প্রচ্ছদ » পাঠকের লেখা » বিস্তারিত
তাজউদ্দীন ও ভাসানী: নতুন রাজনীতির সম্ভাবনা ও বাস্তবতা
২০২৪ নভেম্বর ১৯ ১৭:১২:০৭ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে তাজউদ্দীন আহমদ ও মাওলানা ভাসানী এমন দুই ব্যক্তিত্ব, যারা নীতি ও নেতৃত্বের আদর্শে অনন্য। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় তাদের কেন্দ্র করে নতুন রাজনীতি গড়ে তোলার উদ্যোগ কতটা বাস্তবসম্মত, সেটি নিয়ে আলোচনা প্রাসঙ্গিক।
তাজউদ্দীন আহমদ: রাজনীতি ও সীমাবদ্ধতা
তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তার নেতৃত্ব ছিল নীতি নির্ভর, সংগঠিত ও গণমুখী। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগে তার আদর্শকে ধারণ করার মতো সংগঠক নেই। তার পরিবারের নতুন রাজনীতি গড়ার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নয়।
শেখ পরিবার আওয়ামী লীগকে একটি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ধরে রেখেছে। এটি তাদের ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক প্রভাবের প্রধান ভিত্তি। আওয়ামী লীগ থেকে তাজউদ্দীনকে কেন্দ্র করে নতুন কোনো রাজনীতি গড়ার প্রচেষ্টা শেখ পরিবারের রাজনৈতিক অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এ বাস্তবতায় তাজউদ্দীনের নাম ব্যবহার করে নতুন আওয়ামীপন্থী রাজনীতি গড়ে তোলা এক কল্পনা থেকে যাবে।
মাওলানা ভাসানী: নতুন প্রাসঙ্গিকতার সম্ভাবনা
মাওলানা ভাসানী ছিলেন কৃষক-শ্রমিকের নেতা, গণমানুষের প্রতিনিধি। তবে বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্ম তার সম্পর্কে খুব কমই জানে। তাকে কেন্দ্র করে নতুন রাজনীতি গড়ে তুলতে চাইলে ব্যাপক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
তবে বর্তমান সময়ে ভাসানীর আদর্শ—জনগণের অধিকার, শোষণমুক্ত সমাজ গড়া—আবার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। তৃণমূলের দাবি-দাওয়া এবং জনগণের প্রতি উদাসীন রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ভাসানীর ভাবধারা একটি নতুন বিকল্প শক্তি হয়ে উঠতে পারে। সঠিক পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব থাকলে ভাসানীকে কেন্দ্র করে রাজনীতি নতুনভাবে জেগে উঠতে পারে।
৭১ ও ২৪-এর সমন্বয়ের প্রয়োজন
বাংলাদেশের ভবিষ্যতের রাজনীতিতে শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা (৭১) বা বর্তমানের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেতনা (২৪) দিয়ে টিকে থাকা সম্ভব নয়। দুটি ধারার চেতনাকে সমন্বয় করেই রাজনীতি করতে হবে। যারা একটিকে প্রাধান্য দেবে, তারা খণ্ডিত রাজনীতির ফাঁদে পড়বে। ৭১ ও ২৪-এর সমন্বয়ই ভবিষ্যতের মূলধারার রাজনীতির ভিত্তি হতে পারে।
ছাত্র রাজনীতির ভূমিকা ও দায়িত্ব
বর্তমান ছাত্ররাজনীতি দিশাহীন। তারা বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে একই পাল্লায় তুলনা করছে, যা বাস্তবতার পরিপন্থী। ছাত্রদের এ ধরনের ভুল দৃষ্টিভঙ্গি তাদের রাজনৈতিক সম্ভাবনাকে ধ্বংস করছে এবং রাজনীতি প্রধান ধারাকে দুর্বল করছে। ছাত্র রাজনীতি হতে পারে ভবিষ্যতের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির ভিত্তি। কিন্তু তাদেরকে সত্যনিষ্ঠ ও প্রাসঙ্গিক অবস্থান নিতে হবে।
নতুন পথের সন্ধান
তাজউদ্দীন ও ভাসানীকে কেন্দ্র করে নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ স্বপ্ন দেখাতে পারে, কিন্তু বাস্তবায়ন অত্যন্ত কঠিন। তাজউদ্দীনের আদর্শে রাজনীতি গড়ে তোলা শেখ পরিবারের প্রতিরোধের মুখে ধাক্কা খাবে। অন্যদিকে, মাওলানা ভাসানীর ভাবধারা তৃণমূলে নতুন প্রাসঙ্গিকতা পেতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টা ছাড়া এটি সফল হবে না। ভবিষ্যতের রাজনীতি শুধু অতীতের গৌরবগাথার উপর নির্ভর করবে না। সুশাসন, জনগণের আস্থা এবং ৭১ ও ২৪-এর সমন্বিত চেতনা ধারণ করেই বাংলাদেশে নতুন ধারার রাজনীতি গড়ে উঠতে পারে।
লেখক: কলামিস্ট, সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ।