ঢাকা, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

প্রচ্ছদ » স্বাস্থ্য » বিস্তারিত

আক্রান্ত পাঁচ শতাধিক

ঈশ্বরদী ইপিজেডে মহামারী রূপ ধারণ করেছে ‘ডায়রিয়া’ 

২০২৫ মে ৩১ ১৮:৩২:৪৩
ঈশ্বরদী ইপিজেডে মহামারী রূপ ধারণ করেছে ‘ডায়রিয়া’ 

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : পাবনার ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) ডায়রিয়া মহামারী রূপ ধারণ করেছে। ইপিজেডের পানি পান করে রেনেসাঁ, নাকানো, এ্যাবা ও রহিম আফরোজ, আইএসএ, স্টিল হেয়ার, অস্কার বাংলাসহ কয়েকটি কোম্পানির প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ। অসুস্থ শ্রমিকরা ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টার ও ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমকেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। গুরুতর কয়েকজনকে রাজশাহী ও পাবনাতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া কম গুরুতর অনেকেই বেসরকারি চিকিৎসকের নিকট হতে চিকিৎসা সেবা গ্রহন করেছে। ঈশ্বরদী হাসপাতালে বিপুল সংখ্যক রোগীর স্থান সংকুলান না হওয়ায় বারন্দায়, করিডোরে এবং সিঁড়িতে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপাতালের সীমিত সংখ্যক ডাক্তার ও নার্স বিপুল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

কর্মরত শ্রমিকরা বলছেন, ইপিজেডে সরবরাহকৃত পানি পান করে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ পানির কারণে ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি মানতে নারাজ। তবুও পানি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) থেকে ইপিজেডে দুপুরে খাওয়ার পর হতে পেটব্যাথা, পাতলা পায়খানা, জ্বর,বমি ও মাথাব্যাথায় একে একে শ্রমিকরা অসুস্থ হতে শুরু করে। তাৎক্ষণিক কিছু শ্রমিক ছুটি নিয়ে চলে আসলেও পরে মধ্যরাত থেকে শুক্রবার এবং শনিবার দুপুরে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শত শত শ্রমিক পেটের ও ডায়রিয়াজনিত সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে ঈশ্বরদী হাসপাতালে ও ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টারে আসেন। অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অনেকেই বাড়ি চলে যান।

শনিবার (৩১ মে) দুপুরে সরেজমিনে ঈশ্বরদী হাসপাতালে দেখা যায়, হাসপাতালে তিল ধারণের জায়গা নেই। স্যালাইন লাগিয়ে রোগীরা বেড সংকুলান না হওয়ায় বারান্দায়, করিডোরে ও সিঁড়িতে শুয়ে আছে। হাসপাতালের রেকর্ড সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত মোট ১১৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। কম গুরুতর আরও অনেকেই আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছে।

এদিকে ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টারে গত ২৯ মে ২৩১ জন এবং ৩১ মে দুপুর পর্যন্ত ৩৫৫ জন রোগী চিকিৎসা গ্রহন করেছে। ইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব রোগীর মধ্যে পেটব্যাথা ও ডায়ারিয়া ছাড়াও অন্য রোগী রয়েছে। রেঁনেসা কোম্পানীর শ্রমিক বিপুল হোসেন জানান, শুধু তাদের কোম্পানীরই প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছে।

ইপিজেড মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক ডা: ফয়সাল হাসান পানিবাহিত রোগে শ্রমিকরা আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করছেন। তিনি বলেন, ঋতু পরিবর্তনের সময় বছরে ২ বার এরকম ঘটনা ঘটে। এটা অস্বাভাবিক নয় বলে তিনি মনে করেন।

এ্যাবা কোম্পানীর শ্রমিক সোহেল রানা ডা: ফয়সাল হাসানের বক্তব্য সঠিক নয় জানিয়ে বলেন, দুই বছর ধরে ইপিজেডে কাজ করছি। এরআগে কখনও বিভিন্ন কোম্পানীর বিপুল সংখ্যক ডায়ারিয়া বা পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হতে দেখিনি। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক কর্মচারী বলেন, আমিও দুই বছর যাবত দায়িত্ব পালন করছি। এই সময়ের মধ্যে এভাবে আক্রান্ত হতে দেখিনি।

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: আলী এহসান ইপিজেডে খাবারের যে সাপ্লাই পানি রয়েছে সেখান থেকে পয়জনিং হয়েছে বলে ধারণা করছেন। তিনি বলেন, ৫০ শয্যার হাসপাতালে ইপিজেডের জ্বর, মাথাব্যাথা, পেটব্যাথা ও ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত বিপুল সংখ্যক রোগী সামাল দিতে ডাক্তার ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বেড না থাকায় বারান্দায়, করিডোরে এমনকি সিঁড়িতেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ইপিজেড কর্তৃপক্ষের কেউ দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে রোগীদের খোঁজখবর নিতে আসেননি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সকালের দিকে মেডিকেল সেন্টারের ডাক্তার ফয়সাল ফোন দিয়েছিল। আর শুক্রবার একটি কোম্পানীর লোক এসে খোঁজ-খবর করেছিল।

জানা গেছে, ইপিজেডে ঈশ্বরদী ওয়াটার সাপ্লাই লি: পানি ট্রিটমেন্ট করে সরবরাহের দায়িত্ব পালন করছে। তারা পদ্মা নদী থেকে এবং ডিপটিউবওয়েলের পানি সংগ্রহ করে ট্রিটমেন্ট করে ইপিজেড এলাকায় পানি সাপ্লাই দেয়। কারখানার বর্জ্যও এই কোম্পানী ট্রিটমেন্টের পর আবার পদ্মা নদীতেই পাঠিয়ে দেয়।

ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিতে আসা অস্কার বাংলা কোম্পানীর শ্যামলী বলেন, কোম্পানী চিকিৎসার কোন দায়িত্ব নিচ্ছে না। যার যার ওষুধ ও স্যালাইন নিজেদের কিনতে হচ্ছে। অসুস্থতার জন্য অনুপস্থিত থাকলে হাফ বেতন দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক এবিএম শহীদুল ইসলাম বলেন, এ ধরণের ঘটনা বিব্রতকর। ঈশ্বরদী ওয়াটার সাপ্লাই লি: এর মাধ্যমে ট্রিটমেন্ট করে বিভিন্ন কারখানায় সাপ্লাই হয়। এসব সাপ্লাই পানি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়াটার। প্রোডাকশনের কাজের জন্য। খাবারের জন্য কোম্পানীর আলাদা ড্রিংকিং ওয়াটারের ব্যবস্থা থাকলেও শ্রমিকরা এই পানি পান করে। এব্যাপারে নিষেধ করা হলেও তারা শোনে না। এরপরও পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। আক্রান্ত শ্রমিকদের সকল টেষ্ট ও ট্রিটমেন্ট ইপিজেড মেডিকেল সেন্টার থেকে করা হবে। আক্রান্তরা যথানিয়মে মেডিকেল লিভ পাবে। এজন্য তাদের যথাযথ কাগজপত্র দাখিল করতে হবে বলে জানান তিনি।

(এসকেকে/এসপি/মে ৩১, ২০২৫)