প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » বিস্তারিত
গোলমরিচ ও তেজপাতার গল্প
২০২৫ জুন ১৩ ০০:০২:৫৭
প্রবীর সিকদার
লন্ডনে হাল আমলে বাংলাদেশের কর্ণধার ড.ইউনুসের সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের বৈঠকের খবরে বাংলাদেশের মিডিয়া সরব; যেন সারাদেশে এখন একটাই খবর- ইউনুস ও তারেক রহমানের বৈঠক। ১৩ জুন ২০২৫ শুক্রবার বৈঠক আয়োজনের নিশ্চয়তা পেয়ে ইউনুস ও তারেকের যে চেহারা আমার মতো অধম পাবলিকেরা মিডিয়ায় এক পলক দেখেছেন তারা এক বাক্যেই বলবেন, দু'জনের চেহারাতেই যুদ্ধজয়ের আগাম উল্লাস। ইউনুস-তারেক বৈঠক এবং তার পরবর্তী রাজনৈতিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে আমার এ লেখার অবতারণা নয়; প্রিয় পাঠককে একটি গল্প বলতেই লিখতে বসা। আমি এও জানি, আমার ছোটবেলায় শোনা যে গল্পটি আমি আজ বলছি, তা অনেক পাঠকেরই জানা। তারপরও ইউনুস-তারেক বৈঠকের প্রেক্ষাপটে গল্পটি বলার লোভ সংবরণ করতে পারছি না।
গ্রামের একটি হাট। ক্রেতা-বিক্রেতায় ঠাসা। হাটের উত্তর প্রান্তে এক বস্তা গোলমরিচ বিক্রি করতে এসেছেন এক ব্যবসায়ী। হাটের দক্ষিণ প্রান্তে এক বস্তা তেজপাতা নিয়ে বসেছেন আরেক ব্যবসায়ী। কিন্তু দু'জনেরই কপাল খারাপ; সেদিন হাটে গোলমরিচ বিক্রি হয়নি, তেজপাতাও বিক্রি হয়নি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের সবাই হাট ছেড়ে চলে যাওয়ার পরও বিক্রির আশায় হাটেই বসে আছেন গোলমরিচ আর তেজপাতার দুই ব্যবসায়ী। হাট ফাঁকা। দু'জনই একে অপরকে দেখছেন আবছা আলোয়। এক পর্যায়ে তারা কাছাকাছি হলেন, পরিচিত হলেন এবং দু'জনই জানালেন পণ্য বিক্রি না হওয়ার অভিন্ন সমস্যার কথা।
এরই এক ফাঁকে গোলমরিচের ব্যবসায়ী প্রস্তাব দিলেন, রাত গভীর হচ্ছে। বিক্রির সম্ভাবনাও আর নেই। এখন বরং একে অপরের বস্তা পাল্টাপাল্টি করে বাড়ি ফিরে যাই। বাড়িতে গিয়ে বলা যাবে, গোলমরিচ বিক্রি করে তেজপাতা কিনেছি কিংবা তেজপাতা বিক্রি করে কিনেছি গোলমরিচ। এতে ব্যবসায়ী হিসেবে বউ-বাচ্চাদের কাছে সম্মানটা অন্তত রক্ষা পাবে। দ্রুত এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন তেজপাতার ব্যবসায়ী। বস্তা খুলে কেউ কারো পণ্য পরখও করলেন না। নিমিষেই বস্তা পাল্টে মাথায় তুলে যে যার বাড়ির পথে দ্রুত পা বাড়ালেন।
গোলমরিচের ব্যবসায়ী আনন্দে দিশেহারা। অনেক দিন পর আজ একটা ভালো বাণিজ্য হয়েছে। তেজপাতার ব্যবসায়ী তো সারাপথ একাই বিড়বিড় করেছেন-কতদিন লাভের দেখা নেই, ঈশ্বর আজ মুখ তুলে চেয়েছেন। তারপর পায়ে পায়ে দু' ব্যবসায়ী যে যার বাড়িতে পৌঁছেই শুরু করেছেন শোর চিৎকার- দেখ, আজ কত বড় একটা ব্যবসা হয়েছে!
আনন্দে আত্মহারা স্ত্রী-পরিজনের সামনেই তেজপাতার ব্যবসায়ী খুললেন গোলমরিচের বস্তা। দেখা গেল গোলমরিচ নয়, বস্তাভর্তি বিচিকলার শুকনো বিচি।
আর খুশিতে টগবগ স্ত্রী-সন্তানদের সামনে গোলমরিচের ব্যবসায়ী খুললেন তেজপাতার বস্তা। দেখা গেল, তেজপাতা নয়, বস্তাভর্তি শুকনো বাঁশপাতা।
মুহূর্তে দুই ব্যবসায়ীর বাড়িতে নেমে এলো বিষাদ।
প্রিয় পাঠক, ড.ইউনুস ও তারেক রহমানকে গোলমরিচের ব্যবসায়ী কিংবা তেজপাতার ব্যবসায়ীর সঙ্গে তুলনা করছি না। তবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের ধূর্ত রাজনীতিকরা একদিন আমার গল্পের গোলমরিচের ব্যবসায়ী কিংবা তেজপাতার ব্যবসায়ী হবেনই হবেন; সেদিন বেশি দূরে নয়।