ঢাকা, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

প্রচ্ছদ » পাঠকের লেখা » বিস্তারিত

জিয়াকে আমি যেভাবে দেখেছি

২০২৫ জুন ০১ ১৭:১৮:১৩
জিয়াকে আমি যেভাবে দেখেছি

শিতাংশু গুহ


প্রেসিডেন্ট জিয়া নিহত হন ৩০ মে ১৯৮১। আমি তখন ঢাকায় দৈনিক সংবাদে। নাকি দৈনিক বাংলারবানীতে চলে এসেছি ঠিক মনে নেই? সারাদেশ সেদিন স্তব্দ হয়ে গিয়েছিলো, এমন নৃশংস মৃত্যু কারো কাম্য নয়, গুজব রয়েছে তাঁর লাশ পাওয়া যায়নি। এর পেছনে কারণ হচ্ছে তদীয় পত্নী বেগম জিয়াকেও লাশ দেখতে দেয়া হয়নি। জিয়া নৃশংসভাবে প্রচুর মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা হত্যা করেছেন, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম সামরিক শাসক, মুক্তিযোদ্ধা হয়েও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তিকে রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছেন, গোলাম আজমকে দেশে ফিরিয়ে এনেছেন, রাজাকার শাহ আজিজ-কে তল্পিবাহক প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন। রাজাকারের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা প্রথম তার আমলেই শোভা পায়।

আজকে বাংলাদেশে মৌলবাদের যে উত্থান ঘটেছে এর জন্মদাতা জিয়াউর রহমান। তিনি ‘জেড ফোর্সের’ প্রধান থাকলেও মুক্তিযুদ্ধকালে মূলত গৃহবন্দী ছিলেন। জিয়ার ওপর মেজর রফিকের একটি বই আছে, পাঠক সেটি পড়ে দেখতে পারেন। জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন না, তিনি বঙ্গবন্ধু’র নামে স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠ করেছিলেন। এটি আমার নিজকানে শোনা কথা, আমি যা শুনেছি, তাই বলছি। খুব সম্ভবত: ২৮শে মার্চ ১৯৭১-এ চাঁদপুরে বসে আমরা এ ঘোষণা শুনি। অবশ্য তার এ ঘোষণা পাঠ জাতিকে উৎসাহিত করেছে। জিয়া জীবদ্দশায় কখনো বলেননি যে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। জিয়া শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ বলতেন, একদা বিখ্যাত সাপ্তাহিক বিচিত্রায় তার একটি বিশাল সাক্ষাতকার আছে। জিয়া ছিলেন ধূর্ত, বঙ্গবন্ধু হত্যায় তিনি জড়িত ছিলেন।

জিয়াউর রহমান দিবারাত্র একটি কালো চশমা পড়তেন, আমার বহু লেখায় আমি প্রশ্ন করেছি, কেউ কি আমায় খোলা চোখে জিয়ার একটি ছবি দেখাতে পারবেন? না পারলে নিজেকে প্রশ্ন করুন, কেন নেই? তাঁর করুন মৃত্যু তার কর্মফল। তার জানাজায় লক্ষলক্ষ মানুষ হয়েছিলো, এর সুফল হিসাবে বিচারপতি সাত্তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হ’ন, যদিও স্বল্প সময়ের ব্যবধানে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এরশাদ পরোক্ষভাবে জিয়া হত্যায় জড়িত ছিলেন, সব প্রকাশ হবার ভয়ে তাই তিনি চৌকষ সেনা অফিসার হিসাবে পরিচিত জেনারেল মনজুরকে বাঁচিয়ে রাখেননি, তাকে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্কে গুলি করে হত্যা করা হয়। জিয়ার আমলে বাংলাদেশে প্রথম গণভোট হয়, এরপর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, গণভোটে জিয়া মোট ভোটের চেয়ে বেশি ভোট পান, যদিও তা পরে সংশোধিত করা হয়? জিয়ার আমলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছিলো সামরিক কায়দায়।

বাংলাদেশে ভোট কারচুপি’র তিনি জনক। ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ নামক উদ্ভট দর্শনের প্রবক্তা তিনি। এ সম্পর্কে প্রফেসর ড: হুমায়ুন আজাদ সবচেয়ে মূল্যবান কথাটি বলেছেন, তিনি লিখেছেন, “সাম্প্রদায়িকতাকে ভদ্রোচিত করার জন্যে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের সূচনা”, হ্যাঁ, জিয়া বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রবক্তা। জিয়া ভক্তরা প্রায় সবাই সাম্প্রদায়িক, সাম্প্রদায়িকতা এদের মূল ছোটোনা। হয়তো এখন থেকে ১শ’ বছর পর বাংলাদেশের যে ইতিহাস লেখা হবে, তাতে জিয়া ‘মীরজাফর’ হিসাবে চিহ্নিত হবেন। জিয়ার সৃষ্টি বিএনপি, ক্ষমতায় থেকে জিয়া এ দল গঠন করেন, তবে প্রথমেই এটি বিএনপি ছিলোনা, কয়েকদফা নাম পরিবর্তন করে শেষমেশ একটি ভদ্রোচিত নাম ‘বিএনপি’ হয়েছে, ষড়যন্ত্রের মধ্যে জন্ম নেয়া দলটি আজো প্রাসাদ ষড়যন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। পারলে এ দলটি এখন ক্ষমতায় থাকার কথা?

প্রেসিডেন্ট জিয়াকে আমি দেখেছি, খাল কেটে তিনি কুমীর এনেছেন, সাম্প্রদায়িকতা নামের সেই কুমীর এখন দেশকে গিলে খাচ্ছে। ‘খাল খনন’ ছিলো জিয়ার একমাত্র সফল কর্মসূচি, যার মাধ্যমে তিনি দুর্নীতিকে রাষ্ট্রীয়করণ করেছিলেন। জিয়া ছিলেন গণতন্ত্র হত্যাকারী, এবং জেনারেল আইয়ুব খানের প্রেতাত্মা। পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির তিনি জনক, আজকের এনসিপি বা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্য পাকিস্তান-প্রেম, ভারত-বিরোধিতা, স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি হিসাবে বিএনপি-কে পেছনে ফেলে দিয়েছে। পাঠক, জিয়ার আমলে বাংলাদেশের মানুষ ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিতে পারতো না, বঙ্গবন্ধু’র নাম নেয়া বারণ ছিলো, এখনকার মত সবকিছুই ছিলো সরকার নিয়ন্ত্রিত। জিয়া বাংলাদেশের প্রথম স্বৈরশাসক ছিলেন।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।