ঢাকা, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

প্রচ্ছদ » ফিচার » বিস্তারিত

জগন্নাথদেবের উল্টো রথযাত্রা 

২০২৫ জুলাই ০৫ ১৯:০৩:২৬
জগন্নাথদেবের উল্টো রথযাত্রা 

দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের পুনর্যাত্রা, যা ‘উল্টো রথযাত্রা’ নামে পরিচিত। আষাঢ় মাসের শুক্ল দ্বিতীয়ায় মাসির বাড়ি গুণ্ডিচা মন্দির থেকে ফিরে আসেন জগন্নাথদেব, সঙ্গে থাকেন ভাই বলরাম ও বোন সুভদ্রা। এই পূর্ণযাত্রার মধ্য দিয়েই শেষ হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব রথযাত্রা।

ফরিদপুরে ধর্মীয় উৎসবের আমেজ ফরিদপুরের ইসকন মন্দির, শ্রীঅঙ্গন শ্রীধাম, গৌড় গোপাল আঙ্গিনা, চৌধুরী বাড়ি মন্দিরসহ একাধিক স্থানে রথযাত্রা উপলক্ষে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য উৎসবের।

আজ শনিবার সকালে আটটায় শ্রীঅঙ্গন থেকে শুরু হয় রথ, যা ব্রাহ্মণ কান্দা ঘুরে আবার শ্রী অঙ্গনে ফিরে আসে। ইসকনের প্রভু জগন্নাথ দেবের উল্টো রথযাত্রা ৪টায় শহর প্রদক্ষিণ করে ব্রাহ্মণ কান্দা হয়ে মন্দিরে ফেরে। গৌড় গোপাল আঙিনা থেকে রথ যাত্রা শুরু হয়ে শ্রীঅঙ্গনে এসে শেষ হয়। চৌধুরী বাড়ির রথযাত্রা একইভাবে সম্পন্ন হয়।এছাড়া পাচ্ছরের রাধা গোবিন্দ ভজনালয় আশ্রমেও পালিত হয় রথযাত্রা, যেখানে অংশ নেন হাজারো ভক্ত।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: পুরাণ মতে, রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন ভগবান বিষ্ণুর আদেশে সমুদ্র থেকে ভেসে আসা কাষ্ঠখণ্ড দিয়ে নির্মাণ করেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহ। রানী গুণ্ডিচা শিল্পীর নির্দেশ ভঙ্গ করে দরজা খুলে ফেলায় মূর্তিগুলো অসম্পূর্ণ থেকে যায়। গোলাকৃতি চোখ, হস্তপদহীন এই রূপই হয়ে ওঠে এক অনন্য ঈশ্বরচিহ্ন। স্বপ্নে জগন্নাথদেব জানান, ‘এই রূপেই আমি পূজিত হতে চাই’।

রথযাত্রার আধ্যাত্মিক তাৎপর্য: উপনিষদ অনুসারে, ঈশ্বর রূপহীন, সর্বব্যাপী। “না আত্মানং রথিনং বিদ্ধি শরীরং রথমেব তু”—এই দেহই রথ, আত্মা রথের আরোহী। রথের ১৬ চাকা মানুষের ৫ জ্ঞানেন্দ্রিয়, ৫ কর্মেন্দ্রিয় ও ৬ রিপুর প্রতীক। রশি হলো মন, আর বুদ্ধি হল সারথি। আর এই রথের চালক স্বয়ং ঈশ্বর।

পুরীর জগন্নাথ মন্দির: চির বৈভবের প্রতীক ভারতের ওড়িশা রাজ্যের পুরীতে অবস্থিত জগন্নাথ মন্দির হিন্দুদের অন্যতম চারধামের একটি। দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মিত এই মন্দিরে প্রতিদিন তৈরি হয় ৫৬ প্রকার ‘মহাপ্রসাদ’।

মন্দিরের অনেক অলৌকিক দিক রয়েছে: চূড়ার ছায়া পড়ে না, পাখি উড়ে না, সমুদ্রের শব্দ ভেতরে প্রবেশ করে না, পতাকা উড়ে হাওয়ার বিপরীতে।

বিশ্বাস করা হয়, রথযাত্রায় অংশগ্রহণকারী বা দূর থেকে দর্শনকারী—সকলেই পান জগন্নাথের আশীর্বাদ।

জগন্নাথদেবের রথযাত্রা শুধুই এক ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি আধ্যাত্মিক আত্মজাগরণের এক প্রতীক। মানবদেহ, মন ও আত্মার সুষম সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই রথ আমাদের শেখায়, ঈশ্বর আমাদের অন্তরেই বিরাজমান।

(ডিসি/এসপি/জুলাই ০৫, ২০২৫)