প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত
জাতিসংঘ ১৭তম সংখ্যালঘু ফোরামে কিছু কথা
২০২৪ ডিসেম্বর ০৪ ১৭:০১:৩৯শিতাংশু গুহ
আমি বলি, এ সময়ে নোবেল বিজয়ী ড: মোহাম্মদ ইউনুস বাংলাদেশে রাজত্ব করছেন, তিনি নোবেল বিজয়ী কিন্তু তার সরকারের কর্মকান্ড মোটেই ‘নোবেল’ নয়, বরং তার ছায়াতলে বাংলাদেশ এখন ‘রেডিকেল ইসলাম’-এর অভয়ারণ্য। এ সময়ে খট খট খট আওয়াজ, অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি আপত্তি তুলেছেন। চেয়ারওমেন আমাকে ‘পয়েন্ট অফ অর্ডারে’ থামিয়ে দিলেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধি বললেন, বক্তার বক্তব্য সম্মেলনের সাথে সাযুজ্য নয়, ড: ইউনুস এখন বাংলাদেশের সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, তিনি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। চেয়ারওমেন আমাকে সৌজন্য রক্ষা করে পুনরায় বক্তব্য রাখার সুযোগ দেন। আমি বুঝতে অপারগ যে, আমার বক্তব্যে কি এমন ‘অসুন্দর’ ছিলো? আমি তাই ওপরের কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করি।
আমার বক্তব্যের শুরুতে আমি বলি, সন্মানিত চেয়ারওমেন ইতিপূর্বে আমার আগে এক ডজনের বেশি বাংলাদেশের প্রতিনিধি বক্তব্য রেখেছেন, তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। বর্তমান সরকারের অধীনে শিল্প-সংস্কৃতি, প্রেস-ফ্রিডম ও সংখ্যালঘু অধিকার চাপ ও হুমকির মুখে। এ সরকারের হাতে এর কোনটাই নিরাপদ নয়। এগুলো খতিয়ে দেখতে আমি জাতিসংঘ বাংলাদেশে একটি ‘ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং’ মিশন পাঠানোর আহ্বান জানাই। একই সাথে ঢাকায় জাতিসংঘের একটি মানবাধিকার সংক্রান্ত অফিস খোলার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আমি বলি, এই সরকার অত্যাচারী। দৃষ্টান্ত হিসাবে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার, হিন্দু যুবক রবি দাস হত্যা এবং চট্টগ্রামের হাজারী লেনের ঘটনা তুলে ধরি।
আমি বলি, এই সরকার জাতীয় পতাকার পরিবর্তন করতে চায় এবং সংবিধানকে ইসলামীকরণ করতে উদ্যত। আরো বলি, ড: ইউনুস বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে মরু সংস্কৃতিতে পরিণত করতে চাচ্ছেন, প্লিজ এদের হাত থেকে বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচান। সংখ্যালঘুদের নিশ্চহ্ন হবার হাত থেকে রক্ষা করুন। আমার কথা বলা শেষ হবার সাথে সাথে কোথা থেকে লন্ডনের পুষ্পিতা গুপ্ত দৌড়ে এসে চেয়ারের পেছন থেকে জাপ্টে ধরে বলে, ‘ফাটাইয়া দিছেন’। পাশে বসা জেনেভার অরুন বড়ুয়া ও মন্ট্রিলের দিলীপ কর্মকার এবং ক’জনা বিদেশী উচ্ছাস প্রকাশ করেন। নিষেধ থাকা সত্বেও হাততালি পরে। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধির অহেতুক বিরোধিতা হয়তো এ উচ্ছাসের কারণ।
জেনেভায় দু’দিনব্যাপী জাতিসংঘের ১৭তম সংখ্যালঘু ফোরামের শেষদিনে শেষ অধিবেশনে আমি এসব কথা বলি। সারা বিশ্বের ৫/৬শ’ সরকারি, বেসরকারি ও এনজিও প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন, কথাবার্তা বলেন। জাতিসংঘ এর প্রেক্ষিতে একটি রিপোর্ট তৈরী করে। এবার অন্তত: ২০জন সংখ্যালঘু এতে অংশ নেন, বক্তব্য রাখেন। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির খলিলুর রহমান বক্তব্য রাখেন, এই ভদ্রলোক ও তার স্ত্রী সাজিয়া রহমানের আতিথেয়তা ভুলবার নয়, মিটিং-র পরে তাদের রেস্তোরাঁ ‘সাজনা’ ছিলো আমাদের আড্ডাস্থল। পুষ্পিতা গুপ্ত, দিলীপ কর্মকার, রতন বিশ্বাস ও বাংলাদেশের সবার বক্তব্য ভাল হয়েছে। অধিকসংখ্যক বাংলাদেশির উপস্থিতি জাতিসংঘের দৃষ্টি কেড়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাস প্রথমে পাত্তা না দিলেও পরে এমনকি রাষ্ট্রদূত এসে বক্তব্য দেন্।
এ সম্মেলন ছাড়াও আমরা একটি সাইড-ইভেন্টে বক্তব্য রাখি। জাতিসংঘের সামনে বিখ্যাত ‘ভাঙ্গা চেয়ার’-র পাদদেশে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে একটি মানব বন্ধনে অংশ নেই। এগুলো নিয়ে ভিন্নভাবে লেখার ইচ্ছে আছে। লন্ডন ও ফ্রান্সের দু’টি বড় গ্রূপ জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দেয়। এসব কিছুর পেছনে ছিলো জেনেভার ‘বাংলাদেশ মাইনরিটি এলায়েন্স এন্ড হিউম্যান রাইট্স’ এবং এর নেতা অরুন বড়ুয়ার অক্লান্ত পরিশ্রম, সাথে খলিলুর রহমান।
লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।