প্রচ্ছদ » পাঠকের লেখা » বিস্তারিত
ফিরে দেখা ঘুরে দেখা, র্যাব বাহিনীর ইতিকথা
২০২৫ মে ৩১ ১৭:৫৭:৫৪.jpg)
রহিম আব্দুর রহিম
সভ্য পৃথিবীতে অপরাধ জগণ্য পাপাচার এবং ঘৃণিত। এরপরও অপরাধীরা তাদের অপরাধ কর্মকান্ড যুগ যুগ ধরে করে আসছে। বাংলাদেশে স্বাধীন হবার পর সবচেয়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ২০০১ থেকে ২০০৩ খ্রিস্টাব্দতে দুঃখজনক অবনতি হয়েছিল। প্রতি সপ্তাহে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সন্ত্রাসী বাহিনীগুলোর মধ্যে গোলাগুলি লেগেই থাকতো। ঢাকার একেকটা এলাকা একেকজন দখল করে চাঁদাবাজি করতো, এযেনো সন্ত্রাসীদের এক রামরাজত্ব।
শুধু সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিনত হয় রাজধানীর অলিগলি তাই নয়। বাংলাদেশের উত্তর -পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ অঞ্চলে বামপন্থীদের গোপন কর্মকান্ড শুরু হয়েছিল সমান তালে, মাথাচাড়া দিয়ে উঠে জিএমবিরা। সেই সময় ক্ষমতাসীন সরকার এই লাজুক পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে নানাবিধ কৌশল অবলম্বন করে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে 'চিতা', 'কোবরা', নামের পুলিশের ইউনিট গঠন করে সন্ত্রাস দমনের চেষ্ঠা চালায়। কোন লাভ হয়নি, পরে গঠন করে অপারেশন ক্লিনহার্ট এতেও ফলাফল শূণ্যের কোটায়। ভয়াবহ অবস্থা মোকাবিলায় সরকারের নীতি নির্ধারক মহলের ভিন্ন চিন্তা, যেকোন মূল্যেই হোক না কেনো! আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেই হবে। যে কথা সেই কাজ, বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করার জন্য ২০০৩ সালে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয়, 'র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ন'। ' র্যাট', যার প্রধান ছিলো একজন উপ-পুলিশ কমিশনার। গঠিত এই বাহিনী, তৎকালীন শীর্ষ সন্ত্রাসী লিয়াকত হোসেনকে গ্রেফতার করে দেশ বিদেশের মিডিয়ায় শিরোনাম হয়ে উঠে।
পরে ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ গঠিত হয় (দি আর্মড পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৭৯ সংশোধনী ২০০৪ অনুসারে) RAB। যা ইউনিট পুলিশের স্পেশাল বাহিনী হিসেবে গঠিত হয়। যার কার্যক্রম শুরু হয় সেই বছরের ১৪ এপ্রিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, আনসার ও ভিডিপি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের চৌকস সদস্যদের নিয়ে গঠিত র্যাব বাহিনীরই হাতেই অবনত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে থাকে এবং আসে।
'বাংলাদেশ আমার অহংকার' এই নীতি ব্যাংকে গঠিত র্যাবের সদর দপ্তর ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত। এই বাহিনীর যেমন সফলতা আছে, তেমনি বিস্তার নেতিবাচক শত কর্মকান্ডের ফিরিস্তি অনেকেরই জানা রয়েছে। এজন্যে বাহিনী দায়ী? নাকি এর নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তি দায়ী? সেটাই বিবেচ্য। র্যাবের নিঃসন্দেহে আমাদের দেশের মত মানুষের শান্তি প্রতিষ্ঠায় দক্ষ এবং সময়োপযোগী বাহিনীর।
হঠাৎ কেনো এই বাহিনী নিয়ে কথা বলছি, এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। বলার মাঝে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে যেমন গর্বের ইতিকথা আছে, তেমনি আছে বিব্রত কিংবা বিড়ম্বনার মত অসংখ্য ঘটনা। এই বাহিনীর সাবেক ডিজি বেনজির আহমেদ পুলিশের ২৮তম মহাপরিদর্শক হিসেবে ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের মহাপরিদর্শক ছিলেন, পরে তিন র্যাবের এর ডিজি হন। এই ডিজি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এবং জহুরুল হক হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। বর্তমান ডিজি একেএম শহিদুর রহমান ডিজি হিসেবে নিয়োগ পান ২০২৪ এর ৭আগস্ট। সৎ, দক্ষ, মানবিক এই ব্যক্তিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন, একেএম শহিদুর রহমানকে ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পুলিশের ফোকালপার্সন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁকে জুলাই ২০২৪ এ অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসেবে পুলিশ টেলিকম রাজারবাগ থেকে পুলিশ অধিদফতরে বদলি করা হয়েছিল। যা কিছুই হোক না, হলের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র হওয়ায় আমিও হল অ্যালামাইন অ্যাসোশিয়ানের সদস্য।
যে কথা বলছিলাম, এই বাহিনীর সবচেয়ে দানব বলে খ্যাত বেনজির আহমেদ এর পুরো বিপরীত পিঠের একেএম শহিদুর রহমান শুধু আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, দেশ এবং জাতির গর্বিত সন্তান। তাঁর মত একজন ব্যক্তিকে একটি বাহিনীর প্রধান করায় সংশ্লিষ্ট বাহিনীর মর্যাদা এবং দায়বদ্ধতা বহুগুণে বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়ন পরবর্তী তাঁর সাথে প্রথম দেখা, চলতি বছরের ৯ এপ্রিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের ডুয়া অডিটোরিয়ামে। এইদিন শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হল অ্যালামাইন এসোসিয়েশন পূর্ণগঠনের লক্ষ্যে এক সাধারণ সভায় আমরা পরস্পরে উপস্থিত হয়েছিলাম। এই দিনের সভায়, ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক জনাব একেএম শহিদুর রহমানকে সামনে রেখে সাবেক বেনজির আহমেদকে যখন বিভিন্ন বক্তরা দানব বলে আখ্যায়িত করে নানাবিধ তিরস্কার, টিপ্পনী কাটছিলেন, তখন এই ডিজির চোখে মুখে ভাসছিল মানবতার ইঙ্গিত। তিনি যখন বক্তব্য রাখেন, তখন স্পষ্টত প্রমাণ হয়েছে একেএম শহিদুর রহমান মানুষের জন্য এক নীতির মানুষ, নিয়মের মানুষ। তাঁর সকল কর্মই হবে কল্যাণের জন্য। এই ভদ্রলোকের সাথে ২৮ মে ২০২৫ এর বিকাল ৪টায়, তাঁর দপ্তর সশরীরে উপস্থিত হয়ে কথা বলেছি নানা বিষয়ে। এতে মনে হয়েছে, দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন এদের দ্বারাই সম্ভব। র্যাবের গৌরব দিনদিন আরও উজ্জ্বল হোক এমন প্রত্যাশা সময়ের দাবী।
লেখক: নাট্যকার ও গবেষক।