ঢাকা, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

প্রচ্ছদ » দেশের বাইরে » বিস্তারিত

ট্রাম্পের ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে দিলো যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট

২০২৫ জুন ২৮ ১২:২৬:৪৬
ট্রাম্পের ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে দিলো যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ আটকে দেওয়ার ক্ষেত্রে ফেডারেল বিচারকদের ক্ষমতা সীমিত করে দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এর ফলে অবৈধ অভিবাসী ও অস্থায়ী ভিসাধারীদের সন্তানদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধে যে আদেশ জারি করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প তা কার্যকর হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়েছে। খবর বিবিসির।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে ‌‌‘বিশাল জয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন এমন ব্যক্তি এবং অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের জন্য জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধে নির্বাহী আদেশ কার্যকরের যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন ট্রাম্প, সে বিষয়ে এই মামলা হয়েছিল।

সুপ্রিম কোর্টের রুলিংয়ের ক্ষেত্রে রক্ষণশীল বলে পরিচিত বিচারকরা ট্রাম্পের পক্ষ নিয়েছেন। তবে তারা বলেছেন যে, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে ট্রাম্পের উদ্যোগের বিষয়টিতে দৃষ্টি দেননি বরং তারা মোটা দাগে প্রেসিডেন্টের কার্যক্রমের ওপর আলোকপাত করেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আদেশের ফলে ভবিষ্যতে নির্বাহী আদেশে নেওয়া পদক্ষেপগুলো চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে এবং তাদের মতে এই আদেশেরও আইনি চ্যালেঞ্জ হবে।

অভিবাসন বিষয়ক অধিকার গোষ্ঠী এবং ২২টি রাজ্য বর্তমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনে ট্রাম্প যেসব নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করেছেন তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল।

ম্যারিল্যান্ড, ম্যাসাচুসেটস, ওয়াশিংটনসহ বিভিন্ন জায়গায় মামলা হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ আটকে দেওয়া এবং প্রাথমিক পর্যায়ে তাই হয়েছিল।

কিন্তু দেশটির জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এর সাথে একমত হয়নি। তারা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে এবং তাতে তারা প্রাথমিক আদেশ সাংবিধানিক হয়নি বলে যুক্তি তুলে ধরেছে। শুক্রবার আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে একমত পোষণ করে নতুন আদেশ দিয়েছে।

শুক্রবারই এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আদালতের আদেশের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত সংবিধানের জন্য, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও আইনের শাসনের জন্য অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করেছিল এবং দেশজুড়ে তার আদেশের বিষয়ে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো সেটি ছিলো গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরার প্রথম দিনেই ট্রাম্প তার এজেন্ডা বাস্তবায়নে নির্বাহী আদেশ জারি শুরু করেছিলেন।

শুক্রবারের ওই সংবাদ সম্মেলনে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আদালতের এই সিদ্ধান্তের অর্থ হলো বিচারকরা ট্রাম্পের নীতি আটকে দিতে পারবেন না।

তিনি বলেন, অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী সেশন শুরু হওয়ার পর জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়ে নানা প্রশ্ন তারা আমলে নেবে। সুপ্রিম কোর্ট যে রুলিং দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, দেশের আদালতগুলো অসাংবিধানিক বা বেআইনি মনে হলে প্রেসিডেন্টের কার্যক্রম স্থগিত করতে পারবে। তবে এটা হবে আরও বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যার অর্থ হলো প্রেসিডেন্ট তার কাজ চালিয়ে যাবার জন্য আরও সুযোগ পাবেন।

এখন আদালতের আদেশের কারণে ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বিষয়ক আদেশটি আদালতের মতামত আসার ৩০ দিন পর কার্যকর হবে। তবে এ নিয়ে আরও আইনি চ্যালেঞ্জ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

নটরডেম ল স্কুলের অধ্যাপক স্যামুয়েল ব্রে বলেছেন আদালতের এই আদেশ ফেডারেল আদালত ও নির্বাহী শাখার মধ্যে সম্পর্ক মৌলিকভাবে পুন:নির্ধারণ করবে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশের অর্থ হলো, সার্বজনীন যে নিষেধাজ্ঞাগুলো নির্বাহী পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো চ্যালেঞ্জ হবে না।

বিচারক অ্যামি কোনে ব্যারেট বলেছেন, ফেডারেল আদালত নির্বাহী শাখাগুলোর কার্যক্রম তদারকি করে না বরং তারা মামলা ও বিতর্কগুলোর সমাধান করে।

যখন একটি আদালত বলে নির্বাহী বিভাগ বেআইনি কাজ করেছে, তার মানে এই নয় যে আদালত তার ক্ষমতা অতিক্রম করেছে।

জাস্টিস ব্রেট কাভানফ বলেছেন, ফেডারেল প্রতিষ্ঠান ও নির্বাহী বিভাগের কার্যক্রমের মধ্যে আইনগত সমস্যা হলে সুপ্রিম কোর্ট এসব ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। বিচারক সোনিয়া সোটোমেয়র অবশ্য এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন।

তিনি বলেছেন, কোর্টের সিদ্ধান্ত সংবিধানকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের প্রতি একটি খোলা আমন্ত্রণ ছাড়া আর কিছুই নয়।

তিনি লিখেছেন, আইনের শাসন কাউকে দেওয়া হয় না। বরং একটি একটা নীতি, যা টিকে থাকতে প্রতিটি শাখা তার টিকে থাকার জন্য লড়াই করে। আজ আদালত সেই প্রচেষ্টায় নিজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ত্যাগ করলো। কলমের খোঁচায় প্রেসিডেন্ট আমাদের সংবিধান নিয়ে পুরোপুরি উপহাস করলেন।

(ওএস/এএস/জুন ২৮, ২০২৫)