টি জায়গায় ভ্রমণ না করার এমন নিষেধাজ্ঞা স্বভাবতই আমাদের মতো ঘর পোড়া গরুর মনে মারাত্মক ভয় জাগে। কারণ, ইদানিং ২টি জায়গা নিয়েই বিজ্ঞজনদের মধ্যে নানা প্রশ্ন, নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তাছাড়া, ভৌগলিক অবস্থানের দিক দিয়েও বাংলাদেশ খুবই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। ফলে বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশের নজর রয়েছে এই দেশটির ওপর। এমনও শোনা যায়, বিশ্বের একটি প্রভাবশালী দেশ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই সেন্টমার্টিন দ্বীপটিতে তাদের একটি এয়ারবেজ তৈরি করার বায়না ধরে আছে এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসচ্ছে। একসূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু যদি ১৯৭১ সালে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ডের প্রস্তাব অনুযায়ী সেন্ট মার্টিন দ্বীপ আমেরিকার কাছে লিজ দিতেন, তাহলে বিনা যুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যেত। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপ মুক্ত থাকলেও ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে শাহাদাৎ বরণ করার পর স্বাধীন বাংলাদেশে পুনরায় বিদেশি হস্তক্ষেপ শুরু হয়। বিশেষ করে দেশের রাজনীতিতে যখন থেকে সেনাবাহিনী অংশগ্রহণ শুরু করে তখন থেকে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এবং ছলে-বলে-কৌশলে যেকোনো প্রকারেই সেন্টমার্টিন দ্বীপটি হস্তগত করার জন্য মার্কিনীরা বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে।

সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। ঐতিহাসিকদের মতে, প্রায় ৪০ হাজার বছর পূর্বে হিমবাহ যুগে এই প্রবাল দ্বীপটির উত্থান শুরু হয়। প্রায় ৫ হাজার বছর পূর্বে এটি টেকনাফেরই বর্ধিত অংশ ছিল। পরবর্তীতের এটি সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যায়। কিন্তু ৪৫০ বছর পূর্বে বিস্ময়করভাবে বর্তমান সেন্টমার্টিন দ্বীপটি পুনরায় জেগে ওঠে এবং পরবর্তী ২০০ বছরে এই দ্বীপটি সমুদ্রের ওপর দৃশ্যমান হয়। ঐতিহাসিকদের মতে, প্রায় ২৫০ বছর পূর্বে সর্বপ্রথম এই দ্বীপটি আরব বণিকদের চোখে পড়ে। তারা এর নাম দেয় জাজিরা। এটিকে তারা সমুদ্রযাত্রায় বিশ্রামের জন্য ব্যবহার করত। ১৮৯০ সালের দিকে কিছু বাঙালি এবং কিছু রাখাইন সম্প্রদায়ের মৎস্যজীবী মানুষ এই দ্বীপে বসতি স্থাপন করা শুরু করে। ওই সময দ্বীপটিতে প্রচুর নারিকেল গাছ ছিল বলে তারা এটির নাম দেয় নারকেল জিঞ্জিরা।

এরপর ১৯০০ সালের দিকে বৃটিশ শাসন আমলে ভূ-জরিপের সময় এই দ্বীপকে মায়ানমারের অংশ না করে পূর্ববাংলা তথা বৃটিশ ভারতের অন্তর্ভূক্ত করে এবং ভূ-জরিপ দল ও চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মিলে একজন খৃষ্টান মার্টিনের নামানুসারে এই দ্বীপের নাম রাখেন সেন্টমার্টিন দ্বীপ। এরপর থেকেই মায়ানমার দ্বীপটি দাবি করে আসছে। এর আগে ১৮২৪ থেকে ১৮২৬ সাল পর্যন্ত বৃটিশদের সাথে বর্মীদের যে যুদ্ধ হয় তাতে বিতর্কের ইস্যুগুলোর মধ্যে এই দ্বীপের মালিকানাও ছিল অন্যতম। এই দ্বীপের তিনদিকের ভিত শিলা জোয়ারের সময় সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যায় এবং ভাটার সময জেগে ওঠে। এগুলো-সহ যদি ধরি, তাহলে এর আয়তন হবে প্রায় ৮ থেকে ১০ বর্গ কিলোমিটার। এই দ্বীপটি উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় ৫.৬৩ কিলোমিটার লম্বা। দ্বীপের প্রস্থ কোথাও ৭০০ মিটার আবার কোথাও ২০০ মিটার। এই দ্বীপটি টেকনাফ শহর থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমার উপকূল থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত।

উল্লেখ্য, বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি আছে, যার সংখ্যা প্রায় ৭৫০টি। কিন্তু দক্ষিন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চল, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয অঞ্চলের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল সমূহের মার্কিন আ্ধিপত্য বজায় রাখার জন্য তাদের কোনো ঘাঁটি নেই। ভৌগলিক অবস্থানের দিক দিয়ে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার। এছাড়াও পূর্ব এবং পশ্চিম গোলার্ধের মধ্যে বাণিজ্যিক শিপিং রুটের জন্য একটি অর্থনৈতিক হাইওয়ে হিসেবে বঙ্গোপসাগর ঐতিহাসিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক কণ্টেইনার ট্রাফিক এই অঞ্চল দিয়ে যায়। আর বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় ৩৩% পরিচালনা করে এর বন্দরগুলো।

এছাড়াও উত্তর ভারত মহাসাগর বিশ্বব্যাপী পূর্ব-পশ্চিম-পূর্ব বাণিজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথ। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত এই দ্বীপটির অবস্থান মালাক্কা প্রণালীর কাছাকাছি। এই প্রণালীটি ভারত মহাসাগরের সাথে প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযুক্ত করেছে। এটি পৃথিবীর একমাত্র ব্যস্ততম সামুদ্রিক জলপথ। কারণ এই জলপথ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল-গ্যাসের জাহাজগুলো নিয়ে যায় চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া-সহ অনেক দেশ। সেজন্য এই পথে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা আঞ্চলিক রাজনীতি ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত জরুরী বলে মনে করে আমেরিকা-সহ বিশ্বের অন্যান্য পরাশক্তিগুলো।
তাই সেন্টমার্টিনে একটা ঘাঁটি করতে পারলে এই অঞ্চলে মার্কিনীদের এক নম্বর পজিশন ধরে রাখা সম্ভব হবে এবং বিশ্ববাণিজ্যের প্রায় ৩৩ শতাংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে আসবে।

সেন্টমার্টিন যেহেতু বাংলাদেশের অন্তর্গত, সেজন্য বাংলাদেশের ক্ষমতায় মার্কিনীদের সহায়ক একটা সরকার খুবই প্রয়োজন, যাতে সহজেই সেন্টমার্টিনে তাদের একটা সামরিক ঘাঁটি করা যায়। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা যেহেতু মার্কিনীদের চোখে চোখ রেখে তাদের এমন প্রস্তাব না করে দিয়েছেন। আমেরিকাও স্পষ্ট বুঝতে পারল, বঙ্গবন্ধুর যোগ্যকন্যা শেখ হাসিনা আমেরিকার দাদাগিরি মানবেন না। শেখ হাসিনা শিরদাঁড়া সোজা করে মুখের ওপর বলে দিয়েছিলেন, আমেরিকাকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দিয়ে তিনি ক্ষমতায় থাকতে চান না। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে তিনি ছিনিমিনি খেলতে দেবেন না। তিনি পরিষ্কার বলে দেন, এই দেশের মাটি ব্যবহার করে কোনো জায়গায় কোনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালানো কিংবা কাউকে আক্রমণ করার মতো কাজ তিনি হতে দেবেন না। যার জন্য শেখ হাসিনাকে তাঁর মাসুল দিতে হয়েছে ক্ষমতা থেকে অপসারিত হয়ে।

মার্কিনিরা জানত, বাংলাদেশে ‘ভাত ছিটালে কাকের অভাব হয় না’। সে দেশে শেখ হাসিনার মতো স্বাধীনচেতা সরকারকে পাল্টানো কোনো বিষয় নয় এবং ছলে-বলে-কৌশলে তারা তাই করেছে। মার্কিনীরা জানত, যে কাজ পাকিস্তানিরা করতে পারেনি সে কাজ করে দেখিয়েছে এই দেশেরই বেঈমানরা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে খুন করার মূল কুশীলব ছিল বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে কাছের মানুষ খন্দকার মুস্তাক আহমদ। যে নাকি বঙ্গবন্ধুর পিতার মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধুর চেয়ে অনেক বেশি কেঁদেছিলেন। সুতরাং এমন একটা দেশে মার্কিনীদের সহায়ক সরকার আনা তাদের জন্য কোনো ব্যাপার্‌ই না।

গত নির্বাচনের কিছুদিন আগে গণভবনে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকের শুরুতেই শেখ হাসিনা একটি বিস্ফোরক তথ্য দেন। তথ্যটি হলো; ‘আমি যদি কোনো এক সাদা চামড়ার দেশের প্রস্তাব মেনে নিই, তাহলে আমার ক্ষমতায় আসতে অসুবিধা হবে না। যদি আমি বাংলাদেশে কাউকে এয়ার বেজ করতে দিই, ঘাঁটি করতে দিই, তাহলে আমার কোনো অসুবিধা নেই। দেশের কোনো অংশ ভাড়া দিয়ে বা কারো হাতে তুলে দিয়ে আমি ক্ষমতায় যেতে চাই না। সেই ক্ষমতার দরকার নেই’।

তিনি আরো বলেন, “চক্রান্ত এখনো আছে। পূর্ব তিমুরের মতো বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মিয়ানমারের কিছু অংশ নিয়ে তারা একটা খৃষ্টান দেশ বানাবে। বঙ্গোপসাগরে ঘাঁটি বানানোর প্রস্তাবও দিয়েছে ‘সাদা চামড়ার দেশটি’। আমার ক্ষমতায় আসতেও অসুবিধা হবে না, যদি আমি বাংলাদেশে কারো এয়ার বেজ করতে দিই, ঘাঁটি করতে দিই; তাহলে আমার কোনো অসুবিধা হবেনা। কিন্তু এটা পাত্তা দিই না, সোজা কথা”।

এখানে ‘পূর্ব তিমুর’ দেশটি ১৯৭৬ সালের আগে ইন্দোনেশিয়ারই অংশ ছিল। মার্কিনীরা তাদের প্রয়োজনে এক প্রকার জোর করে ইন্দোনেশিয়া থেকে কেড়ে নিয়ে ১৫,০০৭ বর্গকিলোমিটারের এই খৃষ্টান অধ্যুষিত এলাকাটি স্বাধীন দেশ বানিয়ে নেয় এবং আমেরিকা সেখানে একটি মিলিটারি বেজ তৈরি করে নেয়। তারা এজন্য ৩০/৪০ বছর আগ থেকেই তাদের পরিকল্পনা শুরু করেছিল। উক্ত এলাকায় এক সময় দেখা গেল, খৃষ্টান মিশনারীদের তৎপরতা। তারা পূর্ব তিমুরের গরীব মুসলমানদের অর্থের লোভ দেখিয়ে গণহারে খৃষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করতে থাকে এবং দেশটি এক সময় খৃষ্টান এলাকায় পরিণত হয়। ওই একই খেলাটি আমেরিকা বাংলাদেশের চট্টগ্রামে খেলতে চায়। যে খেলা শেখ হাসিনা ধরে ফেলেছেন বলেই ‘পূর্ব তিমুর’ নামটি ম্যানশন করে বলেছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বেশ কয়েকবছর আগে থেকে খৃষ্টান মিশনারীদের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। তারাও একইভাবে পাহাড়িদের খৃষ্টানধর্মে ধর্মান্তরিত করেছে। প্রায় ২ বছর ধরে ফেসবুকে পেজ খুলে পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামক যে সশস্ত্র সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করেছে, সে সংগঠনের সদস্যরা পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বম সম্প্রদায় এক সময় প্রকৃতি পূজারী অথবা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিল। খৃষ্টান মিশনারীরা তাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাদের খৃষ্টান ধর্মে দীক্ষিত করে। তারা এক সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের দুই জেলার ৯টি উপজেলা নিয়ে একটি আলাদা রাজ্য গঠনের ঘোষণা দেয় এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে বেশ কয়েকজন সেনাসদস্য মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া ইসলামি জঙ্গী সংগঠনের সদস্যদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে কেএনএফ-এর বিরুদ্ধে। তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের কারণে এবং সেনাবাহিনীর তৎপরতায় সংগঠনটির নেতারা সরকারের সাথে আলোচনায় ফিরতে বাধ্য হয়।

খৃষ্টান মিশনারী, ইসলামি জঙ্গীগোষ্ঠী ও কেএনএফ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সহযোগীতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের দুই জেলার ৯টি উপজেলা ও মায়ানমারের কিছু অংশ নিয়ে যদি মার্কিনীরা পূর্ব তিমুরের মতো একটি খৃষ্টান রাষ্ট্র গঠন করতে পারে, তাহলে নির্দ্ধিধায় সেখানে তারা একটি সামরিক ঘাঁটি তৈরি করতে পারবে। তাতে তারা চীনের ওপর কড়া নজর রাখার জন্য আর ভারতের ওপর নির্ভর করতে হবে না এবং ভারতের সাথে হওয়া চুক্তিগুলোরও আর তেমন গুরুত্ব থাকবে না। মার্কিনীরা কোনো মুসলিম দেশে তাদের স্বার্থ হাসিল করতে সবসময় ইসলামি মৌলবাদীদের হাতে নেয়। আমেরিকা নির্ভর বর্তমান সরকারের কাজ-কর্ম দেখলে তা পরিষ্কার বোঝা যায়। তাছাড়া, বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগর ও আরব সাগরে ধীরে ধীরে ভারত তাদের নৌশক্তি বাড়িয়ে মহাশক্তিশালী হয়ে ওঠছে। সেটাও মার্কিনীদের মাথাব্যাথার কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

এদিকে আবার শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে অপসারিত হওয়ার পর হঠাৎ করে মহা উৎসাহে কূটনীতিকের চাকুরি ছেড়ে ২০২২ সাল থেকে ২০২৪-এর এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকায় দায়িত্ব পালন করা যুক্তরাষ্ট্রের ১৭তম রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানির মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি ‘অ্যাকসিলারেট এনার্জি’র স্ট্র্যাটেজিক উপদেষ্টা পদে যোগদান করেছেন। বাংলাদেশে এলএনজি সরবরাহের জন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে সমুদ্রে ভাসমান একটা টার্মিনাল রয়েছে অ্যাকসিলারেট এনার্জির। এছাড়া ২০২৬ সাল থেকে বাংলাদেশে এলএনজি সরবরাহে একটি চুক্তি করেছে অ্যাকসিলারেট। অ্যাকসিলারেট এনার্জির প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিভেন কোবোস বলেন, কূটনৈতিক জীবনে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন পিটার ডি হাস। ভূ-রাজনীতি ও বাজার সম্পর্কে তাঁর ভালো ধারণা আছে। তাঁর অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্ব বিশ্বজুড়ে অ্যাকসিলারেট গ্রাহকের জ্বালানি নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখবে।

সুতরাং ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। মনে করে, যেকোনো সময় তারা আগুনে ঝলসে যেতে পারে। আমেরিকা-সহ দেশি-বিদেশি চক্রান্তে নির্বাচিত শেখ হাসিনা সরকারের অপসারণ, ২০/২৫ বছর ধরে বিভিন্ন পুরষ্কারে ভূষিত করে বিশ্বে জনপ্রিয় করে তোলা আমেরিকা সমর্থক ইউনুস সরকারের কার্যক্রম এবং ইসলামি মৌলবাদীদের আস্ফালন দেখলে বাংলাদেশের জনগণের ঘরপোড়া গরুর অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। তবে মাষ্টার দা সূর্যসেন, প্রীতিলতা ওযাদ্দেদার, কল্পনা দত্ত ও মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর চট্টগ্রাম এতো সহজেই মার্কিন লাল-বাবুদের কাছে মাথা নোয়াবে বলে মনে হয় না।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট।