প্রচ্ছদ » দেশের বাইরে » বিস্তারিত
মার্কিন নীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত, চাপে নেতানিয়াহু সরকার
২০২৫ মে ১৫ ১৪:০১:৪৬
আন্তজার্তিক ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চলমান মধ্যপ্রাচ্য সফরে ইসরায়েলকে উপেক্ষা করা এবং একের পর এক চমকপ্রদ ঘোষণা ইসরায়েলি রাজনৈতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
দেশটির ডানপন্থী সরকার এই সপ্তাহজুড়ে কার্যত কূটনৈতিক নীরবতা পালন করেছে।
এই সফরে ট্রাম্প ইসরায়েলকে বাদ দিয়ে কাতারসহ উপসাগরীয় ধনী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বিশাল অঙ্কের বাণিজ্য চুক্তিতে মনোযোগ দিয়েছেন, যা ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের মিত্রতা এবং কৌশলগত গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে, কাতারকে হামাসকে সহায়তা করার অভিযোগে ইসরায়েল বরাবরই সমালোচনা করে এসেছে।
সফরের আগে থেকেই ইসরায়েল উদ্বিগ্ন ছিল পরমাণু চুক্তি ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান আলোচনা এবং ইয়েমেনে হুতিদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা বন্ধের মার্কিন সিদ্ধান্ত নিয়ে। কারণ, হুতি গোষ্ঠী ইরানের মদদপুষ্ট এবং সম্প্রতি ইসরায়েলের দিকে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
এরপর এক নতুন ধাক্কা আসে, যখন যুক্তরাষ্ট্র গাজায় হামাসের হাতে বন্দি থাকা শেষ জীবিত মার্কিন নাগরিক এডান আলেকজান্ডারকে ফিরিয়ে আনার জন্য হামাসের সঙ্গে চুক্তি করে। ইসরায়েল তা কেবল নিরব দর্শক হিসেবে প্রত্যক্ষ করে।
পরবর্তী পর্যায়ে ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন এবং দামেস্কের নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বান জানান— যে সরকারকে ইসরায়েল জিহাদি-ঘেঁষা বলে মনে করে।
এমনকি রিয়াদে ট্রাম্প যখন হুতিদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির কৃতিত্ব দাবি করছিলেন, তখনই ইসরায়েলের জেরুজালেম ও তেলআবিবসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্কতা সাইরেন বেজে ওঠে।
তবে ট্রাম্প দাবি করেন, এই সফর ইসরায়েলের জন্যও ইতিবাচক হবে। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের এসব দেশের সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক, তা ইসরায়েলের জন্য ভালো।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখনো পর্যন্ত সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি, কেবল এডান আলেকজান্ডারকে মুক্ত করার জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তবে দেশের ভেতরে একটা বিস্তৃত জনমত গড়ে উঠছে যে ইসরায়েল, বিশেষ করে গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে, এখন মধ্যপ্রাচ্যের নতুন কূটনৈতিক বাস্তবতার বাইরে ছিটকে পড়ছে।
ইসরায়েল হাইয়ম পত্রিকার বিশ্লেষক ইয়োভ লিমোর লিখেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে একের পর এক চুক্তি ও বৈঠকের মাধ্যমে এক নতুন বাস্তবতা তৈরি হচ্ছে, আর ইসরায়েল কেবল দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু অভ্যন্তরীণ চাপ ও আন্তর্জাতিক পরিবর্তনের মুখোমুখি। গাজা যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে তার সরকারে কট্টরপন্থীরা চাপ দিচ্ছে, আর সাধারণ জনগণ যুদ্ধের ক্লান্তিতে বিরক্ত।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে নতুন বাণিজ্য ও কূটনৈতিক চুক্তিতে মনোযোগী, যেখানে ইসরায়েল আগের মতো অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। ট্রাম্প গাজা যুদ্ধ ও ইরান ইস্যুতে নেতানিয়াহুর কঠোর অবস্থানে অসন্তুষ্ট।
যদিও ইসরায়েল দোহায় যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অংশ নিচ্ছে, বাস্তবে গাজায় হামলা আরও জোরদার হয়েছে। নেতানিয়াহু বলছেন, হামাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না, বরং সরাসরি আলোচনার ওপর জোর দিচ্ছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের নতুন সমীকরণে ইসরায়েল প্রথাগত প্রভাব হারাতে বসেছে।
(ওএস/এএস/মে ১৫, ২০২৫)