প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত
টাঙ্গাইল কান্দাপাড়া যৌনপল্লী
‘এক দিন চইল্যা গেলো কেউ খোঁজ নিলো না’
২০২৫ জুন ২৯ ১৮:২৭:০৪
সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : ‘মাথার উপর খোলা আসমান, বৃষ্টিতে ভিজেছি। সারারাত মশার কামড় খেয়েছি। ভেজা কাপড় গায়েই শুকিয়েছে। অন্যের করুণায় একবেলা ডালভাত খেয়েছি। কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। কেউ খবর পর্যন্ত নিলো না। কেউ ভাবলো না এতগুলো মানুষ রাতে কোথায় ঘুমালো? কি খেয়েছে? আমরা কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমরা সমাজের বোঝা হয়ে গেছি।’ এভাবেই অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত টাঙ্গাইলের যৌনকর্মী সালমা, শান্তা, মল্লিকা, সাহারা সহ বেশ কয়েকজন নিজেদের অবস্থা বর্ণনা করছিলেন।
তারা জানায়, শনিবার রান্না ঘরের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তাদের ২২টি ঘর ভস্মীভুত হয়েছে। ঘরের সাথে সাথে পুড়েছে কপালও। অগ্নিকান্ডের একদিন অতিবাহিত হলেও সরকারি-বেসরকারি কোন সহযোগিতা তারা পায়নি। ২২টি ঘরের যৌনকর্মীরা কেউ না খেয়ে, কেউ অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। অপেক্ষা করছেন নিরাপদ বাসস্থান আর দু’মুঠো খাবারের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২২ টি ঘরের যৌনকর্মীরা কেউ না খেয়ে, কেউবা অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। সরকারি -বেসরকারি কোন সহযোগিতা তারা এখনও পাননি। পুড়ে যাওয়া ঘরের সামনে বসে বিলাপ করছেন কেউ কেউ । নতুন কাউকে দেখে ছুটে আসছেন। জানতে চাইছেন আমাদের জন্য কোন সহযোগীতা আসছে কি না। অপেক্ষা করছেন নিরাপদ বাসস্থান আর দু’মুঠো খাবারের।
টাঙ্গাইল নারী মুক্তি সংঘের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারা বেগম জানান, ঘরপোড়া মেয়েদের কিছুই নেই। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তাদের খাবার নেই, পড়নের কাপড় নেই, নগদ টাকা নেই, ঘুমানোর জায়গাও নেই। তারা এখন কোথায় থাকবে, খাবে কি? একদিন চলে গেলো আমাদের মেয়েরা এক কাপড়ে রয়েছে। কেউ কেউ সারারাত মশার কামড় খেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে রাত পাড় করেছে। তারা সবাই মিলে কিছু টাকা সংগ্রহ করে একসেট জামা, বিছানাপত্র ও ডালভাত খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। এই ব্যবস্থায় তাদের বেশিক্ষণ রাখতে পারবো না। সরকারি বা বেসরকারি সাহায্যই পারে তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে।
তিনি জানান, ডিসি অফিস থেকে একজন এসেছিলেন। নাম লিষ্ট করে নিয়ে গেছেন। ২৪ ঘণ্টর বেশি সময় চলে গেছে- মেয়েরা কিছুই পায়নি।
উল্লেখ্য, শনিবার (২৮ জুন) সকালে টাঙ্গাইল পৌরসভার কান্দাপাড়ার যৌনপল্লীতে রান্না করার গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ঘটে অগ্নিকান্ডে ২২টি ঘর ভস্মীভুত হয়েছে।
(এসএএম/এএস/জুন ২৯, ২০২৫)