প্রচ্ছদ » পাঠকের লেখা » বিস্তারিত
দেশে বাড়ছে ‘মব জাস্টিস’
সামাজিক আস্থা ও আইনশৃঙ্খলায় চরম সংকট
২০২৫ জুলাই ০৩ ১৮:৩৯:৪৮
দিলীপ চন্দ
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে “মব জাস্টিস” বা গণবিচারের প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চুরির অভিযোগ, অপহরণ সন্দেহ কিংবা নারী-শিশু নির্যাতনের মতো ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে না গিয়ে জনতা নিজেরাই তাৎক্ষণিক শাস্তি প্রদান করছে। এতে যেমন বাড়ছে সহিংসতা, তেমনি দুর্বল হয়ে পড়ছে দেশের বিচারব্যবস্থা ও সামাজিক আস্থার কাঠামো।
একাধিক ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া
গত মাসেই গাজীপুর, বগুড়া ও কিশোরগঞ্জে কয়েকটি গণপিটুনির ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪ জন। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের আগেই উত্তেজিত জনতা ‘অপরাধী’ হিসেবে সন্দেহভাজনদের মারধর শুরু করে। এসব ঘটনার বেশিরভাগই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এবং দেশজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
“মব জাস্টিস হচ্ছে রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার প্রতিফলন। এটি ভয়াবহ সামাজিক অস্থিরতার ইঙ্গিত দেয়।” বিচারব্যবস্থায় জনগণের আস্থার অভাব এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ধীর প্রতিক্রিয়া এই প্রবণতাকে উসকে দিচ্ছে।
পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেকেই এসব ঘটনার পেছনে 'জনতার উত্তেজনা'কে দায়ী করলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুত তদন্ত ও কার্যকর বিচার না হওয়ায় সাধারণ মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে।
“মব জাস্টিস শুধু অপরাধ নয়, এটি মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন। এর প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত জরুরি।”
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও ঝুঁকি
সাধারণ মানুষের মনে তৈরি হচ্ছে আতঙ্ক। অনেকে অভিযোগ করছেন, ব্যক্তিগত শত্রুতা কিংবা ভুল বোঝাবুঝির কারণেও লোকজন গণপিটুনির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে সংবেদনশীল এলাকায় চোর সন্দেহ হলেই জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। সাধারণ নাগরিকেরা বলেন,“আইনের শাসন না থাকলে আমরা নিরাপদ নই। আজ যদি কোনো ভুল অভিযোগ ওঠে, মানুষ কথা শোনার আগেই পিটিয়ে মেরে ফেলছে!”
করণীয় ও প্রস্তাবনা
* সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গণমাধ্যম ও সামাজিক প্রচার কার্যক্রম বাড়ানো দরকার।
* আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতি ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
*প্রতিটি ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
* বিদ্যালয় ও সমাজ পর্যায়ে নৈতিক শিক্ষা এবং সহনশীলতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে।
মব জাস্টিসের বৃদ্ধি শুধু একটি অপরাধ প্রবণতা নয়, এটি বাংলাদেশের আইন ও সামাজিক ভারসাম্যের জন্য এক গভীর হুমকি। এখনই এই প্রবণতা রোধে প্রয়োজন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সক্রিয়তা, বিচার ব্যবস্থার গতিশীলতা এবং নাগরিকদের সচেতনতা। নতুবা এই নৈরাজ্যজনিত বিচারের পথে সমাজ আরও সহিংস ও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।