ঢাকা, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

হিন্দুরা যা ভাবছেন বিষয়টি তা নয় 

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন জামাতের একটি কূটচাল

২০২৫ জুলাই ০৭ ১৭:৩১:৪২
সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন জামাতের একটি কূটচাল

শিতাংশু গুহ


সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন কথাটি এনিয়ে এখন আলোচনা হচ্ছে। এটি জামাতের প্রস্তাব, নুতন কিছু নয়, সম্ভবত: ১৯৯০’র দশকে গোলাম আজম প্রথমে এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন। জামাত জানে বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতিতে জিতে তাদের পক্ষে ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব নয়, তাই এ নুতন মারপ্যাচ। তাঁদের অনেকগুলো যুক্তির মধ্যে একটি হচ্ছে, অনেকরকম নির্বাচন তো দেখলেন, এবার সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন করে দেখুন। অর্থাৎ আপনি তো অনেক রকম খাবার খেয়েছেন, এবার আবর্জনা খেয়ে দেখুন! সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন প্রসঙ্গ সামনে আনা হয়েছে সময় ক্ষেপনের জন্যে, এতে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপি ব্যতীত অন্যদের লাভ।

কিছু হিন্দু সংগঠন এর পক্ষে কথা বলছে, আসলে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন হিন্দুরা যা ভাবছে বিষয়টি তা নয়, এতে হিন্দুদের কোন লাভ নেই? সেই ব্যাখ্যায় পরে আসছি, আপাতত সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন কি তা বোঝার চেষ্টা করি। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন মানে ভোটের সংখ্যা? অর্থাৎ কোন নির্বাচনে কোন দল প্রদত্ত ভোটের কত শতাংশ ভোট পাবে সেই অনুসারে আসন বন্টন হবে। সচরাচর সুষ্ঠূ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪২%, বিএনপি ৪০%, জাপা ৬%, জামাত ৬%, জাসদ-বাম ২%, এনসিপি ১%, হিন্দু লীগ ১%, ইসলামী জোট ১% এবং জনতা পার্টি ১%। সেই অনুপাতে ৩শ’ আসনে আওয়ামী লীগ পাচ্ছে ১২৬টি আসন, বিএনপি ১২০, জাপা ১৮, জামাত ১৮, জাসদ ৬, এনসিপি ৩, হিন্দু লীগ ৩, ইসলামী জোট ৩ এবং জনতা পার্টি ৩টি আসন। যে দল ১%-র কম ভোট পাবেন তাদের কোন প্রতিনিধি থাকবে না।

ওপরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কেউই এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে না। জাপাকে সাথে নিলেও হচ্ছেনা, জামাতকে নিতে হবে, এটাই জামাতের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি। এজন্যে জামাত সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন চায়, এতে তারা কম ভোট পেয়েও বেশি আসন পাবে, বড় দলের ওপর ছড়ি ঘোরাতে পারবে। জামাতকে সাথে নিলে জামাতের কথা শুনতে হবে। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনে ভোটার প্রার্থীকে ভোট দেবেনা, দলকে ভোট দেবে। এতে প্রার্থীর গুরুত্ব থাকবে না, জনপ্রিয় ভাল প্রার্থীরা এককভাবে জিততে পারবেন না, স্বতন্ত্র প্রার্থীর জেতার সম্ভবনা থাকবে না? দলের হাতেই সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত থাকবে। দল মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে যেকোন প্রার্থীকে সংসদে পাঠাবে। দলীয় কর্মীরা অবহেলিত হবেন।

হিন্দু সংগঠনগুলো ভাবছে তাঁরা সংখ্যালঘু সংখ্যানুপাতে ১০x৩=৩০টি আসন পাবেন। বিষয়টি তা নয়, বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক দলই সংখ্যালঘুদের সেই সুযোগ দেবেনা। এই প্রক্রিয়ায় হিন্দুদের পক্ষে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসাটা কঠিন হবে। গত ৫৩ বছরে কোন সরকার কোন হিন্দু রাজনৈতিক দলকে অনুমোদন দেয়নি। ২০২৫-এ একটি মাত্র দল অনুমোদন পেয়েছে। ধরে নেয়া যাক আরো ২/১টি দল অনুমোদন পাবে। এঁরা একত্রে ভোট করলে কত ভোট পাবেন? অন্য বড় দলের সাথে জোট বাঁধলে তো ‘যেই লাউ সেই কদু’। দলীয় এমপি’র কি অবস্থা সেটা তো বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বোঝা গেছে? সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন তত্বটি হিন্দুদের আরো কোনঠাসা করবে।

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন জামাতের একটি কূটচাল। জামাত সকল ইসলামী দলগুলো নিয়ে ৫-৭% ভোট পেলেও ১৫/২০টি আসন ধরে রাখতে সক্ষম হবে? নির্বাচন হলে জামাত হয়তো এনসিপিকে নিয়ে এ খেলা খেলতে চাইবে। উপরোক্ত পরিসংখ্যান বা যুক্তিতর্ক সবই নির্বাচন সুষ্ঠূ ও অবাধ হলেই প্রযোজ্য। বাংলাদেশের মূল সমস্যা ‘সুষ্ঠূ ও অবাধ নির্বাচন’। বাংলাদেশে নির্বাচনী ব্যবস্থায় ধ্বস নামিয়ে দিয়েছে জিয়া, এরপর এরশাদ, ২০০১-এ খালেদা জিয়া, এরপর ২০১৪/২০১৮/২০২৪-এ শেখ হাসিনা। এর পরিণতি কিন্তু সবাই ভুগেছেন, তবু কেউ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেননি। এখনো একই ধারা চলছে? সুষ্ঠূ ও অবাধ নির্বাচন কিভাবে সম্ভব তা নিয়ে আলোচনার খবর নাই, সবাই আসন ভাগাভাগি নিয়ে ব্যস্ত!

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।