প্রচ্ছদ » পাঠকের লেখা » বিস্তারিত
মুরাদনগরের ঘটনায় ইউনুস সরকারের পদত্যাগ করা উচিত
২০২৫ জুন ৩০ ১৬:২৬:১৫
শিতাংশু গুহ
অসহ্য। আমেরিকায় বসেও বাংলাদেশে হিন্দু’র ওপর নির্যাতন দেখে আমরা আর সহ্য করতে পারছি না। বাংলাদেশে হিন্দুদের অবস্থাটা কি তা বুঝতে কারো অসুবিধা হবার কথা নয়? সর্বশেষ মুরাদনগর, কুমিল্লার ঘটনা (শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫), দরজা ভেঙ্গে এক নেতার নেতৃত্বে মব এক হিন্দু মহিলাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, সম্মানহানি করে, ভিডিও দেখার অযোগ্য, দেখে মনে হবে এঁরা কি মানুষ! প্রথমে শুনলাম তিনি বিএনপি নেতা, বিএনপি প্রেস-কনফারেন্স করে জানালো, ধর্ষক আওয়ামী লীগ নেতা? উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বললেন, কুমিল্লার ঘটনায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতারা দায়ী। মির্জা ফখরুল বললেন, একজন উপদেষ্টা নিজস্বার্থে মুরাদনগরের ঘটনা ভিন্নখাতে প্রনাহিত করার চক্রান্ত করছে। রুহিন আহমদ নামে একজন লিখেছেন, ৯০% মুসলমানের দেশে ২/৪টা হিন্দু মেয়ে ধর্ষণ হবে এটা স্বাভাবিক। আজকের পত্রিকা ২৯ জুন হেডিং করেছে, ‘চিৎকার শুনে ছুটে আসা স্থানীয়রা ধর্ষণের শিকার নারীকেই মারধর করে’।
এ ক’টি বক্তব্য তুলে ধরার কারণ হচ্ছে, এটি আজকের বাংলাদেশের চিত্র। চিৎকার শুনে জনতা ধর্ষিতাকেই মারে, কি সৌন্দর্য্য তাইনা? রাজনৈতিক নেতারা ধর্ষক কোন দলের তা নির্ণয়ে ব্যস্ত। এরাই কিন্তু জোর গলায় বলেন, সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম হয়না, অথচ ধর্ষকের দল হয়। ফজর আলী একজন ধর্ষক, এটিই কি যথেষ্ট নয়? ধর্ষিতা হিন্দু হলে ধর্ষকের শাস্তি কমে যায়, তাইনা? ব্যাপারটি কি এটা নয় যে, একজন নারী ধর্ষিতা হয়েছে, ধর্ষকের বিচার করবে রাষ্ট্র। মহিলার বিবস্ত্র ছবি ড. ইউনূস সরকারের উলঙ্গ চিত্রটি প্রকাশ করে দিয়েছে। ধর্ষক ফজর আলী বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। ধর্ষিতা দীপালি বালা বাংলাদেশের নিরাপত্তাহীন রমনীদের অতঙ্কের চিত্রপট, হিন্দুদের দুর্দশার বাস্তব চিত্র। দুই সন্তানের জননী দিপালীর ভবিষ্যৎ কি? বাংলাদেশে হিন্দুদের ভবিষৎ কি? রাষ্ট্র, সরকার, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতা, প্রশাসন, পুলিশ-মিলিটারি-ৱ্যাব সবাই হিন্দুদের বিপক্ষে, তখন হিন্দুদের বাঁচার উপায় কি?
ধর্ষক কেন সাহস পেয়েছে এমন একটি ঘটনা ঘটাতে? কারণ সে জানে হিন্দু রমণী ধর্ষণ করলে কিচ্ছু হবেনা। মহিলা নিজেই মামলা করেছেন। প্রচার হলো তিনি মামলা প্রত্যাহার করেছেন। এটি সত্য নয়, মহিলা আরো একটি মামলা করেছেন। সচরাচর এমন ঘটনা ধামাচাপা দেয়া হয়। মহিলাকে ধন্যবাদ জানাই তিনি মামলা করার সাহস দেখিয়েছেন। তার স্বামী দুবাই প্রবাসী। এ ঘটনাটি ‘হালকা’ করে দেয়ার জন্যে অনেক রকম গল্প চালু হয়েছে। কাজ হয়নি। যেকোন উপায়ে মহিলার চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করতেই হবে, মুখরোচক গল্প দিয়ে একটি গুরুতর অপরাধ চাপা দেয়ার প্রবণতা? কিন্তু এ ঘটনা আর ধামাচাপা দেয়ার সুযোগ নেই, বিশ্ব এটি জেনে গেছে। জেনে গেছে ড. ইউনুস বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে গেছেন।
ইউরোপে এমন একটি ঘটনায় সরকারের পতন ঘটে। এই ঘটনায় পুরো অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগ করা উচিত। আসিফ নজরুল ও আসিফ মাহমুদ এখনো কিভাবে ক্ষমতায় আছেন? সেনাপ্রধান বলেছিলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিলাম’। ওনার দায়িত্বে দেশ এখন মব ও ধর্ষণের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। একটি মেয়ে দেখলাম উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে উদ্দেশ্য করে বলেছে, ‘আপনার বৌ, মেয়ে বা বোনের সাথে এমনটা হলে কি করতেন? আপনারা বিচার করতে না পারলে আমাদের হাতে ছেড়ে দিন’। আমার পরিচিত একটি টিম রবিবার মুরাদনগর গিয়ে সরজমিনে তদন্ত করেছে। ওসি জাহিদুর রহমান স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, ফজর আলীসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধর্ষিতা দু’টি মামলা করেছেন। এজাহার আমি দেখেছি।
দীপালি বাবার বাড়িতে ধর্ষিতা হন, বাবা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। বাংলদেশে মানুষ কি বোঝে একজন বাবা কতটা অসহায় হলে নিজের মেয়ের বলাৎকারের কথা স্বীকার করেন? উপায় নাই ‘গোলাম হোসেন’, এটি বাংলাদেশ, ধর্ষণ বিশেষত: হিন্দু রমণী ধর্ষণ, জোর করে নাবালিকা ধর্মান্তর এদেশে জায়েজ। কারণ ওঁরা ‘গনিমতের মাল’। একজন মুমিনা দেখলাম সামাজিক মাধ্যমে বলছেন, তিনি সাক্ষী এটি পরকীয়া। মুমিনা তার মুমিন ভাইয়ের দোষ ঢাকতে চাচ্ছেন। হুজুররা বলেন, এক মুমিন আর এক মুমিনের দোষ ঢেকে রাখবে এটাই নিয়ম। এখন রাষ্ট্র মুমিন, উপদেষ্টারা মুমিন, ড. ইউনুস মুমিন, রাজনীতিকরা মুমিন, ধর্ষক মুমিন- সবাই মিলে এঁকে অপরের দোষ ঢেকে রাখবেন, এটাই স্বাভাবিক। ক’দিন আগে এনসিপি’র নেতাদের দলীয় নেত্রীদের সাথে ঘুমানোর ইচ্ছা জাতি বেশ উপভোগ করেছে। ওসি জানিয়েছেন, এটি পরকীয়া নয়। ঘটনার প্রেক্ষাপটে এখন সবাই বলছেন, এটি পরকীয়া নয়। তবু একটি মহল ঘটনাটি পরকীয়া বলে চালাতে চেষ্টা করেছিলো, কারণ মেয়েটিকে চরিত্রহীনা প্রমান করা গেলে ধর্ষককে বাঁচানো যাবে, শাস্তি কমবে। সরকার মুখরক্ষার খাতিরে এ ঘটনার বিচার করতে বাধ্য হবে, আমরা দ্রুত বিচার চাই।
লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।