প্রচ্ছদ » পাঠকের লেখা » বিস্তারিত
অল্প কথার গল্প এবং
২০২৫ মে ১৫ ১৭:৪৪:২৬.jpg)
রহিম আব্দুর রহিম
নূর- ই আলম সিদ্দিক নতুন নামের আমার এক প্রাক্তন নাট্যকর্মী, সে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাঝে মাঝে দেশের সমসাময়িক ঘটনার উপর লেখালেখি করে। এর কোনটি রসালু, কোনটা ধারালো আবার কোনটা ইতিবাচক, আবার কোনটা নেতিবাচক। কয়েকদিন আগে লেখেছে, 'ছোটোবেলা ফিরে যাবার টিকেট খুঁজছি, টিকেট পেলেই ফিরে যাবো ভাবনাহীন জীবনে। হাফফ্যান্ট পরে; খালি গায়ে খেলবো, সাইকেল চালাবো, গাছে উঠবো, একটা আইসক্রিম কেনার বায়না ধরবো। বৃষ্টি এলেই আম্মার চোখ ফাঁকি দিয়ে ভিজবো, পুকুরে লাফ দেবো। টইটই করে সারাদিন ঘুড়ি উড়াবো। মাঝে মাঝে আম্মা ধরে পিটাবে, মন খুলে কাঁদবো। কিন্তু নির্মম মানসিক অবসাদ ঘিরে ধরবে না। মাথার ভেতর জীবন নিয়ে চিন্তা থাকবে না। নির্ঘুম রাত কেটে যাবে না।আমার একটা টিকিট প্রয়োজন। ছেলেবেলায় ফিরে যাবার জন্য। ‘খুব জরুরী’ ওর এই লেখায় নির্মম মানসিক অবসাদ থেকে বাঁচার আকুতি স্পষ্ট হয়েছে। তবে কেনো এই অবসাদ? তা স্পষ্ট হয়নি। ওকে আমি চিনি এবং জানি, সে শান্তি প্রিয় এক মানবপ্রেমী মানুষ।
সম্ভবত পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের কোন পরিস্থিতি তাকে ভীষণ পিড়া দেওয়ার কারণেই ওর এই লেখাটি উদ্ভব হয়েছে। যাই হোক না কেনো, আমার এই নাট্যকর্মীর অবশ্যই জানা আছে শকুনের মাংস সংগ্রহে গল্পটি-, 'মানুষের মাংস খাবার জন্য শকুনের এক বাচ্চা ওর বাবার কাছে বায়না ধরলো, বাবা বললো ঠিক আছে সন্ধায় ব্যবস্থা করবো। এই বলে সন্ধার দিকে শকুন একটুকরো মাংস এনে বাচ্চাকে দিলো, বাচ্চা মাংস পেয়ে বললো এতো শুকরের মাংস, আমি তো মানুষের মাংস খাবো। এবার শুকুন মরা গরুর মাংস সংগ্রহ করে তার বাচ্চাকে এনে দিল। শুকুনের বাচ্চা রেগে গিয়ে বললো, আমি তোমার কাছে চেয়েছি মানুষের মাংস, তুমি একেক সময়, একেক মাংস দিচ্ছো। এইগুলো বাদ দাও, আমাকে মানুষের মাংস এনে দাও।
এবার শকুন, শুকুর এবং গরুর মাংস মুখে নিয়ে প্রথমে চলে গেলো এক মসজিদে, সেখানে গিয়ে রেখে আসলো শুকরের মাংস। তারপর বাকী গরুর মাংসের টুকরোটি নিয়ে ফেলে আসলো মন্দির আঙ্গিনায়।এর কিছুক্ষণ পরে শুরু হলো দাঙ্গা, মারামারি, খুনোখুনি, লাশ পড়লো কয়েক'শ। এবার শুকুনরা বাপ-বেটা মিলে তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে মানুষের মাংস। বাচ্চা শুকুন তার বাবাকে জিজ্ঞেস করলো, বাবা এত মাংস এখানে কি করে এলো? শকুন বললো, সৃষ্টিকর্তা এদেরকে সৃষ্টির সেরা জীব, মানুষ হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। যদি এই মানুষকে ধর্ম আর রাজনীতির প্যাঁচে ফেলা যায় তবে এরাই সবচেয়ে বড় হিংস্র হয়ে উঠে। একথা শোনে শুকুনের বাচ্চা তার বাবাকে বললো, তুমি ধর্মকে ব্যবহার করলে কেনো? কতগুলো নীরিহ লোক মারা গেল, রাজনীতি করলেই পারতে।
বাবা হেসে উত্তর দিল, তাতেও নিরীহ লোকগুলোই মারা পড়তো! ধর্মটা আবেগের জায়গা এতে ফলাফলটা খুব তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়! তোমার আজই মানুষের মাংস লাগে, তাই চট জলদি কাজটা করেছি। রাজনীতিটা কুটিল এবং জটিল, এটি শুরু হতে অনেক সময় নেয়, তবে একবার শুরু হলে আর থামে না। এবার বাচ্চা বললো, বাবা! তোমার তো অনেক বুদ্ধি! এবার শকুন বললো, আর ধুর! এটা তো আমি মানুষের কাছ থেকেই শেখেছি। এরা যদি কারো ক্ষতি করার চেষ্ঠা করে ব্যর্থ হয়, তবে তারা সহজ রাস্তা হিসেবে হয় ধর্মকে, নয়তো রাজনীতিকে ব্যবহার করে। গল্পের সাথে বাস্তবতা মেলানোর দায়িত্ব পাঠক এর, কারণ, ১৯৫২ থেকে ২০২৫ এর পর্যন্ত আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে, সম্প্রীতির বন্ধনে কলংক লেপন হয়েছে বহুবার। যা আমাদের শুধু জন্য চরম দুঃখজনকই নয়, বাঙালি হিসেবে আমরা দুর্ভাগা এবং নূর-ই আলম সিদ্দিকী নতুনদের অস্থিরতা কাটানোর জন্যই ছোট বেলায় ফিরে আহাজারি একই সূত্রে গাঁথা।
লেখক : নাট্যকার ও গবেষক।