প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে গেলো?
২০২৫ মে ১১ ১৭:১৮:২৬
শিতাংশু গুহ
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে গেলো। মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এর ঠিক আগেই বলেছিলেন যে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ নিয়ে তাঁদের মাথাব্যথা নেই? শুক্রবার (৯ মে) রাতে এক টকশো-তে বলেছিলাম যে, ভ্যান্স ওকথা বললেও তলে তলে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ বন্ধের জন্যে ওকালতি করছে। পাকিস্তান দীর্ঘদিনের মিত্র, যুক্তরাষ্ট্র জানে পাকিস্তান সন্ত্রাসের মদতদাতা, তবু পাকিস্তান ফোন করলে যুক্তরাষ্ট্র সাড়া দেয়। মার্কিন পরামর্শে পাকিস্তানী প্রধানমন্ত্রী কল দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লিখেছেন: “যুক্তরাষ্ট্র রাতভর দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করে। আমি আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি যে, উভয়পক্ষ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। উভয়পক্ষকে ধন্যবাদ”। ভারত প্রায় সাথে সাথেই বলেছে, পাকিস্তান দিল্লীকে টেলিফোন দেয়, আমরা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছি’।
শনিবার ১০ মে ২০২৫ সকালে মার্কিন ষ্টেট ডিপার্টমেন্ট বিদেশমন্ত্রীর একটি বিবৃতি প্রকাশ করে, এতে তিনি বলেন: “গত ৪৮ ঘণ্টা ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং আমি (মার্কো রুবিও) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও শাহবাজ শরীফ; বিদেশমন্ত্রী শুভ্ৰমনিয়াম জয়শঙ্কর, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান অসীম মুনির, উভয় দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও অসীম মালিক-সহ ভারত ও পাকিস্তানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে কথাবার্তা বলি ও আলোচনা চালিয়ে যাই। আমি আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি যে, উভয় দেশ অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ এবং একটি নিরপেক্ষে দেশে বসে আলোচনায় সম্মত হয়েছে। আমরা দুই দেশের নেতাদের শান্তির পথ বেছে নেয়ার তাঁদের বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করি’।
এবার ভারতীয়রা ভীষণভাবে যুদ্ধের পক্ষে ছিলো, তাঁরা চাইছিলো এ যুদ্ধ যেন ‘শেষযুদ্ধ’ হয়, অনেকেই ভাবছিলো এবার ভারত ‘পিওকে’ (পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর) দখল নেবে, এমনকি ভারত বলছিলো, শান্তির একমাত্র পথ পুরো কাশ্মীরের ভারত অন্তর্ভুক্তি। আগাগোড়া আমার বক্তব্য ছিলো পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ হচ্ছেনা, এবং পিওকে দখল নিতে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ হতে হবে। অনেক ভারতীয় মনে করেন, ১৯৪৮-এ সুবিধাজনক অবস্থায় থেকেও জওহরলাল নেহেরু সমগ্র কাশ্মীর দখল না নিয়ে ভুল করেছেন, ১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধী একই ভুল করেন, ২০২৫-এ মোদী একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করলেন। আমার মতে ভারতের সাথে যুদ্ধ বন্ধ মানে এই নয় যে, আফগান ও বালুচ সীমান্তে শান্তির বাতাস বইছে?
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে না পারলেও ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধ করতে সফল হলেন। ট্রাম্প বহুত চেষ্টা করেও পুতিনকে বাগে আনতে পারছেন না, মোদিকে পেরেছেন। মোদিকি কি ভুল করেছেন? না, তিনি জানেন, ভারতকে সামনে এগিয়ে নিতে শান্তির প্রয়োজন, যুদ্ধ হলে ভারতের অগ্রগতি থমকে দাঁড়াবে। মোদির ভারত এখন বিশ্ব দরবারে সমাদৃত, ব্যক্তি মোদী এখন বিশ্বের ৪ জন রাষ্ট্রনায়কের একজন। তদুপরি পাকিস্তান এমনিতেই ভেঙ্গে পড়ছে, আফগান, বেলুচ, পশতুন, সিন্ধ সামলাতে পাকিস্তানকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কেজানে টেবিলের তলায় কি সমঝোতা হয়েছে, পাকিস্তান কি বাংলাদেশ থেকে হাত গুটাবে?
আইএমএফ-র ঋণ পেতে পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন ছিলো। গান্ধীবাদী ভারতের ‘দয়ার শরীর’- তাই তাঁরা যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়? যদিও ভারতীয়রা চাইছিলো পাকিস্তান হউক উপমহাদেশের ‘গাঁজা’। দাদারা, একটু ধৈর্য্য ধরুন, পাকিস্তান ও ড: ইউনূসের বাংলাদেশ ‘গাঁজা’ হতে উন্মুখ হয়ে বসে আছে, আপনারা বরং ঢাকার দিকে নজর দিন্। জানি বাংলাদেশকে আপনারা ভালবাসেন, তাই যদি হয়, এবার বাংলাদেশ বাঁচান, বাংলাদেশের গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ান, সবার অংশগ্রহণে উন্মুক্ত একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা করুন, এবং ১৯৭১ সালের মতো নব্য রাজাকারদের মুখোশটা আর একবার উন্মোচন করে দিন্, ড: ইউনুসকে পালাতে সহায়তা করুন, এবং জঙ্গীবাদ মাটির সাথে মিশিয়ে দিন্।
বড়দেশ হিসাবে ভারতের দায়িত্ব অনেক বড়, ‘অপারেশন সিঁদুর’ ভারতকে অনেকদূর সামনে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। কারণ উপমহাদেশের নারীশক্তি এটি পছন্দ করেছে, কর্নেল সোফিয়া কোরেশীর মত মহিলারা সামনে এগিয়ে এসেছে। তাঁরা দেখছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান বা ইরানে মহিলাদের যেভাবে ঘরবন্দী করার পায়তারা চলছে, সেখানে ভারত ‘দ্রৌপদী’র সন্মান রক্ষায় একটি যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছে, শত্রুর বুকে ক্ষেপণাস্ত্র বসিয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানের ‘মুসলিম’ বটিকা এবার কেউ খায়নি, শুধু তুরস্ক ও বাংলাদেশের ‘তৌহিদী জনতা’ ছাড়া কেউ তেমন সাড়া দেয়নি। ইসলামী সন্ত্রাসীদের বেছে বেছে ‘হিন্দুহত্যা’ বেশিরভাগ মুসলমান প্রত্যাখ্যান করেছে। এ যুদ্ধে এটা ভারতের বিজয়।
লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।