ঢাকা, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

ফরিদপুরে বিএনপি'র দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ২৫

২০২৫ নভেম্বর ০৭ ২৩:৪৩:০৯
ফরিদপুরে বিএনপি'র দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ২৫

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে উপজেলা সদরের ওয়াবদা মোড় এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। এসময় উপজেলা বিএনপির একাংশের কার্যালয়ে ভাঙচুরসহ আগুন দেওয়া হয়েছে, ১৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে সেগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আশপাশের ১০-১২টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

প্রায় ঘণ্টা ব্যাপি চলা এ সংঘর্ষের পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

সংঘর্ষে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মিনাজুর রহমান লিপন, লিয়াকত মোল্লা, রফিকুল ইসলাম, টিটু, জব্বার, ইমদাদুল হক, লাভলুসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। আহতদের বোয়ালমারী উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় ও বিএনপি'র দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষকদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ চলে আসছে। এছাড়া সম্প্রতি বিএনপির মনোনয়ন ও উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এরমধ্যে ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে দুই গ্রুপ পৃথক র‍্যালি ও সমাবেশের আয়োজন করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বোয়ালমারীর ওয়াবদা মোড়ে হারুন শপিং কমপ্লেক্সে অবস্থিত উপজেলা বিএনপির একাংশের কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচির আয়োজন করেন শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু গ্রুপ। অপরদিকে চৌরাস্তা এলাকায় একই কর্মসূচির আয়োজন করে নাসিরুল ইসলাম গ্রুপ। বিকেলে দুই পক্ষের লোকজন বোয়ালমারী বাজারে জড়ো হচ্ছিলেন। উভয় পক্ষের শতশত নেতাকর্মীর যাওয়া-আসাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে খন্দকার নাসিরুল ইসলামের পক্ষের শতশত নেতাকর্মী লাঠিসোঁটা, ইট-পাটকেল ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বোয়ালমারী বাজারের ওয়াবদা এলাকায় শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু সমর্থিতদের অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে ও অগ্নিসংযোগ করে। এসময় বিক্ষুব্ধরা আশেপাশের অন্তত ৮ থেকে ১০টি দোকানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এসময় তারা অন্তত পনেরটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ওসব ধ্বংসযজ্ঞ চালায় বিএনপি'র নেতাকর্মী রা। এসময় ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন অনেকে। অন্যরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে সরে যান।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নেভাতে এলে বিক্ষুব্ধদের মুখে পড়ে ফিরে যায়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ দল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার আব্দুল্লা আল মাসুম জানান, হাসপাতালে সাত জন আহত অবস্থায় আসেন। এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এরকম বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে ধারণা ছিল না।

প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

(আরআর/এএস/নভেম্বর ০৭, ২০২৫)