ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

প্রতিবন্ধী শিশু মহিলা বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে বিশেষ সুরক্ষা প্রয়োজন

২০২৪ ডিসেম্বর ০২ ১৭:৩০:৫১
প্রতিবন্ধী শিশু মহিলা বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে বিশেষ সুরক্ষা প্রয়োজন

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বরকে ‘আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ২০২৪। হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বিশ্ব জুড়ে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধিতার শিকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও সুরক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে উদযাপন হতে যাচ্ছে ৩৩ তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। বাংলাদেশ এবছর ২৬ তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপন হবে।দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য– ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে বিকশিত নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে প্রতিবন্ধী জনগণ’। সমাজসেবা অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী নারী, পুরুষ ও হিজড়াসহ বাংলাদেশে মোট প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা দেশে এখন সরকারের নিবন্ধিত প্রতিবন্ধী অর্থাৎ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির সংখ্যা ৩০ লাখ। একটি দেশের শতকরা ১০ ভাগ মানুষ প্রতিবন্ধী। এটা আন্তর্জাতিক হিসাব। বাস্তবে দেশে প্রতিবন্ধী সরকারি হিসাবের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। প্রতিবন্ধী শব্দটি যেন এক বৈষম্যের প্রতিধ্বনি। শব্দের অর্ন্তগত অর্থ সেই শব্দের নাম নির্দেশ করে থাকে। সেজন্য অন্য শব্দ ব্যবহৃত হলেও হয়ত নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সেই শব্দকেও নেতিবাচক করে তুলবে। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বৈষম্যের উৎপত্তি এবং বৈষম্য থেকে জনবিচ্ছিন্নকরণ। প্রতিবন্ধী নাগরিকগণ যেন সমাজে অন্য সব নাগরিকের মত সমান অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বসবাস করতে পারেন সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রতিবছর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস পালিত হয়। আর শারীরিকভাবে অসম্পূর্ণ মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগিতা প্রদর্শন ও তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যেই দিবসটির সূচনা হয়।আর সকল প্রকার শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা মানব বৈচিত্রেরই অংশ। তাই, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে তাদের উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করা খুবই জরুরি। সমাজের অবিচ্ছেদ্য এ অংশকে সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। তবেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবেন।

আর বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা রয়েছে আর তা হলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা পাগল, মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী, শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়, মানসিকভাবে অসুস্থ বা ভূতের দ্বারা আক্রান্ত। কিন্তু এটি একটি স্নায়বিক সমস্যা। এর ফলে রোগী কথা বলতে বা বুঝতে, নতুন জিনিস শিখতে এবং সমাজে চলতে অসীম সমস্যার সম্মুখীন হন।

প্রতিবন্ধী রোগীদের এই স্নায়ুবিক পার্থক্য তাদের অক্ষমতা নয়। এই পার্থক্যের জন্য প্রতিনিয়ত তাদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হয়।

এর জন্য যারা এই ভিন্ন চিন্তার মানুষ, তাদের জন্য সরকারীভাবে, পরিবার বিভিন্ন জায়গায় সহযোগীতার মানসিকতা তৈরি করার পদক্ষেপ নিতে হবে। যারা ভিন্ন মস্তিস্কের তারা আত্মঘাতী পথেরও অনুসরণ করতে পারে। যার কারণে তাদের পারিবার তাদের স্কুলের শিক্ষকসহ তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাদের আচরণ ক্ষমতা ও তাদের চিন্তা ভাবনা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। তাদের জন্য আলাদা পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

প্রতিবন্ধী কি?

প্রতিবন্ধী নিউরোলজিকাল বা স্নায়ুবিক সমস্যা যাতে মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। বায়োকেমিক্যাল কাঠামোর কারণে এই নিউরণগুলি অত্যাধিক সংবেদনশীল। আর অটিজমযুক্ত শিশুরা উচ্চ আওয়াজ, উজ্জ্বল আলো বা কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে সহ্য করতে পারেনা। এমন বাচ্চাদের কথা বলাতে সমস্যা, বন্ধু তৈরি বা শারীরিক ফিটনেসেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।

এছাড়া প্রতিবন্ধী হচ্ছে মস্তিষ্কের বিন্যাসগত সমস্যা। প্রতিবন্ধী শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশে এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকে, যার ফলে শিশু শুধুমাত্র নিজের মধ্যে আচ্ছন্ন থাকে, নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। শিশু যখন শুধু নিজের মধ্যে আচ্ছন্ন থাকে তখন তার অন্যদের সাথে যোগাযোগ, সামাজিকতা, কথা বলা, আচরণ ও শেখা বাধাপ্রাপ্ত হয়।

ইদানিং প্রতিবন্ধী নিয়ে মানুষ কিছুটা জানলেও এ রোগটি আগে থেকেই ছিল। শনাক্তকরণ সম্ভব হয়নি বলেই রোগটিকে নতুন মনে হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রথম ধারণা দেন হেনরি মোস্‌লে নামে একজন ব্রিটিশ সাইকিয়াট্রিস্ট ১৮৬৭ সালে। তিনিই প্রথম লক্ষ্য করেন যে কিছু কিছু শিশুর সামাজিক ও শারীরিক আচার-আচরণ এবং বুদ্ধিমত্তা অন্যান্য বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুদের থেকে আলাদা।

যেসব কারণে প্রতিবন্ধী হয়?

প্রতিবন্ধীর জন্য শিশুরা কখনো দায়ী নয়। এটি জন্মগত একটি সমস্যা। প্রতিবন্ধী হওয়ার সঠিক কারণ এখনো অজানা রয়ে গেছে। তবে গবেষণার মাধ্যমে প্রতিবন্ধীর জন্য অনেকগুলো কারণকে দায়ী করা হয়েছে।

১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে, গবেষকরা আবিষ্কার করেছিলেন যে, ‘এক্স’ ক্রোমোসোমের পরিবর্তনগুলি প্রতিবন্ধীর জন্য ঝুঁকি বাড়ানোর সম্ভাবনা বেশি। যখন ছেলেদের মধ্যে এই পরিবর্তন হয় এবং বিভিন্ন প্রতিবন্ধীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে। এক বিশেষ জিন যেখানে মিউটেশনগুলি নির্দিষ্টভাবে প্রতিবন্ধীর সঙ্গে যুক্ত হয়। যা মানুষের মধ্যে প্রোটিনের একটি প্রকার। কারণ এই জিনের মিউটেশনগুলি মস্তিষ্কের নিউরনের মধ্যে হাইপার-কানেক্টিভিটি সৃষ্টি করে।

ভ্রুণ বৃদ্ধির প্রারম্ভিক অবস্থায় স্বাভাবিক মস্তিস্কের বৃদ্ধিতে গোলমাল দেখা যায়, জিনের অস্বাভাবিকতার জন্য যা মস্তিস্কের বৃদ্ধি এবং মস্তিস্কের কোষগুলির নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ করে। সম্ভবত জিন ও পরিবেশগত উপাদানের প্রভাবে এ এস ডি রোগের সৃষ্টি হয়।

পরিবেশগত ও প্রারম্ভিক কারণ

অনেক তাত্ত্বিক ও গবেষকগণ জানিয়েছেন যে, কিছু পরিবেশগত এজেন্ট যেমন অ্যালকোহল প্যারাসিটামল এবং থ্যালিডোমাইড মত এক্সপোজার গর্ভবতী মহিলারা ব্যাবহার করে, যা সম্ভাব্য অটিজম ঝুঁকি সম্পর্কিত কারণগুলির সাথে সম্পর্কযুক্ত। যার কারণে জন্মের ত্রুটি হতে পারে। এছাড়া এমএমআর টিকা ও প্রতিবন্ধীর মধ্যে একটি সংযোগ রয়েছে। এসব কারণ ছাড়াও আরও অনেক কারণ রয়েছে প্রতিবন্ধী হওয়ার জন্য।

মাতৃস্বাস্থ্য

গর্ভবতী মহিলাদের যাদের ডায়াবেটিস, থাইরয়েড সমস্যা এবং প্রদাহজনক রোগের মতো রোগ রয়েছে তাদের অটিস্টিক শিশু জন্মের বেশি ঝুঁকি রয়েছে। এই রোগগুলি ভ্রূণ এবং ভ্রূণীয় টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যা উন্নয়নশীল ভ্রূণের স্নায়ুতন্ত্রের উপর বিধ্বংসী। জন্মগত ভাইরাল সংক্রমণ প্রতিবন্ধীর জন্য ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

গবেষণায় দেখা যায় যে, চাকরি না থাকা, পারিবারিক সমস্যা, আর্থিক সংকট বা দুঃখ দুর্দশা জীবনযাত্রার ঘটনাগুলি কখনও কখনও দীর্ঘস্থায়ী বা আধ্যাত্মিক বিষণ্ণতার কারণ হয়। যার কারণে গর্ভবতী নারীরা হতাশার মধ্যে থাকে। যা তার অনাগত শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশকে ব্যাহত করতে পারে। আচরণগুলি ধারাবাহিকভাবে চলতে পারে প্রতিবন্ধীর সঙ্গে। এ কারণেই পরিবেশগত চাপগুলি জিন-পরিবেশের মিথস্ক্রিয়া সৃষ্টি করে। যা মায়ের অ্যামনিওটিক টেসটোসটের মাত্রা বাড়ায়। মস্তিষ্কের প্যাটার্ন সনাক্তকরণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং জটিল সিস্টেমগুলি বিশ্লেষণ করে যখন শিশুর জন্ম হয় তখন সহানুভূতি ও যোগাযোগ হ্রাস করার ফলে এটি ক্রমবর্ধমান ভ্রূণে মস্তিষ্কের বিকাশকে পরিবর্তন করতে পারে না।

প্রতিবন্ধীর ধরন

অটিজম সঙ্গে কোন শিশুর সম্পর্ক নেই। এটা যে কোনো ব্যাক্তির হতে পারে। অটিজম নিয়ে কোনো শিশু জন্মগ্রহণ করে না। অটিজম সাধারণত চার ধরনের হয়ে থাকে।

ক্লাসিক প্রতিবন্ধী:শিশুদের ভাষা এবং শব্দ ভাণ্ডারের উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য বিলম্ব ঘটে ক্লাসিক অটিজমে। এই প্রতিবন্ধী শিশুরা সামাজিক ও যোগাযোগের চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হয়। এছাড়া অস্বাভাবিক আচারণের পাশাপাশি পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণও দেখা দিতে পারে।

উচ্চ কার্যকরী প্রতিবন্ধী:এই ধরনের অটিজম রোগিরা Asperger সিন্ড্রোম হিসাবে পরিচিত। তাদের মধ্যে অসাধারণ দক্ষতা ও প্রতিভা পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে অঙ্ক এবং সঙ্গীতে পারদর্শী হতে দেখা যায়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের প্রতিভা তাদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।

সেভেন্ট প্রতিবন্ধী: এই ধরনের প্রতিবন্ধী রোগীদের কিছু লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। বহির্বিশ্বের জনসাধারণ ও সামাজিক অনুমোদনের মান পূরণের ক্ষেত্রে এই প্রতিবন্ধীর সঙ্গে কিছুটা অসুবিধা হতে পারে। তবে তারা অসাধারণ দক্ষতা ও প্রতিভা প্রদর্শন করে থাকে, যা তাদের ফটোগ্রাফিক মেমরি ব্যবহার করতে সক্ষম করে। এই প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা শিশুদের প্রতিভাধর হিসাবে মূল্যায়ন করা হয়।

অপটিক্যাল প্রতিবন্ধী: এই ধরনের প্রতিবন্ধী রোগীরা সম্পূর্ণ অটিস্টিক। এই প্রতিবন্ধী শিশুরাও সাধারণত অনেক জ্ঞানী এবং বুদ্ধিজীবী ধরনের হয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে এই প্রতিবন্ধীরা তাদের সামাজিক যোগাযোগমূলক আচরণ ও তাদের অধিকার ভুলে যায়, তবে উচ্চ কার্যকরী অটিজমসহ শিশুদের ক্ষেত্রে আচরণ ও যোগাযোগের সামাজিকভাবে উপযুক্ত উপায়গুলো শেখানো যেতে পারে।

প্রতিবন্ধী প্রতিরোধে করণীয়: প্রতিবন্ধীর যেহেতু কোনও নিরাময় নেই, তাই সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই এটি প্রতিরোধ করতে হবে। পরিবারে কারো প্রতিবন্ধী অথবা কোন মানসিক এবং আচরণগত সমস্যা থাকলে, পরবর্তী সন্তানের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে পরিকল্পিত গর্ভধারণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় অধিক দুশ্চিন্তা না করা, পর্যাপ্ত ঘুম, শিশুর সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদি ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

এছাড়া প্রতিবন্ধী শিশুদের পিতামাতারা অনেক ধৈর্যশীল হতে হবে। তাদের প্রতি সুন্দর সহজ, সরল ব্যবহার করতে হবে।

হোমিও প্রতিকার

প্রতিবন্ধী শিশুদের পিতা-মাতার প্রতি আহ্বান থাকবে, তারা যেন কালবিলম্ব না করে তাদের সন্তানকে কোন হোমিও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসাধীনে ন্যস্ত করেন,হোমিওপ্যাথি হলো একটি জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি, এই পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এবং সম্পূর্ণ উপসর্গের উপর ভিওি করে ঔষধ নির্বাচন করা হয়,সব লক্ষণ এবং উপসর্গ মুছে ফেলে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যের ফিরে যাবার একমাএ উপায় এটি হোমিওপ্যাথির উদ্দেশ্য প্রতিবন্ধী রোগীর অন্তনিহিত কারণ এবং ব্যক্তিগত সংবেদনশীলতা মোকাবেলার মাধ্যমে আরোগ্য করা,রোগের কারণ অনুভূতি ব্যক্তিস্বাতন্ত এবং হ্রাস বৃদ্ধির উপর ভিওি করে ঔষধ নির্বাচন করা হয়, আর সঠিক ভাবে নির্বাচন করতে পারলে তাহলে আল্লাহর রহমতে হোমিওপ্যাথিতে প্রতিবন্ধী রোগীর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।

পরিশেষে বলতে চাই, আমাদের সমাজে নারীরা এমনিতেই বৈষম্যের শিকার। প্রতিবন্ধী নারীগণ সেক্ষেত্রে দ্বিগুন বৈষম্যে আক্রান্ত। এছাড়াও শারীরিক, মানসিক, যৌন নির্যাতন ও অবহেলার ঝুঁকিও তাদের বেশী। প্রতিবন্ধী শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধদের সেক্ষেত্রে বিশেষ সুরক্ষা প্রয়োজন। শিক্ষানীতি ও স্বাস্থ্যনীতিতে ইতিমধ্যে প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি আমাদের আন্তরিক হতে হবে। প্রতিবন্ধীদের যাতে কেউ সমাজের বোঝা হিসেবে ভাবতে না পারে সেজন্য তাদেরকে কোনো একটি বিশেষ কাজে দক্ষ করে তুলতে হবে এবং কর্মমুখী পেশার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। প্রতিবন্ধী শিশুর মাঝেও অনেক সুপ্ত প্রতিভা থাকতে পারে। তাই খেলাধুলা ও বিনোদনে প্রতিবন্ধী শিশুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে; প্রতিবন্ধী শিশুদের মাঝে ছবি আঁকা, গান, ক্রীড়া বা অন্য কেনো বিষয়ে দক্ষতা থাকলে তা যথাযথভাবে প্রয়োগের সুযোগ করে দিতে হবে।

প্রতিবন্ধী শিশুদের ঠিকমত পরিচর্যা করতে পারলে এরা সমাজকে অনেক কিছু দিতে পারে। আসুন সরকারের পাশাপাশি আমরা সবাই প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেই। তাহলে প্রতিবন্ধী শিশুদের চলার পথ যেমন মসৃণ হবে তেমনি অভিভাবকদের কষ্টও অনেকাংশে লাঘব হবে। প্রতিবন্ধী নাগরিকের সমাজে অন্যসব নাগরিকের মত সমান অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার একটি মানবাধিকার যা সংবিধান স্বীকৃত। তাদের প্রতি সকল বৈষম্য দূরীকরণে সিআরপিডির বাস্তবায়ন জরুরী। এ ব্যাপারে সমাজ, রাষ্ট্র ও জনগণের সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণ প্রয়োজন।

উন্নয়নের মূলস্রোতে এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করা গেলে তারা জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবেন। এ দিবস উপলক্ষে প্রতিবছর সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সভা সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। তাই আসুন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস-২০২৪ কে সামনে রেখে আমরা সকলে মিলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের সামাজিক দায়িত্ব পালন করি এবং সেই সাথে সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ি।

লেখক :চিকিৎসক, কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।