প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত
মরুকরণ বাড়ছে নীরবে, পৃথিবীর ভবিষ্যৎ তলিয়ে যাচ্ছে
২০২৫ জুন ১৬ ১৭:৩১:২৮
ওয়াজেদুর রহমান কনক
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন, অতিরিক্ত কৃষি চাষ, জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, বন উজাড় ও অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে দিনদিন যে সংকটটি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, তা হলো ভূমি অবক্ষয়। এর সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘমেয়াদি রূপ হচ্ছে মরুকরণ ও খরা—যা শুধু পরিবেশ নয়, বরং অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা, পানির প্রাপ্যতা, স্বাস্থ্য এবং মানুষের জীবনমানের ওপর ভয়ানক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৪০% ভূমি মরুকরণের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং এই কারণে প্রতি বছর প্রায় ১২০ কোটি হেক্টর উর্বর জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে বিশ্বের ২৫০ কোটি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, যাদের অধিকাংশই কৃষিনির্ভর দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
খরার কারণে কৃষি উৎপাদন কমে যাচ্ছে, পশুপালন সংকুচিত হচ্ছে, খাদ্য ও পানির দাম বেড়ে যাচ্ছে, এবং তা থেকে জন্ম নিচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অভিবাসন সংকট ও মানবিক বিপর্যয়। বিশেষ করে আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার খরাপ্রবণ অঞ্চলে কৃষিজমি অনুপযোগী হয়ে পড়ছে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে, এবং বহু অঞ্চলে ইতোমধ্যে ‘জলবায়ু উদ্বাস্তু’ তৈরি হতে শুরু করেছে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন—২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ৭০ কোটি মানুষ মরুকরণ ও খরার ফলে নিজ ভূমি ছাড়তে বাধ্য হবে।
বাংলাদেশের মতো কৃষিনির্ভর ঘনবসতিপূর্ণ দেশেও এই সংকট দিনদিন প্রকট হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলে খরার দাপট, উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার বিস্তার, চরাঞ্চলে ভূমিক্ষয় ও নদীভাঙন এবং শহরাঞ্চলে জমি ভরাটের ফলে দেশের উর্বর ভূমি দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। ভূমি ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, বন উজাড়, জলাধার ধ্বংস এবং দূষণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এর ফলে কৃষিজ উৎপাদন কমে যাচ্ছে, খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে, এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী জীবিকার সংকটে পড়ছে।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে সচেতনতা ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের লক্ষ্যে ১৭ জুন পালিত হয় “বিশ্ব মরুকরণ ও খরা প্রতিরোধ দিবস”। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—ভূমি কোনো অসীম সম্পদ নয়; এটি যত্ন ও সুরক্ষার দাবি রাখে। ভূমির উপর মানুষের নিঃসংকোচ দখলদারি এবং অবিবেচনাপ্রসূত ব্যবহার আমাদের ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করে তুলছে, যা প্রতিরোধ করতে হলে আজই সিদ্ধান্ত নিতে হবে—বিকল্প চাষাবাদ, পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন এবং ন্যায্য ভূমি নীতিমালার পথে হাঁটতে হবে।
ভূমি শুধু একটি প্রাকৃতিক সম্পদ নয়; এটি আমাদের খাদ্য, পানি, বাসস্থান, পেশা এবং পরিবেশের জন্য মৌলিক ভিত্তি। অথচ বর্তমানে সারা বিশ্বে এই মূখ্য সম্পদটি ভয়াবহ সংকটে রয়েছে। মরুকরণ, ভূমিক্ষয় এবং খরার কারণে প্রতিবছর কোটি কোটি মানুষ জীবিকাহীন হয়ে পড়ছে, খাদ্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। এই সংকটের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক সচেতনতা সৃষ্টির জন্য জাতিসংঘ ১৭ জুনকে “বিশ্ব মরুকরণ ও খরা প্রতিরোধ দিবস” হিসেবে ঘোষণা করে, যা ১৯৯৫ সাল থেকে পালন করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতি সেকেন্ডে বিশ্বে প্রায় ৪ হেক্টর উর্বর জমি নষ্ট হচ্ছে। বছরে হিসেব করলে প্রায় ১২০ কোটি হেক্টর জমি মরুকরণের প্রক্রিয়ার শিকার হয়, যা প্রায় ৪ গুণ বাংলাদেশের আয়তনের সমান। প্রতিবছর এই প্রক্রিয়ায় বিশ্বে আনুমানিক ৪৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কৃষিজ পণ্য উৎপাদনের সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খরার কারণে বিগত ৫০ বছরে পৃথিবীতে প্রায় ৬ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, যার মধ্যে অধিকাংশই আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার খরাপ্রবণ অঞ্চল থেকে। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলছে—২০৫০ সালের মধ্যে যদি ভূমি অবক্ষয়ের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকে, তবে ৪৮ কোটি মানুষ নিজ ভূমি ছেড়ে জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হতে পারে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মরুকরণ শব্দটি যতটা না শাব্দিকভাবে প্রযোজ্য, বাস্তবতার নিরিখে তা অনেক বেশি উদ্বেগজনক। বাংলাদেশে বর্তমানে ৭০ ভাগ মানুষ কোনো না কোনোভাবে কৃষি বা কৃষিনির্ভর অর্থনীতির সাথে যুক্ত। অথচ কৃষির প্রধান ভিত্তি জমি, পানি ও আবহাওয়াগত স্থিতিশীলতা—এই তিনটির সবকটিই আজ সংকটের মুখে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ১% হারে কৃষিজমি হ্রাস পাচ্ছে। বিগত ৪ দশকে প্রায় ৮০ লাখ হেক্টর কৃষি জমি হারিয়ে গেছে, যা দেশের মোট কৃষিজমির ৩৫%। রাজধানী ঢাকাসহ প্রধান শহরগুলোতে নির্বিচারে জমি ভরাট ও আবাসন প্রকল্পের কারণে ভূমির উপর চাপ চরমে পৌঁছেছে। গবেষণা বলছে—যদি বর্তমান হারে জমি হারানোর প্রক্রিয়া চলতে থাকে, তবে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মোট কৃষিজমির ৫০% হারিয়ে যাবে।
উত্তরাঞ্চলে প্রতিবছর মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত তীব্র খরা দেখা দেয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলে গড়ে ৪৫% কম বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়, যা ৫০ বছরের মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর গড়ে ১–১.৫ মিটার করে নিচে নামছে। শুধু চাপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয় ২০২২ সালে প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষে পানি সংকট দেখা দেয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI)-এর তথ্যমতে, উত্তরাঞ্চলের খরার কারণে সেখানে গড়ে প্রতি হেক্টরে ধান উৎপাদন ২০–৩০% কমে যায়।
অন্যদিকে উপকূলীয় জেলাগুলোতে লবণাক্ততার ভয়াবহতা বেড়েছে বহুগুণে। ১৯৭৩ সালে যেখানে ৮৩.৩২ লক্ষ হেক্টর জমি লবণাক্ত ছিল, ২০২৩ সালে তা দাঁড়িয়েছে ১০৫.৬ লক্ষ হেক্টরে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ২০৪১ সালের মধ্যে এই লবণাক্ততা আরও ২৬% বাড়বে, যদি কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। এর ফলে খুলনা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় অঞ্চলের ৩.৫ কোটি মানুষ সরাসরি পানির সংকটে পড়বে, এবং ধান, মাছ ও শাকসবজির উৎপাদন ব্যাহত হবে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি এখানে সর্বোচ্চ।
ভূমিক্ষয়ের একটি বড় উৎস হলো বন উজাড়। বন অধিদপ্তর জানায়, ১৯৯০ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দেশে প্রায় ৩৩% প্রাকৃতিক বন সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। প্রতি বছর ২২০০–২৫০০ হেক্টর বন ভূমি কেটে বসতবাড়ি, ইটভাটা বা রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। এর ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, বর্ষার পানি ধারণ কমে গিয়ে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ছে।
ভূমি অবক্ষয়ের আরেকটি বড় শিকার হচ্ছে চরাঞ্চল। বাংলাদেশে মোট ২৫টি জেলা চরের দ্বারা প্রভাবিত, যেখানে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ বাস করে। চরজমির অনিয়ন্ত্রিত বালি সঞ্চালন, মৌসুমি নদীভাঙন ও পানি সংকটের কারণে এসব এলাকায় কৃষি ও জীবনমান দুই-ই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় বলা হয়েছে—বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে কৃষি খাতে উৎপাদন হ্রাস পাবে গড়ে ১৭%। শুধু বোরো ধানেই এই হ্রাস হতে পারে ৩০–৩৫%। এর ফলে খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি ও অর্থনীতির ওপর বড় ধাক্কা আসবে।
এই পরিসংখ্যানগুলো একসঙ্গে রেখে বোঝা যায়, ১৭ জুনের বিশ্ব মরুকরণ ও খরা প্রতিরোধ দিবস শুধুই একটি প্রতীকী আয়োজন নয়—এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি বাস্তব সংকেত। ভূমি রক্ষার জন্য চাই সুদূরপ্রসারী নীতি, স্থানীয় পর্যায়ের অংশগ্রহণ, কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বন সংরক্ষণে জিরো টলারেন্স নীতি।
ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে ভূমি, পানি ও জীববৈচিত্র্যের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করতেই হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র, নাগরিক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত চেষ্টাই পারে বাংলাদেশকে পরিবেশগত সংকট থেকে মুক্তির পথ দেখাতে। ১৭ জুনের এই দিবস তাই আমাদের শুধু সচেতন করে না, আমাদের ভবিষ্যতের পথে এক কঠিন দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
বিশ্ব মরুকরণ ও খরা প্রতিরোধ দিবস প্রতিবছর ১৭ জুন পালন করা হয়। এটি মূলত জাতিসংঘ ঘোষিত একটি আন্তর্জাতিক দিবস, যা ১৯৯৪ সালের ১৭ জুন গৃহীত UNCCD (United Nations Convention to Combat Desertification)-এর ভিত্তিতে ১৯৯৫ সাল থেকে উদযাপন শুরু হয়। এ দিবসের মূল লক্ষ্য হলো—বিশ্বজুড়ে মরুকরণ, ভূমিক্ষয় এবং খরার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করা এবং ভূমির টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগে উদ্বুদ্ধ করা।
বিশ্বের অনেক অঞ্চলে ভূমিক্ষয় এবং খরার কারণে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ উর্বর জমি অকৃষিযোগ্য হয়ে পড়ছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, প্রতি বছর প্রায় ১২০ কোটি হেক্টর উর্বর ভূমি মরুকরণ এবং অতিরিক্ত ব্যবহারজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা প্রায় চারটি বাংলাদেশের সমান আয়তনের জমি। এই প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৫০ কোটি। এর প্রভাব পড়ে খাদ্য উৎপাদনে, পানির প্রাপ্যতায় এবং জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্যে। বিশেষ করে কৃষিনির্ভর জনগোষ্ঠীর জন্য এটি জীবন ও জীবিকার বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মরুকরণ বলতে সরাসরি মরুভূমি বোঝায় না, তবে খরা, লবণাক্ততা, ভূমিক্ষয় ও জমির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এই দেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ প্রভৃতি জেলাগুলোতে নিয়মিত খরা দেখা দেয়। এসব অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যায়, অনেক স্থানে ১৫০-২০০ ফুট পর্যন্ত গভীরে পৌঁছায়। এতে কৃষিকাজ ব্যাহত হয় এবং চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে খরার কারণে শুধু উত্তরাঞ্চলেই প্রায় ৯২ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে ধান চাষ ব্যাহত হয়েছিল।
অন্যদিকে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা দ্রুত হারে বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৭৩ সালে যেখানে উপকূলীয় লবণাক্ত জমির পরিমাণ ছিল প্রায় ৮৩ লক্ষ হেক্টর, ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৫ লক্ষ হেক্টরের বেশি। এই লবণাক্ততা শুধু জমিকে অকৃষিযোগ্য করে তোলে না, পাশাপাশি পানির মানও নষ্ট করে, যার ফলে সুপেয় পানির সংকট তীব্র হয়।
ভূমির ওপর জনসংখ্যার চাপ, শহরকেন্দ্রিক পরিকল্পনাহীন অবকাঠামো নির্মাণ এবং বন উজাড়ের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ২২০০ হেক্টর বনভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। বনভূমি হারানোর ফলে ভূমিক্ষয় আরও জোরদার হয়, এবং প্রাকৃতিক জলাধারগুলোর জল ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। এর ফলে বর্ষাকালে হঠাৎ বন্যা এবং শুষ্ক মৌসুমে খরার ঘটনা ক্রমেই নিয়মিত হয়ে উঠছে।
এই প্রেক্ষাপটে ১৭ জুনের মতো একটি আন্তর্জাতিক দিবস কেবল সচেতনতা তৈরির জন্য নয়, বরং জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারে। ভূমি ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার, খরাপ্রবণ এলাকায় সেচ ও পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা, লবণাক্ততা সহিষ্ণু ফসল উদ্ভাবন এবং বন সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। এ ছাড়া কৃষকদের জন্য বিকল্প আয়ের সুযোগ সৃষ্টি, ভূমির মালিকানা সুরক্ষা, ও কৃষিনির্ভর এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়নও মরুকরণ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
এই দিবসটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা কেবল ভূমির ব্যবহারকারী নই—আমরা এর রক্ষকও বটে। আজকের ভূমি রক্ষাই আগামী প্রজন্মের জীবন রক্ষার অন্যতম শর্ত। এই উপলব্ধি থেকেই আমাদের এগোতে হবে, পরিবেশবান্ধব সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এবং ব্যক্তি ও জাতি হিসেবে আমাদের ভূমি ও জলবায়ুর প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।