ঢাকা, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

প্রচ্ছদ » পাঠকের লেখা » বিস্তারিত

ফেসবুক : যোগাযোগের মাধ্যম নাকি গুজব-হয়রানির প্ল্যাটফর্ম?

২০২৫ জুলাই ০১ ১৪:৫১:২৩
ফেসবুক : যোগাযোগের মাধ্যম নাকি গুজব-হয়রানির প্ল্যাটফর্ম?

দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর :


বিশ্বের বৃহত্তম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক এখন শুধু বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম নয়—এটি হয়ে উঠেছে সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি এমনকি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে। বাংলাদেশেও এর ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। একদিকে ফেসবুক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, অন্যদিকে এটি গুজব, অপপ্রচার ও হয়রানিরও একটি প্রধান প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে প্রভাব
২০০৪ সালে মার্ক জাকারবার্গের হাত ধরে যাত্রা শুরু করা ফেসবুক বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩০০ কোটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। বাংলাদেশেও ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটির কাছাকাছি। রাজনৈতিক প্রচারণা, ব্যবসা-বাণিজ্য, সমাজসেবা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ—সব কিছুতেই ফেসবুক এখন অপরিহার্য।

ইতিবাচক দিকগুলো
যোগাযোগ সহজতর
বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে মুহূর্তেই যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে।

ব্যবসায়িক সম্ভাবনা
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ফেসবুকভিত্তিক অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা চালাচ্ছেন।

সচেতনতামূলক কার্যক্রম
রক্তদান, হারানো ব্যক্তির সন্ধান, সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে ফেসবুকের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি সম্ভব হচ্ছে।

তবে অন্ধকার দিকও আছে
গুজব ও উসকানি
বাংলাদেশের কয়েকটি বড় সহিংস ঘটনার উৎস ছিল ফেসবুকে ছড়ানো গুজব। ২০১২ সালের রামু, ২০১৯ সালের ভোলার ঘটনা কিংবা সাম্প্রতিক কুমিল্লা ও নওগাঁর ঘটনাতেও দেখা গেছে ফেসবুক পোস্ট থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

নারী ও কিশোরীদের হয়রানি
ফেক আইডি খুলে মেয়েদের ছবি দিয়ে অপমানজনক পোস্ট, হুমকি-ধামকি, এমনকি ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মতো সাইবার অপরাধ বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে।

তথ্যচুরি ও গোপনীয়তার প্রশ্ন
ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে নানা ধরনের প্রতারণা, বিজ্ঞাপনদাতার হাতে ডেটা বিক্রি, এমনকি থার্ড পার্টি অ্যাপের মাধ্যমে নজরদারির অভিযোগও রয়েছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান
সাইবার অপরাধ ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকার সাইবার ক্রাইম ইউনিট গঠন করেছে। কিছু গুজব বা উসকানিমূলক কনটেন্ট মুছে ফেলার জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে নিয়মিত। তবে অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাওয়া যায় না।

একইসাথে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ভারসাম্য রক্ষা করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি ও সমালোচনা
ফেসবুকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অনেক দেশে রয়েছে হেইট স্পিচ, ডেটা মিসইউজ ও নির্বাচন প্রভাবিত করার অভিযোগ। ইউরোপে ‘ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট’-এর মতো কঠোর আইন কার্যকর হয়েছে, যা সোশ্যাল মিডিয়াকে আরও জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে বাধ্য করবে।

সমাধান কোন পথে?
ফেসবুক একদিকে সম্ভাবনার, অন্যদিকে সমস্যার নাম। একে পুরোপুরি বন্ধ না করে বরং ব্যবহারকারীদের সচেতনতা, গণমাধ্যম শিক্ষার প্রসার, ডিজিটাল লিটারেসি বৃদ্ধি এবং শক্তিশালী সাইবার আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করাই হতে পারে উত্তম পথ।

শেষ কথা
ফেসবুককে ব্যবহার করতে হবে দায়িত্ব নিয়ে। এই প্ল্যাটফর্ম আমাদের যা দিতে পারে, সেটি যেন হুমকির চেয়ে সম্ভাবনা হয়ে ওঠে, সেটিই এখন সময়ের দাবি।

(ডিসি/এএস/জুলাই ০১, ২০২৫)