ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১

প্রচ্ছদ » রাজনীতি » বিস্তারিত

চাল-ডাল-ডিম সরবরাহ ঠিক রাখতে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান

২০২৪ অক্টোবর ২০ ১৩:১৩:৪৬
চাল-ডাল-ডিম সরবরাহ ঠিক রাখতে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার : বাজারে চাল, ডাল, সবজি, মাছ-মাংস ও ডিমের সরবরাহ ঠিক রাখতে হলে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যায় এবং প্রবল বর্ষণে জলাবদ্ধতার কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগ নিরসনে সরকারের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

রবিবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, শেরপুর, নেত্রকোনাসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও উত্তরাঞ্চলে বন্যায় এবং প্রবল বর্ষণে কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগ নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন একটা তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যায় যেভাবে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে ব্যাপক তৎপরতা দেখা দিয়েছিল সেটি বর্তমানে দেখা যাচ্ছে না। সাম্প্রতিক বন্যায় কৃষক ও খামারিদের অতি দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যা উপদ্রুত মানুষ ও তাদের পরিবারের দুরাবস্থার বিষয়টি সরকারকেই প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে। বাজারে চাল, ডাল, সবজি, মাছ-মাংস ও ডিমের সরবরাহ ঠিক রাখতে হলে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। সার, কীটনাশক ও বীজের সরবরাহ বাড়িয়ে কিংবা প্রণোদনা দিয়ে কৃষক ও খামারিদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

তিনি বলেন, জীবনযাত্রার মান স্বাভাবিক রাখতে ক্ষতিগ্রস্ত আবাসন পুনর্নির্মাণ, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ ও পুষ্টির মতো অতি প্রয়োজনীয় সেবাগুলোর ঘাটতি যাতে না হয়, সেটি বিবেচনা করে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ বন্যাজনিত সংকটে শিশুরা যাতে অপুষ্টিতে না ভোগে সেজন্য সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বন্যা পরবর্তী অসুস্থতা ও পানিবাহিত রোগ নিরাময়ে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহের বিষয়ে সরকারকে কর্ম তৎপর হতে হবে।

রিজভী বলেন, ভয়াবহ বন্যায় শেরপুর ও নেত্রকোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন রোপা আমন ও সবজি চাষিরা। সরকারি সূত্র থেকে জানা যায়, শুধুমাত্র নেত্রকোনা জেলার পাঁচ উপজেলায় ২০ হাজার ৯০৯ হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষেত সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে ৭০ হাজারের বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে সবজি চাষের ক্ষতি হয়েছে ১৬০ হেক্টর জমির। এতে পাঁচ ৩২০ কৃষকের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৩ কোটি টাকা। প্রায় এক হাজার ৭৩০টি পুকুর এবং মৎস্য খামার ডুবে গেছে। টাকার অংকে যার পরিমাণ আট কোটি টাকা। শেরপুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এক লাখ ৭৭ হাজার ৮০ জন কৃষক। এ বছর ৯৫ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছিল, তার মধ্যে ৩৭ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমির ফসল বন্যায় নষ্ট হয়েছে।

এ সময়ে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি তুলে ধরে রুহুল কবির রিজভী। দাবিগুলো হলো: বন্যার পানিতে যাদের জমির ফসল বিনষ্ট হয়ে গেছে তাদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন করে আগামী ফসল না উঠা পর্যন্ত তাদের সর্বাত্মক ত্রাণ সহায়তা দেওয়া, আগামী ফসলের জন্য সুদমুক্ত কৃষি ঋণ দেওয়া ও বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক, সেচের তেলের ব্যবস্থা করা। আগামী ফসলের আগে রবি শস্য উৎপাদনের জন্য তাদের মধ্যে রবি শস্যের বীজ দেওয়া। বন্যার পানিতে যেসব মৎস্য, হাঁস-মুরগি, গবাদি পশুর খামার বিনষ্ট-মৎস্য, হাঁস-মুরগি গবাদি পশু ধ্বংস হয়ে গেছে, তাদের সঠিক তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে পুনরায় খামার প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের সুদমুক্ত ঋণসহ অন্যান্য সহায়তা দেওয়া।

এছাড়া বন্যার পানিতে যাদের বাড়ি-ঘর আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ ধ্বংস হয়ে গেছে, তাদের তালিকা তৈরি করে ঘর-বাড়ি পুনঃনির্মাণে সহায়তা দিতে হবে, নদীর বাঁধ ভেঙে যেসব গ্রাম-পাড়া-মহল্লা বিলীন হয়ে গেছে, সেসব স্থানে বসবাসকারীরা বর্তমানে উদ্বাস্তু হয়ে গেছে, তাদের সরকারি খাস জমিতে/আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্থানান্তরিত করা। যেসব বাঁধ, রাস্তা, মসজিদ, মাদরাসা, মন্দিরসহ অন্যান্য ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ ধ্বংস হয়ে গেছে, সেগুলো সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করা। বন্যার পানিতে যেসব ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা সামগ্রী বিনষ্ট হয়ে গেছে, তাদের সরকারি উদ্যোগে শিক্ষা সামগ্রী ও সহায়তা দেওয়া। বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে রোগ-বালাইগ্রস্ত মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে এলাকাভিত্তিক মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করে চিকিৎসা দিতে হবে।

(ওএস/এএস/অক্টোবর ২০, ২০২৪)