ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » প্রবাসের চিঠি » বিস্তারিত

জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধির নিয়োগ প্রত্যাহারের দাবি

২০২৪ অক্টোবর ২৫ ১৬:৪৬:৫৪
জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধির নিয়োগ প্রত্যাহারের দাবি

ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক : সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরীকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত ও মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সদ্য প্রদত্ত নিয়োগ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিরা। গত ২০ অক্টোবর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারির পর থেকেই সোচ্চার হয়ে উঠেন প্রবাসীরা।

রাষ্ট্রদূত নোমান চৌধুরী ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগদান করেন। কূটনৈতিক জীবনে চৌধুরী নয়াদিল্লি, ইসলামাবাদ এবং নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। বিসিএস (পররাষ্ট্র ক্যাডার) ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন নোমান ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর থেকে নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০১৪-২০১৭ সাল পর্যন্ত দিল্লির বাংলাদেশ মিশনে ডেপুটি হাইকমিশনার ছিলেন। কিন্তু বহুপাক্ষিক বিষয়ে অদক্ষ হওয়ায় এবং জতিসংঘের একটি গুরুত্তপূর্ণ মিটিংয়ে একটি প্রতিবেশি দেশের পক্ষে ভোট দেওয়ায় তৎকালিন স্থায়ী প্রতিনিধি ইসমত জাহানকে নোমান জাতিসংঘ মিটিংয়ে অংশগ্রহন থেকে বাধ্যতামূলক ভাবে বিরত রাখেন এবং তাকে অনতিবিলম্বে নিউ ইয়র্ক মিশন থেকে প্রত্যাহার করতে বলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে। মন্ত্রনালয় স্থায়ী প্রতিনিধির পরামর্শ অনুযায়ি তাকে তৎক্ষনাৎ জাতিসংঘ মিশন থেকে নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে বদলি করে। সেই বহুল সমালোচিত অফিসারকে পুনরায় নিউ ইয়র্ক মিশনে পোষ্টিং দেয়াতে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নিউ ইয়র্কের প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চর হয়েছে।

কাজের মেয়ের হাতে গৃহকর্ত্রী ও দুই মেয়ে খুন- মধ্য আশির দশকে এটি ছিল ঢাকা শহরের টক অব দি টাউন। তখনকার দিনে অভাবিত এ ঘটনাটি পুরো দশক জুড়ে গোটা দেশে ছিল আলোচিত। সেই ঘটনায় সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী জড়িত বলে জানা গেছে। প্রফেসর ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারের অস্থিতিশিলতার সুযোগ নিয়ে এই ধরণের বিতকিত পদায়ন বিপদজনক পরিণতি ডেকে আনবে বলে অনেকেই ধারণা করছেন।

জাপানের টোকিওতে বাংলাদেশ দুতাবাসের কর্মকর্তা ও তোকুশিমায় প্রবাসী মঞ্জু মনোয়ারা তার ফেসবুকে লিখেন-সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর উপর রিভিউ পিটিশন এর রায়ের ফলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে চলে গিয়েছে বিচারপতিদের অপসারণ করার ক্ষমতা। এর ফলে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়ার পথে এক ধাপ এগিয়ে গেল। খুশিতে ভাসছে সমগ্র বাংলাদেশ। সেই সাথে আমিও। আওয়ামি ফ্যাসিস্ট শাসনামলে বিচার বিভাগকে কিভাবে কিনে নেয়া হত ও প্রভাবিত করা হত তার একটি ক্ষুদ্র উদাহরণ আজ আমি তুলে ধরব। ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন নারী কর্মকর্তা। যৌন হয়রানি শিকার ওই নারী কর্মকর্তার চাওয়া ছিল অতি সাধারণ। তিনি চেয়েছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যে অভিযোগ কমিটি তার করা যৌন হয়রানীর অভিযোগকটির তদন্ত করছিল সেই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন।

মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করে অভিযোগ কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন এক মাসের ভেতর হাইকোর্টে দাখিল করতে নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মহামান্য হাইকোর্টকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রুল জারির ১ ঘণ্টার মাঝে কর্মরত অবস্থায় উক্ত কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দেয়। এই ঘটনার এক দিন পর উক্ত নারী কর্মকর্তা বরখাস্ত আদেশের বিরুদ্ধে থাকার আদেশ চেয়ে মহামান্য হাইকোর্টের কাছে দরখাস্ত করেন।মহামান্য হাইকোর্টের কাছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের খারাপ উদ্দেশ্য প্রমাণিত হয়ে যাওয়ার ভয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটর্নি জেনারেলের অফিসকে কাজে লাগিয়ে অভিযোগ কমিটির কমিটি প্রধানকে অনুরোধ করেন মহামান্য হাইকোর্টে ভুল তথ্য উপস্থাপন করতে যাতে করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের খারাপ উদ্দেশ্য কোনভাবেই প্রমাণিত না হয়।অভিযোগ কমিটির প্রধান এবং এটর্নি জেনারেল এর অফিসের অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল সামিউল আলম সরকারের ফোনের রেকর্ড এবং তার ট্রান্সক্রিপ্ট এখানে দিয়ে দেয়া হল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হয়ে বিচার বিভাগকে কিনে নেয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি তদানীন্তন পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক এবং মেরিটাইম অ্যাফেয়ার ইউনিট প্রধান খুরশেদ আলমের নির্দেশে পরিচালনা করেন তদানীন্তন মহাপরিচালক (প্রশাসন) সালাউদ্দিন নোমান চৌধুরী।খুনি হাসিনার সচিবদের প্রতি একান্ত অনুগত থাকার কারণে সালাউদ্দিন নোমান চৌধুরীকে ১৫ তম ব্যাচ এবং সতের ব্যাচের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে পুরস্কার হিসেবে নেপালের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করা হয়। একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে সালাউদ্দিন নোমান চৌধুরীর নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে। মানবতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যিনি ক্ষমতা প্রয়োগ করে বিচার বিভাগকে কিনে নেয়ার চেষ্টা করেছেন সেই সালাউদ্দিন নোমান চৌধুরী যাচ্ছেন নিউ ইয়র্কের স্থায়ী মিশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে মানবতার কথা বলতে।শহীদের রক্তের উপর গড়া এই নতুন বাংলাদেশে শহীদের রক্তের সাথে এর চেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা আর কি হতে পারে?

আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের ডান হাত মহাপরিচালক (প্রশাসন) সালাউদ্দিন নোমান চৌধুরীর সীমাহীন দূর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার আর ন্যাক্কারজনক কেলেঙ্কারির আরেকটি বিবরণ প্রমাণ সহ কমেন্ট বক্সে লিংকে দেয়া আছে। এখন প্রশ্ন হল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি এই নতুন বাংলাদেশে শহীদদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে? মানবতার চূড়ান্ত লঙ্ঘনকারী সালাউদ্দিন নোমান চৌধুরীকে নিউইয়র্ক স্থায়ী মিশনে বাংলাদেশের হয়ে মানবতার প্রতিনিধিত্ব করতে পাঠাবে?

ইসলাম ধর্মে কবরে দাফন করার সময় শহীদদেরকে গোসল দেয়া হয় না । মহা বিচার দিবসে শহীদরা গুলিবিদ্ধ শরীরে, রক্তমাখা শরীরে কবর থেকে উথিত হবেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস সেই মহা বিচার দিবসেও এই শহীদেরা রক্তমাখা শরীরে এই নিয়োগের নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে মহান সৃষ্টি কর্তারের কাছে অভিযোগ নিয়ে দাঁড়াবেন।

ইতোমধ্যে পোল্যান্ডে একজন বির্তকিত রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেয়ার পর জনগনের প্রতিবাদের মুখে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। নোমানের ব্যাপারেও নিউ ইয়র্ক বাসীরা বৈষম্যবিরধী আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়কদের নেতৃত্বে মিশন ঘেরাও সহ অন্যান্য কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে নাকি এখনই এই বিতর্কিত ব্যাক্তিকে প্রত্যাহার করবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

(আইএ/এসপি/অক্টোবর ২৫, ২০২৪)