ঢাকা, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

প্রচ্ছদ » ফিচার » বিস্তারিত

নববর্ষ উৎসবকে সামনে রেখে নড়াইলে মৃৎশিল্পীদের কর্মব্যস্ততা

২০২৫ এপ্রিল ০৯ ১৪:১০:৪৪
নববর্ষ উৎসবকে সামনে রেখে নড়াইলে মৃৎশিল্পীদের কর্মব্যস্ততা

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : পহেলা বৈশাখ সমাগম। নববর্ষ ঘিরে নড়াইলের বিভিন্নস্থানে বৈশাখী মেলা বসে। এ মেলায় মাটির তৈরি তৈজসপত্রের বেশ চাহিদাও রয়েছে। তাই বাহারি সব মাটির খেলনা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার মৃৎশিল্পীরা। চৈত্রের এই মাঝামাঝি সময়ে মাটির তৈরি খেলনায় শেষ মুহূর্তে রংতুলির আঁচড় দিচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা।

সম্প্রতি সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের রতডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অর্চনা রানী পাল। একটি কাঠের পিড়িতে বসে আপন মনে তার নিপূণ হাতের শৈল্পিক ছোঁয়ায় তৈরি করছেন এক একটি মাটির সামগ্রী। যার মধ্যে রয়েছে, মাটির হাঁড়ি-পাতিল, এসএম সুলতান, কাজী নজরুল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ বিভিন্নজনের প্রতিকৃতি। নানা প্রজাতির পাখি, দোয়েল, ময়না, টিয়া পুতুল, হাতি, ঘোড়া, হাঁস মুরগী, নৌকা, ফুল, মাটির ব্যাংক, প্লেট, মগ, গ্লাস, চায়ের কাপ, পিঠা তৈরির ছাঁচ, নানা জাতের ফুল, ফল,ফুলদানি।

এ সময় অর্চনা পাল বলেন, পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে।এই মেলায় শখের বসে অনেকেই মাটির সামগ্রী কেনেন। তাই চৈত্রের এই মাঝামাঝি সময়ে আমাদের কিছুটা কর্মব্যস্ততা বাড়ে।

এ কাজের জন্য প্রয়োজন হয় এঁটেল মাটি। কিন্তু এখন মাটির অভাব। তার ওপরে রঙের দাম বাড়তি। সে অনুযায়ী পণ্যের দাম অতটা বাড়েনি। এসব মাটির খেলনা ২০ থেকে ২০০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হয়।

রতডাঙ্গা গ্রামের তারক পাল বলেন, বছরে এই একটা উৎসব ঘিরে আমাদের অনেক আশা থাকে। এমনিতে সারা বছর মৃৎশিল্পের তেমন চাহিদা থাকে না। এখন আর মাটির জিনিসের তেমন কদর নেই। সারা বছর টানাপোড়েনে চলতে হয়। পূর্বপুরুষের পেশা ধরে রাখার চেষ্টা মাত্র। বৈশাখ মাস এলে মেলায় মাটির তৈরি খেলনা ও সামগ্রীর চাহিদা থাকে। তাই এই সময়টায় ভালো আয় হয়।

মৃৎশিল্পী রাজকুমার পাল জানান, বাজারে এখন মাটির তৈরি পণ্যের কদর অনেক কম। প্লাস্টিক পণ্যের মূল্য কম হওয়ায় প্লাস্টিকের কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে ক্রেতারা । ঐতিহ্যের এই শিল্পের প্রতি মানুষের দৃষ্টি দিন দিন কমে যাচ্ছে। তবে পহেলা বৈশাখে জেলায় বিভিন্ন জায়গা বৈশাখী মেলা বসে। তাই এ সময় টা আমাদের কাজটা বেশি করা হয়।

একই গ্রামের জগদীশ পাল ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, বাপ-দাদার পেশাকে টিকিয়ে রাখতে আমরা এ পেশার সঙ্গে জড়িত। বেচাকেনা কম বিধায় এ কাজ করতে অনাগ্রহ সকলের। ছেলে-মেয়েকে এ পেশায় আনতে চাই না । আর এর মূল কারণ বেচা-বিক্রি কম। মানুষ এখন মাটির তৈরি জিনিসের চেয়ে মেলামাইন, প্লাস্টিককে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।

লোহাগড়ার শহরের কুন্দশী এলাকার তপন পাল বলেন, ' নববর্ষকে ঘিরে আমাদের পালপাড়ায় সকলের কর্ম ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। দিনরাত কাজ চলছে। আশা করছি, নববর্ষের বেচাকেনা ভালো হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যদি এ পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে যথাযথ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেন, তাহলে এ মৃৎশিল্পের হারিয়ে যাবে।

নড়াইল জেলা বিসিক কার্যালয়ের উপ ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো.সোলায়মান হোসেন বলেন, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অনবদ্য রূপ মৃৎশিল্প। এর সঙ্গে একদিকে জড়িয়ে আছে জীবনের প্রয়োজন আর অন্যদিকে নান্দনিকতা ও চিত্রকলার বহিঃপ্রকাশ। যে কারণে এই শিল্প বাঙালির নিজস্ব শিল্প, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের অংশ। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বিসিকের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।

(আরএম/এএস/এপ্রিল ০৯, ২০২৫)