ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মিডিয়া » বিস্তারিত

সংবাদ প্রকাশের জেরে হামলা

৬ বছরেও সুস্থ হতে পারেননি সাংবাদিক আজাদ, প্রধান উপদেষ্টার কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি

২০২৪ নভেম্বর ১৭ ১৪:২৬:২১
৬ বছরেও সুস্থ হতে পারেননি সাংবাদিক আজাদ, প্রধান উপদেষ্টার কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি

রাজবাড়ী প্রতিনিধি : শুরুতে হুমকি-ধামকি,পুলিশ দিয়ে হয়রানি-বাড়ি তল্লাশী শেষে হামলা। সংবাদ প্রকাশের জেরে ফ্যাসিস্ট সরকারের নেতা-কর্মীদের হামলার ৬বছরেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি রাজবাড়ীর পাংশার সাংবাদিক একে আজাদ। হামলায় বাম হাতের ৮অংশ,ডান হাতের কনুই-আঙ্গুলসহ দু’পা ভেঙ্গে যায়। এছাড়াও রয়েছে শরীরের বিভিন্ন অংশে রয়েছে শতাধিক আঘাতের চিহ্ন।

২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তার উপর এই হামলা হয়। হামলার কয়েকদিন আগে ‘টোকাই সাম্রাজ্যে দিশেহারা মানুষ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে সাংবাদিক আজাদ। এরপর থেকে রাজবাড়ির কালুখালি উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মজনু, যুবলীগ, ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী ক্যাডার শহিদুল ইসলাম মারুফসহ বেশকয়েকজন নানাভাবে হুমকি-ধমকী ও নাজেহাল করে।

এছাড়াও পাংশা মডেল থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান উল্লাহ নিজেও নানাভাবে হয়রানি করে। পরে ২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মিটিং থেকে ফেরার পথে পাংশা পোস্ট অফিসের সামনে থেকে আজাদের উপর হামলা করে মদাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মজনু,ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম মারুফ,পাংশা পৌর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি দিপক কুন্ডু, ক্যাডার শফিক, আলি, কালুখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আাতিউর রহমান নবাব, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বিশ্বাসসহ ২০/২৫ জন। সেসময় লোহার রড,হাতুর দিয়ে পিটিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ফেলে রেখে যায়।

হামলার সময় ৩জনের কাছে পিস্তলও ছিল। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পাংশা হাসপাতাল,পরে ঢাকা পঙ্গুতে নিয়ে যায় স্বজনরা। সেখানে মৃত্যর সাথে পাঞ্জা লড়তে লড়তে কোনরকমে বেঁচে আছেন তিনি। হামলাকারীরা সবাই সাবেক রেলপথ মন্ত্রী ও রাজবাড়ী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জিল্লুক হাকিমের আশির্বাদপুষ্ঠ। হামলার পর ২৫ জনের নামে রাজবাড়ী কোর্টে মামলা দায়ের করেন সাংবাদিক একে আজাদ। তবে সেই মামলা লড়তে পারেননি তিনি। নানারকম হুমকি-ধমকি ও চাপে পড়ে তা তুলে নিতে বাধ্য হন। হামলার পর জীবন বাঁচাতে জমি বিক্রি করে উন্নত চিকিৎসা করান সাংবাদিক একে আজাদের পরিবার। তবে সেই টাকায়ও সুস্থ্য করতে না পেরে পাংশা কৃষি ব্যাংক থেকে ২ লাখ ও অগ্রণী ব্যাংক থেকে ৩লাখ টাকা লোন করেন। ৬বছরে তুলনামূলক সুস্থ্য হতে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা।

সাংবাদিক একে আজাদ বলেন,‘সংবাদ প্রকাশের জেরে হামলার শিকার হয়েছি। যার ক্ষত এখনও বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি,সুস্থ্য হতে পারিনি। স্বাভাবিক জীবন-যাপনেও নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। হামলার ঘটনায় মামলা করার পর সাবেক রেলপথ মন্ত্রী ও রাজবাড়ী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জিল্লুল হাকিমের হুমকি-ধমকীতে পরিবারের কথা চিন্তা করে তা তুলে নিতে বাধ্য হই। চিকিৎসা করাতে বসতভিটা বিক্রি করতে হয়েছে। সেই টাকাই-ও হয়নি,পরে ব্যাংক থেকে লোন ও স্ত্রী’র স্বর্ণের গহনা বিক্রি করে চিকিৎসা করিয়ে জীবন বাঁচিয়েছি। বর্তমানে ব্যাংকের সুদ দিতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছি। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমার উপর হামলাকারীদের বিচার নিশ্চিত,ব্যাংক লোন মওকুফ ও চিকিৎসা বাবদ আর্থিক সহযোগিতা করার দাবি করছি।’

(একে/এএস/নভেম্বর ১৭, ২০২৪)