ঢাকা, শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

প্রচ্ছদ » দেশের বাইরে » বিস্তারিত

ভারত-পাকিস্তান সংঘাত

নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই প্রান্তে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে মানুষ

২০২৫ মে ১০ ১৩:৪২:৫০
নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই প্রান্তে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে মানুষ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত শুরু হওয়ার পর গত তিনদিনে নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই পাশের বিভিন্ন শহর এবং গ্রামে বসবাস করা সাধারণ মানুষের দিন কাটছে আতঙ্কে। বহু মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুদেশের শহর এবং গ্রামগুলোতে বসতবাড়ির মধ্যে গোলা পড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে অনেক বাড়ি। কোথাও আবার পুরো শহরই প্রায় খালি করে মানুষ পালিয়ে গেছে।

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরি আর কুপওয়ারা থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ওই অঞ্চলের স্থানীয় মানুষ সীমান্তের অপর দিক থেকে গোলাগুলির ঘটনায় অভ্যস্ত। তবে কুপওয়ারা ক্রালপোরা গ্রামের মানুষ কখনো দেখেননি যে, তাদের গ্রামে গোলা এসে পড়েছে। ওই গ্রামের বাসিন্দা তানভির আহমেদ বলেন, জীবনে এই প্রথম আমাদের গ্রামে গোলা এসে পড়লো।

শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে তাদের বাড়িতে একটি গোলা এসে পড়ে। এতে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তার একটি ট্রাক ও মাটি কাটার যন্ত্র ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে তিনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন কারণ পরিবারের সবাই মাত্র ৫০০ মিটার দূরে একটা আশ্রয় কেন্দ্রে চলে গিয়েছিলেন। তাদের গ্রামে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য কোনো বাঙ্কার বানানো হয়নি।

উরি যেন এক ভূতুরে শহর
উরি শহরের বাসিন্দারাও বলছেন, এত বেশি সংখ্যায় গোলা পড়তে তারা কখনো দেখেননি। বিবিসিকে পাঠানো এক টেলিফোন ভয়েস মেসেজে উরির বাসিন্দা নিসার হুসেইন বলেন, আমরা একটা মসজিদের বেসমেন্টে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এটা ১০ বছর আগে বানানো হয়েছে। সকালে যখন বাড়ির দিকে যাই দেখতে পাই আমার বাড়ির আশপাশেই তিনটা গোলা পড়েছে। বাড়ির কিছুটা অংশ ভেঙ্গে গেছে।

একই দৃশ্য দেখেছেন বিবিসির আরেক সংবাদদাতা ডেভিনা গুপ্তা। তিনি ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলার সুরানকোটে গিয়েছিলেন। তিনি বলছেন, নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ব্যাপক গোলাবর্ষণের ফলে পুঞ্চ জেলার বহু মানুষ এখন ঘরছাড়া।

বুধবার মাঝরাতের পর পাকিস্তানে ভারতীয় হামলার পর থেকে গোলাবর্ষণ বহুগুণ বেড়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। সোবিয়া নামের এক বাসিন্দা বিবিসিকে বলেছেন, হঠাৎ একটা বিস্ফোরণের শব্দ শুনে একমাসের বাচ্চাটাকে কোলে নিয়েই দৌড়াই আমি।

সুরফিন আখতারের বাড়ির সামনেই একটা গোলা এসে পড়েছিল। তারপরেই ঘর থেকে পালিয়েছেন তারা। তিনি বলেন, একটাও গাড়ি পাওয়া যায়নি। বহুদূর পর্যন্ত হেঁটে যেতে হয়েছে। এত গোলাবর্ষণ হচ্ছিল যে, পুরো রাস্তা আমি ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে হেঁটেছি।

অন্য প্রান্তেও একই চিত্র
নিয়ন্ত্রণ রেখার ভারতীয় অংশে যেমন সুরফিন আখতার সারা রাস্তায় কেঁদেছেন, পাকিস্তানের দিকে চাকোঠি গ্রামের বেশির ভাগ কমবয়সী নারী আর বাচ্চারাও একই ভাবে সারারাত কেঁদেছে। ওই গ্রামের বাসিন্দা কিফায়াত হুসেইন জানান, তারা জীবনে এত বেশি গোলাবর্ষণ দেখেননি। এর আগে সবচেয়ে বেশি গোলাবর্ষণ হয়েছিল ১৯৯৯ সালে।

তিনি জানিয়েছেন, ৬ তারিখ রাতটা তিনি পরিবারকে নিয়ে একটা সিমেন্ট ঢালাই করা বাথরুমে বসে কাটিয়েছেন। চাকোঠিসহ পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বেশিরভাগ গ্রামের বাড়িতে ২০০৫ সালে ভূমিকম্পর পর থেকেই টিনের ছাদ দেওয়া হয়। ওই সব ছাদ গোলাগুলি একেবারেই আটকাতে সক্ষম নয়।

হুসেইন বলেন, গোলাগুলি শুরু হতেই সব বাসন আর অন্যান্য জিনিষপত্র মাটিতে আছড়ে পড়তে শুরু করে এবং বাচ্চারা খুব জোরে কাঁদতে শুরু করে।

পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর থেকে বিবিসির এক সংবাদদাতা জানান, সেখানেও একই ধরনের পরিস্থিতি। নিয়ন্ত্রণ রেখার ধারে নীলম উপত্যকা থেকে সম্প্রতি মুজফ্ফরাবাদ শহরে পরিবার নিয়ে চলে এসেছেন মুহাম্মদ শাগির। বাড়ির সামনে একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার পরেই তিনি পরিবারকে সরিয়ে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, বাচ্চারা বিশেষ করে ছোট শিশুরা বেশ ভয় পেয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা ওদের শুধু বোঝাচ্ছিলাম যে একটা নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাব। রাতটা খুব ভয়াবহ ছিল। পরের দিন সকালেই আমি বাচ্চাদের নিয়ে পাশের শহরে বোনের বাড়িতে চলে যাই। শাহরিয়ার অবশ্য এখনও শহর ছেড়ে যাননি, তবে তার পরিবার ব্যাগপত্র গুছিয়ে রেখেছে, যদি কিছু হয় তাহলে যেন সঙ্গে সঙ্গেই পালাতে পারেন তারা।

তিনি বলেন, আগে থেকে তো বলা যায় না কখন কী হয়। আমরা শহরে থাকি আর চারদিকে প্রচুর সামরিক স্থাপনা রয়েছে। আমরা তো বাড়ি থেকে বের হচ্ছি না, এমনকি বাজারেও যাচ্ছি না।

(ওএস/এএস/মে ১০, ২০২৫)