প্রচ্ছদ » স্বাস্থ্য » বিস্তারিত
আক্রান্তের সংখ্যা সহস্রাধিক
ঈশ্বরদীর ইপিজেডে ডায়ারিয়ায় নারী শ্রমিকের মৃত্যু
২০২৫ জুন ০২ ১৮:৫৮:৪১
ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : পাবনার ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) ডায়রিয়া মহামারি রূপ ধারণ করেছে। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় সহস্রাধিক শ্রমিক। রবিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে কণা খাতুন (২৫) নামের এক নারী শ্রমিক মারা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কণা ইপিজেডের আইএইচএম কোম্পানির কোয়ালিটি কাটিং সেকশনের কর্মী ছিলেন। তিনি উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামের খমিন ইসলামের স্ত্রী এবং ১ সন্তানের জননী। ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক এই মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।
মারা যাওয়া ওই নারী শ্রমিকের স্বামী খমিন ইসলাম একই কোম্পানিতে কর্মরত রয়েছেন। খমিন ইসলাম জানান, শনিবার দুপুরে কোম্পানিতে খাবার ও পানি খাওয়ার পর থেকে কণার বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। এরপরও অসুস্থ শরীর নিয়ে রবিবার সে কর্মস্থলে যায়। সেখানে সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টারে তাকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। কণা কিছুটা সুস্থ হলে সন্ধ্যায় তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। রাতে তার অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্ততি নিতে নিতেই বাড়িতেই কণা মারা যায়।
আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত উপজেলা হাসপাতলে ৪৭ জন ভর্তি এবং ইপিজেড মেডিকেল সেন্টারে ৭৯ জন মোট ১২৬ জন ডায়ারিয়া রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। গত ২৯ মে থেকে ২ জুন দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ২৯৩ জন। এছাড়াও ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টারে গত ২৯ মে ২৩১ জন, ৩১ মে ৩৫৫ জন ১ জুন ৬৫ জন এবং ২ জুন ৭৯ জন ডায়ারিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন ছিল।
গত বৃহস্পতিবার ইপিজেড এলাকায় দুপুরের খাবার খাওয়ার পর পেট ব্যথা, পাতলা পায়খানা, জ্বর, বমি ও মাথা ব্যথায় শ্রমিকরা অসুস্থ হতে শুরু করে। পরে মধ্যরাত থেকে শুক্রবার, শনিবার, রবিবার এবং সোমবারেও নারী ও পুরুষ শ্রমিক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে ঈশ্বরদী হাসপাতাল ও ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টারে আসেন। চিকিৎসা শেষে অনেকেই বাড়ি চলে গেছেন।
গত কয়েকদিনে ডারারিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা সহস্রাধিক বলে ইপিজেড সূত্র জানিয়েছে। অসুস্থ শ্রমিকরা ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টার ও ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ৫০ শয্যার উপজেলা হাসপাতালে বেড সংকুলান না হওয়ায় স্যালাইন লাগিয়ে রোগীরা বারান্দা, করিডোর ও সিঁড়িতে শুয়ে চিকিৎসা গ্রহন করতে দেখা গেছে। গুরুতর ১০ জনকে রাজশাহী ও পাবনাতে পাঠানো হয়। কম গুরুতর অনেকেই হাসপাতালের আউটডোরে, ক্লিনিকে এবং বেসরকারি চিকিৎসকের নিকট হতে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে।
ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক এবিএম শহীদুল ইসলাম কর্মী কণা মৃত্যুর ঘটনা খুবই দুঃখজনক জানিয়ে বলেন, ওই কোম্পানী এবং আমাদের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। কোম্পানী তাদের আর্থিক সহযোগীতার বিষয়ে ব্যবস্থা করবে। ডায়ারিয়া পরিস্থিতি অনেকটা জরুরী অবস্থার মত জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা পানির ব্যপারে কোম্পানীগুলো সতর্কতা বজায় রাখতে বলেছি। এখন পর্যন্ত উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি। পানি পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও ঢাকা থেকে আসেনি বলে জানান তিনি।
শ্রমিকরা বলছেন, ইপিজেডে সরবরাহকৃত পানি পান করে ভয়াবহ ডায়ারিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ইপিজেডে ঈশ্বরদী ওয়াটার সাপ্লাই লি. পানি ট্রিটমেন্ট করে সরবরাহের দায়িত্ব পালন করছে। তারা পদ্মা নদী এবং ডিপ টিউবওয়েলের পানি সংগ্রহ করে ট্রিটমেন্ট করে ইপিজেড এলাকায় সাপ্লাই দেয়। এই কোম্পানি কারখানার বর্জ্যও ট্রিটমেন্টের পর ফের পদ্মা নদীতেই পাঠিয়ে দেয় বলে জানা গেছে।
(এসকেকে/এসপি/জুন ০২, ২০২৫)