প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত
ডাক্তার আসিবার পূর্বে গরু মারা গেলো, অতঃপর যা ঘটলো
২০২৫ মার্চ ৩০ ০০:১৯:২৮
রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর : ফরিদপুরের কানাইপুরে একটি অসুস্থ গর্ভবতী গরু মারা যাওয়াকে কেন্দ্র করে জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন ডা.পরিতোষ চন্দ্র মিত্রকে ফিজিক্যাল হ্যারাজমেন্ট ও হেয় প্রতিপন্ন করে তাঁকে প্রায় দুই ঘন্টার বেশি সময় অবরুদ্ধ করে রাখে স্থানীয় জনতা বলে অভিযোগ উঠেছে।
এসময় কানাইপুর ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি পলাশ সরদার ও স্থানীয় তিন ইউপি মেম্বার- সুমন মেম্বার, কামাল মেম্বার, আলম মেম্বার গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে, বিক্ষুদ্ধ জনতাকে শাস্ত করে ব্যাপারটি সমাধানের চেষ্টা করেন বলে জানান তাঁরা।
শনিবার (২৯ মার্চ) ফরিদপুর সদরের কানাইপুরে খাসকান্দি গ্রামে গাভিটির মালিক ভুক্তভোগী বিধান মন্ডলের বাড়িতে দুপুর ১টা ২০ মিনিট থেকে বেলা ৩টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত অবরুদ্ধ থাকেন ওই ভেটেরিনারি সার্জন।
এদিকে, ছোট্র একটি বাছুর অবস্থায় গাভীটি কিনে তিল তিল করে বড় করে, আট মাসের গাভিন (গর্ভবতী) অবস্থায় সখের গাভীটি মারা যাওয়ায়, স্থানীয় বিধান মন্ডলের পরিবারে গভীর শোকের আবহ সৃষ্টি হয়েছে। বিধানের পরিবারের প্রায় সব সদস্যই সখের গাভীটির জন্য অশ্রু বিসর্জন দিয়েছেন।
এ বিষয়ে কানাইপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক ও গরুটির মালিক ভুক্তভোগী বিধান মন্ডল শোকাবহ কন্ঠে অভিযোগ করেন, 'সকাল নয়টার দিকে গাভীটির শারিরিক অবস্থা খুবই খারাপ জানিয়ে ফরিদপুর সরকারি পশু হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. পরিতোষ বাবুকে ফোন করলেও তিনি সময়ের গুরুত্ব না দিয়ে কানাইপুরের খাসকান্দিতে উপস্থিত হন দুপুর দেড়টার একটু আগে। ততোক্ষণে আমার সখের গাভিটি মারা গেছে বলে আবারও কান্নায় ভেঙে পড়েন বিধান। চিকিৎসক আসতে কালক্ষেপণ না করলে হয়তো গর্ভবতী গাভীটিকে বাঁচানো যেতো বলেও গভীর আফসোসের সহিত জানান তিনি।
এদিকে, অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় ভেটেরিনারি সার্জন ডা. পরিতোষ চন্দ্র মিত্রকে ফোন করে না পেয়ে, ওই সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা কানাইপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি পলাশ সরদারের ফোনে ওই ভেটেরিনারি চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করেন এই প্রতিবেদক। এসময় তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করে ডা. পরিতোষ চন্দ্র মিত্র উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, 'ওই গরুটি শুক্রবার (২৮ মার্চ) দিবাগত রাত ১০টার দিকে অসুস্থ হলে অত্র এলাকার দায়িত্বে থাকা আমাদের সরকারি এআই শিমুল গরুটিকে চিকিৎসা দিয়েছেন। শনিবার (২৯ মার্চ) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে গাভীটির গুরুতর অসুস্থের খবর জানতে পেরে এআই শিমুলকে বিষয়টি অবগত করতে বলি। শিমুলের সাথে যোগাযোগ করলে সে আমাকে জানায়- অবস্থা তাঁর কন্ট্রোলের বাইরে, খুবই গুরুতর ও মুমূর্ষু, আমাকে এসে দেখে যেতে হবে। তখন আমি যেতে সম্মতি জানিয়ে বলি, হাতের কাজ যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত করে একটু অফিসে ঢুকে আমি আসবো, তবে একটু দেরি হতে পারে।
ইচ্ছেকৃত কোন কালক্ষেপণ করেননি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, বাইকের ত্রুটি সমাধান করে আমার আসতে দুপুর ১টা ২০ বেজে যায়। এসে দেখি গাভিটি মারা গেছে। ভুক্তভোগী শোকাহত পরিবারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে আমার অবস্থান থেকে কোন অবহেলা করিনি বলেও অবগত করি। অতঃপর তাঁরা আমাকে দুই ঘন্টারও বেশি সময় অবরুদ্ধ করে রেখে ফিজিক্যাল হ্যারাজমেন্টসহ যা যা করা সম্ভব তা প্রায় সবই করেছেন। এগুলো ঠিক না এবং তা ঠিক হয়নি বলেও অভিমত প্রকাশ করেন ওই পশু চিকিৎসক।
এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা পলাশ সরদার উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, 'শনিবার সকাল নয়টা থেকে ডা. পরিতোষ বাবু এইতো আসছি, আর আধা ঘন্টা, আর এক ঘন্টা ইত্যাদি বলে বলে কালক্ষেপণ করেছেন। আমরা মনে করি তাঁর অবহেলা ও পেশাদারিত্ব মনোভাবের অভাবেই গাভীটি মারা গেছে। রোগি মারা যাওয়ার পর ডাক্তার এসে লাভ কি, বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন পলাশ সরদার।
ভেটেরিনারি সার্জন ডা. পরিতোষ চন্দ্র মিত্রকে অবরুদ্ধ, হেয় প্রতিপন্ন ও ফিজিক্যাল হ্যারাজমেন্টের অভিযোগের বিষয়ে পলাশ সরদার আরো বলেন, 'স্থানীয় জনতা তাঁর কাছে সময় ক্ষেপণের জবাবদিহিতা চেয়ে চিল্লাচিল্লি করলেও, কেউ তাঁকে কোন প্রকার হেয় করেনি। আর গায়ে হাত দেওয়ার কথা তো প্রশ্নই আসে না।
তিনি আরো জানান, আমি ও আমার সাধারণ সম্পাদকসহ স্থানীয় আরো তিনজন ইউপি মেম্বার ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। ভেটেরিনারি সার্জন ডা. পরিতোষ বাবুর সাথে কথাবার্তা বলে আমি নিজে তাঁকে কানাইপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এসেছি।' তবে, ওই চিকিৎসক যে কাজটা করেছেন সেটার জন্য তাঁর শান্তি হওয়া উচিত ছিলো বলেও মন্তব্য করেন ওই তরুণ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার প্রশাসনের কাছে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করবেন বলে জানান। অপর দিকে, তাঁকে অবরুদ্ধ করে হেয় প্রতিপন্ন, শারিরিক ও মানসিক হেনস্তার কথা উল্লেখ করে আইনি পদক্ষেপ নিবেন বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. পরিতোষ চন্দ্র মিত্র।
(আরআর/এসপি/মার্চ ৩০, ২০২৫)