প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত
পৃথক ২টি মামলা দায়ের
গোপালগঞ্জে ধর্ষণ চেষ্টা ঘটনার সালিশ বৈঠকে মারপিটে নারীসহ আহত ৬
২০২৫ জুন ১০ ১৭:১৩:২৯
তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ধর্ষণ চেষ্টা ঘটনার সালিশ বৈঠকে মারপিটে নারীসহ অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সোমবার (৯ জুন) কোটালীপাড়া থানায় পৃথক ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ধর্ষণটেষ্টা মামলার বাদী হয়েছেন ধর্ষণ চেষ্টার শিকার গৃহধূর বোন লাকী খানম । সালিশ বৈঠকে মারপিটের ঘটনায় ওই গৃহবধূর ভাসুর মোঃ বিল্লাল শেখ বাদী হয়েছেন। মারপিটের মামলায় ৪২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ঈদের পরের দিন রোববার (৮ জুন) বিকেলে কোটালীপাড়া উপজেলার শুয়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সালিশ বৈঠকে এ হামলা ও মারপিটের ঘটনা ঘটে।
হামলায় গুরুতর আহত লাকি খানম (২৩), আবু বক্কার শেখ (২৮), ওসমান শেখ (২৫), আলী শেখ (২২) ও হাসিব শেখকে (২১) কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ধর্ষণচেষ্টা মামলার বিবরণে জানাগেছে, ঈদের আগের দিন গত ৬ জুন (শুক্রবার) রাতে কোটালীপাড়া উপজেলার শুয়াগ্রামের এক গৃহবধূর স্বামী বাড়িতে ছিলেন না। এই সুযোগে একই গ্রামের খগেন্দ্রনাথ মধুর ছেলে রিপন মধু (৩২) ও সুরাত আলী বিশ্বাসের ছেলে রাজিবুল বিশ্বাস (২৭) মুখোশ পড়ে ওই গৃহবধূর ঘরের বেড়া কেটে ঘরে প্রবেশ করে। তারা (রিপন মধু ও রাজিবুল বিশ্বাস) গৃহবধূকে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে হাত পা বাঁধার চেষ্টা করে। হাত-পা বাঁধার সময় ওই গৃহবধূর সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে রিপন মধুর মুখোশ খুলে যায়। তখন ওই গৃহবধূ রিপন মধুকে চিনে ফেলেন। এক পর্যায়ে তারা ঘর থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়। এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে ঈদের পরের দিন গত রোববার (৮ জুন) শুয়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সালিশ বৈঠকে দুই পক্ষের মধ্যে বাক-বিতন্ডার একপর্যায়ে রিপন মধু ও রাজিবুল বিশ্বাস তাদের লোকজন নিয়ে ওই গৃহবধূর পক্ষের লোকজনের উপর হামলা চালিয়ে মারপিট করে। এতে লাকি খানম (২৩), আবু বক্কার শেখ (২৮), ওসমান শেখ (২৫), আলী শেখ (২২) ও হাসিব শেখ (২১) গুরুতর আহত হয়।
ধর্ষণ চেষ্টার শিকার ওই গৃহবধূ বলেন, গত ৬জুন (শুক্রবার) রাতে আমার স্বামী চাকরির সুবাদে বাড়িতে ছিলে ন না । ঘরে আমি একা ঘুমিয়ে ছিলাম। আমাকে ঘরে একা পেয়ে শুয়াগ্রামের রিপন মধু ও রাজিবুল বিশ্বাস মুখোশ পরে আমার ঘরে বেড়া কেটে প্রবেশ করে। তারা প্রথমে আমাকে চেপে ধরে ওড়না দিয়ে হাত পা বাঁধার চেষ্টা করে । হাত-পা বাঁধার এক পর্যায়ে আমি পা দিয়ে লাথি মারলে রিপন মধুর মুখোশ খুলে যায়। আমি রিপন মধুকে চিনে ফেলি। এ কারণে তারা আমাকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। বিষয়টি আমি এলাকায় লোকজনদের জানাই। ঈদের পরের দিন বোরবার (৮জুন) বিকেলে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে এ নিয়ে সালিশ বৈঠক চলছিল। অতর্কিতে সালিশ বৈঠকে রিপন মধু ও রাজিবুল বিশ্বাস লোকজন নিয়ে হামলা চালায়। আমাদের লোকজনকে মারপিট করে । আমি রিপন মধুসহ এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করছি।
মারপিটের ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত রিপন মধু ও রাজিবুল বিশ্বাস পলাতক রয়েছে। তাদের মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে। এ কারণে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সালিশ বৈঠক আয়োজনকারী রনজিত মধু, আলমগীর হাজরা, সালাম মেম্বর ও লোকমান হোসেন বলেন, সালিস বৈঠক রোববার বিকেলে শুয়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদে শুরু হয়। এক পর্যায়ে অভিযুক্ত রিপন মধু ও রাজিবুল বিশ্বাস তাদের লোকজন নিয়ে বৈঠকে উপস্থিত হন। বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে রিপন মধু ও রাজিবুল বিশ্বাসের লোকজন প্রতিপক্ষের কয়েকজনকে মারধর করে। সেখানে সালিশ বৈঠকের কোন পরিবেশ ছিল না। তাই মারপিটের পর আমরা বৈঠক থেকে চলে আসি।
কোটালীপাড়া থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ ঘটনায় পৃথক ২টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় লাকি খানম বাদী হয়ে সোমবার একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় রিপন মধু ও রাজিবুল বিশ্বাসকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মারপিটের ঘটনায় বিল্লাল বাদী হয়ে আরো একটি মামলা করেছেন। ইতিমধ্যে পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত ও অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছে।
(টিবি/এসপি/জুন ১০, ২০২৫)