ঢাকা, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

মধুমতী নদীর ভাঙনে তিন গ্রামের প্রবেশের রাস্তা বিলীন, জনদুর্ভোগ চরমে

২০২৫ জানুয়ারি ২১ ২০:১৫:০০
মধুমতী নদীর ভাঙনে তিন গ্রামের প্রবেশের রাস্তা বিলীন, জনদুর্ভোগ চরমে

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত সর্বনাশা মধুমতী নদীর ভাঙনে কোটাকোল ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের প্রবেশের রাস্তা বিলীন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গ্রামে প্রবেশের রাস্তা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ওই এলাকার কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষের জীবনে নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্ভোগ ও দূর্দশা। তিনটি গ্রামে প্রবেশের রাস্তা না থাকায় স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা সরেজমিনে ওই এলাকায় যেতে পারছেন না। তিনটি গ্রামের প্রবেশের রাস্তা না থাকায় এলাকাবাসী যারপরনাই দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন নতুন রাস্তা নির্মাণের দাবীতে নদী পাড়ে বিক্ষোভ, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেও সৃষ্ট সমস্যার কোন সমাধান হয়নি। এতে করে, এলাকাবাসীর যে দুর্ভোগ-দূর্দশা তা রয়েই গেছে।

খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই সর্বগ্রাসী মধুমতী নদী তার রুদ্ররূপ ধারণ করে। মধুমতী নদী ভাঙ্গনের করাল গ্রাসে উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের রায়পাশা, করগাতি ও তেলকাড়া গ্রামে প্রবেশের প্রায় ৪ কিলোমিটার মূল কাঁচা রাস্তা নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। এতে করে ওই তিনটি গ্রামে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষের চলাচলের রাস্তা না থাকায় তাদের জীবনে নেমে এসেছে অশেষ দুর্ভোগ। গ্রামে প্রবেশের রাস্তা না থাকায় সাধারণ মানুষের যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তেমনি ওই এলাকার স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। রাস্তা না থাকায় সব থেকে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে ওই তিন গ্রামের অসুস্থ রোগীরা। রাস্তা না থাকায় কোনভাবেই এম্বুলেন্সসহ ইঞ্জিন চালিত কোন যানবাহন ওই এলাকায় প্রবেশ করতে পারে না।

সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে , লোহাগড়া উপজেলার পূর্বাঞ্চলের মধুমতি নদী পাড়ের কোটাকোল ইউনিয়নের অবস্থান। কোটাকোল ইউনিয়নটির অধিকাংশ গ্রাম ভাঙ্গন কবলিত। ফি বছর নদী ভাঙ্গনে এই ইউনিয়নের মানুষের চলাচলের জন্য নির্মিত পাঁকা সড়ক-রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর এবং ফসলি জমি যেমন বিলীন হয়েছে, তেমনি সর্বনাশা মধুমতি নদীর ভাঙ্গনে এই এলাকার কয়েক হাজার মানুষ বসতবাড়ি হারিয়ে মানবেতর ভাবে জীবনযাপন করছে বাধ্য হচ্ছে।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে আরও জানা গেছে , মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদী ভাঙ্গন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। মধুমতী নদীর তেড়কাড়া পয়েন্টে ইজারা ছাড়াই বালু উত্তোলন করছে বালুখেকোরা। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব বালু খেকোরা ইজারাকৃত এলাকা থেকে বালি উত্তোলন না করে অপেক্ষাকৃত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করায় নদী ভাঙ্গন পিছু ছাড়ছে না। দীর্ঘদিন ধরে তেড়কাড়া পয়েন্টসহ অন্যান্য এলাকা থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর তলদেশে ভূকম্পনের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ভাঙ্গন দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে।

তেলকাড়া গ্রামের মো. রেজাউল শেখের ছেলে ভ্যানচালক ফারুক শেখ, করগাতি গ্রামের ওহাব খানের ছেলে নাসির খান, রায়পাশা গ্রামের হাসেম খানের ছেলে মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. মোশাররফ হোসেন, তেলকাড়া গ্রামের পটু মিয়ার ছেলে কৃষক দিদার মিয়া ও করগাতি গ্রামে ভিটেমাটি হারা হেমায়েত হোসেনের স্ত্রী পাচি বেগমসহ অনেকে বলেন, অবৈধ ভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন ও মধুমতী নদী ভাঙ্গনের ফলে আমাদের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। আমাদের মাথা গোঁজার আর কোন ঠাঁই নাই। এমনকি এখান থেকে উপজেলা এবং জেলা শহরে যাতায়াতের কোন রাস্তা নেই। গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে পায়ে হেটে চলাচল করতে হয়। আমাদের কোন আত্মীয়-স্বজন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য কোন যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই। ফলে সেই অসুস্থ ব্যক্তিদেরকে কাঁধে অথবা কোলে করে প্রায় চার কিলোমিটার পথ হেটে যেতে হয়।

বিগত দিনে নদী ভাঙ্গন রোধের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে স্হায়ী কোন বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হয় নাই। যখন নদী ভাঙ্গন শুরু হয়, তখন ভাঙ্গন রোধে সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে তাদের দায়িত্ব শেষ করে। কিন্তু কিছুদিন পরে তা আবার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। আর এভাবেই চলছে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধের কাজ।

এ বিষয়ে নড়াইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো: শফিউল্লাহ বলেন, নড়াইল জেলার পূর্ব সীমানায় ভাঙ্গন কবলিত যে পয়েন্ট গুলো রয়েছে, সে সব পয়েন্টে ভাঙ্গনরোধের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে পরবর্তী কাজ শুরু করা হবে।

(আরএম/এসপি/জানুয়ারি ২১, ২০২৫)