প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত
২৭ জুন থেকে শুরু হচ্ছে ধামরাইয়ের রথযাত্রা উৎসব ও তার মাসব্যাপী মেলা
২০২৫ জুন ২৪ ১৩:৪৫:৩৫
দীপক চন্দ্র পাল, ধামরাই : বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঢাকার ধামরাইয়ে ২৭ জুন থেকে শুরু হতে যাচ্ছে প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো উপমহাদেশ খ্যাত ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী যশোমাধব দেবের রথযাত্রা ও তার মাস ব্যাপী মেলা। এ দেশের হিন্দু স¤প্রদায়ের সবচেয়ে বড় রথ উৎসব অনুষ্ঠিত হয় এই ধামরাইয়ে। ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে উল্টো রথ যাত্রা অনুষ্ঠান। তবে মেলা চলবে মাস ব্যাপী।
এবার রথ উৎসব ও মেলার উদ্বোধনী অনষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন অর্ন্তবর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা লেঃ জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী অবঃ।
সভাপতিত্ব করবেন শ্রীশ্রীযশোমাধব মন্দির পরিচালানা ও রথ পরিচালনা কমিটির সভাপতি অবসর প্রাপ্ত মেজর জেনারেল জীবন কানাই দাস, শ্রীশ্রী যশোমাধাব মন্দির পরিচালানা ও রথ পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক কুমুদিনি ওয়েল ফেয়ার ট্রাষ্টের চেয়ারম্যান ও আর পি সাহার নাতি রাজিব প্রসাদ সাহা প্রমূখ। অনুষ্টানটি সার্বিক পরিচালনা করবেন ধামরাই শ্রীশ্রীযশোমাধব মন্দির পরিচালানা ও রথ পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সাধারন সম্পা;দক নন্দ গোপাল সেন।
এ উৎসব হিন্দু ধর্মীয় ভাবধারায় প্রায় ৪০০ শত বৎসর পূর্ব হতে শুরু হলেও সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির কারনে এই উৎসব ব্যাপক ভাবে সার্বজনীনতা লাভ করেছে। এই ধর্মীয় রথ উৎসবকে কেন্দ্র করে ও ইতিহাস খ্যাত ধামরাইয়ে বেড়ানোর জন্য প্রতিটি বাসগৃহে দুরদুরান্ত থেকে আত্মীয় স্বজন এসে ভীড় করে। অতীতে বাংলাদেশ নয় বিদেশ থেকেও হাজারো ভক্তবৃন্দরা রথ উৎসব কে কেন্দ্র করে ধামরাইয়ে এসে ভীড় জমাত। এখনো আসে। পুরো উৎসবটিই কালের বিবর্তনে এখন ধর্মীয় ভাবধারা নয় সার্বজনীন স্রোতধারায় প্রভাবিত হচ্ছে।
এই ঐতিহব্যবাহী রথ উৎসবকে কেন্দ্র করে গোটা ধামরাইয়ে এখন সাজ সাজ রব পড়ে গেছে এবং কায়েত পাড়ান্থ মাধব মন্দির কমিটি কর্তৃক রথের যাবতীয় ও সাজ সজ্জার কাজ ইতি মধ্যেই সম্পন্ন করেছে।
অপর দিকে পৌর এলাকার হার্ডি্েজ্ঞর পেছনে মেডিকেল সড়কটি সামান্য বিষ্টি হলে প্রচন্ড ভাবে কাদার সৃষ্টি হয়ে চলালের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
রথ উৎসব উপলক্ষে ২৭ জুন সকাল ১০ টায় কায়েতপাড়াস্থ রথ খোলায় ও রথের সামনে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হবে। এ সময় ডাক ঢোল কাঁসর ঘন্টা ও মহিলাদের উলু ধ্বনিতে মাধব মন্দিরের বর্তমান পুরোহিত শ্রী উজ্জ্বল গাঙ্গুলী ও উত্তম গাঙ্গুলী ধর্মীয় অনুষ্টান সম্পন্ন করবেন। দুপুরে মাধব মন্দিরে ভোগ রাগের পর প্রসাদ বিতরণ করা হবে আগত হাজারো ভক্ত বৃন্দের মাঝে।বিকেলে রথের সামনে লাখো ভক্তের উপস্থিতিতে উদ্ধোধনী আলোচনা সভা শেষে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় রথটানা হবে বলে কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে মন্দির কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ব্রত সরকার জানিয়েছেন।
এই অনুষ্ঠানের আলোচানা সভা শেষে প্রধান অতিথী রথ উৎসবের প্রধান পুরোহিত শ্রী উজ্জ্বল ও উত্তম গাঙ্গুলীর হাতে প্রতিকী রশি প্রদানের মাধ্যমে রথ টানার আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধনী করবেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিখি। এই রথটি মূর্তি সমেত লাখো ভক্ত নর-নারী পাটের রশি ধরে কায়েত পাড়ার রথ খোলা থেকে প্রধান সড়ক দিয়ে টেনে নিয়ে যাবে পৌর এলাকার গোপনগরে। এখানেই রথটি প্রতিবছরের ন্যায় ৯ দিন অবস্থান করবে।
মাধব ও অন্যান্য বিগ্রহগুলি রথ থেকে নামিয়ে নিয়ে ৯ দিন পূজারীদের দ্বারা পুজিত হবে কথিত মাধবের শ্বশুরালয় যাত্রাবাড়ি মন্দিরে।৯ দিন পর আগামী ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে উল্টো রথযাত্রা উৎসব। পূর্বের ন্যায় মাধব ও তার সহচরদের রথে চড়িয়ে ৫ জুলাই বিকেল ৬ টায় টেনে আনবে পূর্বের স্থান ধামরাই পৌর এলাকার কায়েতপাড়াস্থ রথখোলায়।
এখান থেকে মূর্তি গুলি চলে যাবে পুরোনো মাধবের নিজ আলয় মন্দিরে। রথ খোলায় রথটি সারা বছর থাকে বলে এই স্থানটির নামকরণ হয়েছে রথ খোলা। এই রথ খোলার ইতিহাসও ৪০০ বছরের।১৯৭১ সালে ৯ এপ্রিল স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদার ও তাদের দোসররা ৭৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ৪৪ ফুট পাশে মুল্যবান কাঠের ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় রথ খানা পুড়িয়ে দিয়ে বাংলা ও বাঙালীর উৎসব ও ঐতিহ্য ধ্বংস করে দেয়।
এ ব্যাপারে ধামরাই রথ কমিটির অন্যতম সদস্য ও শিল্পী সুকান্ত বনিক বলেন- বিগত ২০০৬ সালে ধামরাইয়ের রথ উৎসবে তৎকালীন মাধব মন্দির কমিটির সাধরন সম্পাদক ধামরাইয়ের বিশিষ্ঠ সমাজ সেবক প্রয়াত ঠাকুর গোপাল বনিকের আমন্ত্রনে রথ উৎসবে বিশেষ অতিীথ হয়ে আসেন ঐ সময়ের বাংলাদেশস্থ ভারতীয় দূতাবাসের দূত শ্রীমতি বিনা সিক্রী।
ধামরাই বাসীর আন্তরিক দাবীর প্রেক্ষিতে শ্রীমতি বিনা সিক্রী তার ভাষনে পূর্বের আদলে ৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক পুড়িয়ে দেওয়া রথটির আদলেই ধামরাইয়ের রথটি নির্মান করে দেবার আশ্বাস দেন।
এর পর রথ ও মাধব মন্দির কমিটির দুই জন কর্মকর্তা বর্তমান প্রয়াত ঠাকুর গোপাল বণিক ও শিল্পী সুকান্ত বণিক নিজে ধামরাই থেকে ভারতের পুরিতে যান। সেখানেই রথ নির্মান খরচ বিষয়ক তত্বাবধায়ক বিষয়ে আলোচনা হয়।
এরপর ভারত সরকার বাংলাদেশের সেতু বন্ধন অটুট রাখতে ধামরাইয়ে রথটির নির্মানে প্রায় কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মানের প্রদক্ষেপ গ্রহন করেন।
এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশস্থ ভারতীয় দূতাবাসের তত্বাবধানে ২০০৯ সালে ধামরাই রথের টেন্ডার হয়। টেন্ডার পেয়ে উই.ডি.সি.কেল.বিন টেকনো.টাচ -ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২০১০ সালের জানুয়ারী থেকে রথ নিমার্ন করেন। ২০১০ সাল থেকেই ধামরাইয়ে পূর্বের আদলে নতুন রথেই উপমহাদেশ খ্যাত ঐতিহাসিক রথ উৎসব চলছে। আর এই রথ উৎসবে প্রতি বছরই বাংলাদেশস্থ ভারতী দুতাবাসের কর্মকর্তবৃন্দরা অংশ গ্রহন করে থাকে। তবে মন্দির পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে এবার রথের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কেউ আসছেন না।
রথ মেলাকে সফল করার জন্য রথ পরিচালনা কমিটির পাশাপাশি প্রসাশনের পক্ষ থেকে বহু সংখ্যাক পুলিশ,র্যাব, বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা পোষাক ও সাদা পোষাক নজরদারী করবে বলে জানান ধামরাই থানার ওসি মোঃ মসিরুল ইসলাম।নিরাপত্তার জন্য সার্বিক প্রতুস্তি গ্রহন করা হয়েছে বলে জানান।
তিনি বলে এব্যাপারে রথ কমিটির নের্তৃবৃনদদের নিয়ে উপজেলা মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ মতিবিনিময় সভায় ধামরাই উপজেলা নির্বাহী বর্মকর্তা মোঃ মামনুন আহাম্মেদ অনীকের সভপতিত্ব অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন দপÍরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিতপ ছিলেন ।
এছাড়াও ইতিহাস খ্যাত রথ উৎসবকে সামনে রেখে ও সফল করার জন্য প্রশাসন এর উদ্যোগে উপজেলা মিলনায়তনে নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে আইন শৃঙ্খলা বিষয়কয় এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় ছিলেন ধামরাই থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ মনিরুল ইসলাম, শ্রী শ্রী যশোমাধাব মন্দির পরিচালানা ও রথ কমিটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক নন্দ গোপাল সেন, মন্দির কমিটির অন্যতম সদস্য কারু তামা কাসা শিল্পী সুকান্ত বণিক, শ্রী শ্রী যশোমাধাব মন্দির পরিচালানা ও রথ কমিটির প্রচার সম্পাদক সাংবাদিক দীপক চন্দ্র পাল ,হিন্দু সম্পদায়ের নের্তৃবৃন্দ ও মেলা ইজারা পত্তন গ্রহিতা ও বিএনপি নের্তৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সহ সরকারী কর্মকর্তা বৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় রথমেলায়,আইন শৃ্খংলা বিষয়ে ও মেলাকে সফল করার জন্য বিস্তারিত আলোচনা হয়।
যশোমাধাব মন্দির পরিচালানা ও রথ কমিটির সাধারন সম্পাদক,কুমুদিনি ওয়েল ফেয়ার ট্রাষ্টের চেয়ারম্যান ও আর পি সাহার নাতি রাজিব প্রসাদ সাহা বলেন প্রতিবারের মত এবারও রথ উৎসব ও মেলার সার্বিক আয়োজন ষথেষ্ঠ সুষ্টুভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে।
রথ উৎসব কেন্দ্র করে পৌর এলাকা সহ ধামরাইয়ের একটি পৌর সভা ও ১৬টি ইউনিয়নেই সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। উৎসব মূখর পরিবেশের রূপ লাভ করেছে। আগামী ২৭ জুন বিকেল ৪ টায় শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হবে মাস ব্যাপী মেলা ও হিন্দু স¤প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় রথ উৎসব। তিনি মেলা উৎসবে শান্তি শৃংখলা ও পরিবেশ সুন্দর রাখতে সবার সহযোগীতা কামনা করেছেন এবং রথ মেলা উৎসব উপভোগের করার জন্য আন্তরিকভাবে সকলে কে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। রথ কমিটি কর্তূক গঠিত স্বেচ্ছাসেবক দলও আইন শূংখলা বাহিনীর পাশপাশি পৌর শহরের পুরো মেলাঙ্গন জুড়ে শান্তি শৃংঙ্খলার কাজে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে বলে জানান।
(ডিসিপি/এএস/জুন ২৪, ২০২৫)