প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত
ঝিনাইদহে সরকারি হাসপাতালে মিলছে না বিনামূল্যের ওষুধ
২০২৫ ডিসেম্বর ০৫ ১৮:৫৭:১৪
হাবিবুর রহমান, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ ২৫ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে নামেই চলছে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা। বাস্তবে হাসপাতালের রোগীদের কিনতে হচ্ছে অধিকাংশ ওষুধ, বাইরে থেকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা– নিরীক্ষার করাতে হচ্ছে। এর ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের চিকিৎসা ব্যয় কমার বদলে আরও বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে চরম ভোগান্তিতে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের। এছাড়াও জেলার ৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীরা সরকারি ওষুধ পাচ্ছেন না। তবে চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি ওষুৃধের সরবরাহ না থাকায় রোগীদের সাময়িক সমস্য হচ্ছে।
জানা যায়, সরকারি হাসপাতালটিতে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগীর ভিড় থাকে। সকালে টিকিট কেটে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পর প্রেসক্রিপশন হাতে পাওয়া গেলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওষুধ মিলছে না হাসপাতালের ফার্মাসিতে। বরাদ্দকৃত ওষুধের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় এত কম যে সপ্তাহের প্রথম দুইদিনেই শেষ হয়ে যায়। এরপর রোগীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় বাইরের ফার্মেসির তালিকা।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে সরবরাহকৃত ওষুধের মধ্যে ট্যাবলেট রয়েছে- প্যারাসিটামল, হিস্টাসিন, অ্যান্টাসিড, কট্রিম, পেনিসিলিন, মেট্রোনিডাজল, এফএস (আয়রণ), রেনিটিডিন, লিভামিজল, এ্যামোডুপিন, অটোবাস্টাটিল, নিট্রোবাস, ডায়াজিপাম ও হাইসোমাইড। ক্যাপসুলের মধ্যে রয়েছে- অ্যামোক্সাসিলিন, সেফ্রাডিন, টেট্রাসাইক্লিন, ডক্সিসাইক্লিন, ওমিপ্রাজল ও ওজালতা মাবির। বিনামূল্যে দেওয়া সিরাপের মধ্যে রয়েছে- প্যারাসিটামল হিসটামিন, সালবুটামল, সেপুরাকজিন, অ্যামোক্সাসিলিন, কট্রিমমক্সাজল, রেনিটিডিন ও ইরিথ্রমাইসিন। ইনজেকশনের মধ্যে আছে- অ্যামোক্সাসিলিন, ক্লক্সাসাইক্লিন, সেফ্রাডিন, সেবিক্সিন, সেফটিয়াকজন, মক্সাক্লেভ, হিউম্যান ইনসুলিন, ওনডাসারন, ওমিপ্রাজল, কলেরা স্যালাইন (৫০০, ১০০০ এমএল), ৫% ডেক্সট্রো, ১০০০ এমএল, হার্ডম্যান সলুশন, ১০% ডেকট্রোজ, ডাইক্লোফেনাক, ডেক্সট্রোমেথাসন, অ্যাটরোফিন সালফেড, জেন্টিন ও এমপিসিলিন। এছাড়াও সরকারি হাসপাতালগুলোতে সরকার বেবিলোশন ও হুইটফিল বিনামূল্যে দেওয়া হয়ে থাকে। হাসপাতালে এসব ওষুধ না থাকার কারণে গরিব ও দিনমজুর শ্রেণির মানুষের ওপর চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি রোগের চিকিৎসা নিতে গিয়ে একেকটি পরিবারকে সপ্তাহে অন্তত ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।
এদিকে রোগীদের ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন পরীক্ষার সংকটও। এক্সরে, আল্ট্রাসোনোগ্রামসহ অনেক জরুরি পরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে করা সম্ভব না হওয়ায় রোগীদের ছুটতে হচ্ছে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। ফলে সেখানেও রোগী ও তাদের স্বজনদের মোটার অংকের টাকা গুণতে হচ্ছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ছেলেকে চিকিৎসা করাতে আসা শৈলকুপা উমেদপুর এলাকার ওসমান আলী বলেন, ‘শুনেছিলাম সরকারি হাসপাতালে বিনা টাকা-পয়সায় চিকিৎসা করানো হয়। তবে এখানে চিকিৎসা করাতে এসে আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেল। প্রতিদিনি ২ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকার ওষুধ কিনতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে কিছু পরীক্ষ-নিরীক্ষা করাতে দিচ্ছে চিকিৎসকরা। সেগুলো এখানে হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে মোটা টাকা খরচ করে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। আমাদের মত গরীব মানুষের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে।’
সদর উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার স্ত্রী জ¦রে আক্রান্ত। কয়েকনি ধরে জ¦রর না কমায় সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। এখানে এসে প্রতিদিন ওষুধ কিনতে হচ্ছে। এই হাসপাতালে ৪ দিন ভর্তি রয়েছে। এ সময় অন্তত ২ হাজার ৮০০ টাকার ওষুধ কিনতে হয়েছে।’
জেলা সচেতন নাগরিক সমাজেরর প্রতিনিধি মানকবাধিকারকর্মী আনোয়ারুজ্জামান আজাদ বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সাহেব শুধু হাসপাতালের সৌন্দর্য বন্ধন নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। হাসপাতালের রোগীদের সেবা নিয়ে তাঁর কোনো মাথাব্যাথা নেই। জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না এর চেয়ে পরিতাপের আর কী হতে পারে। খুব দ্রুত সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে নজর দিয়ে রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।’
এ ব্যাপারে জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা, মোস্তাফিজুর রহমান বলেন ‘রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় সীমিত বরাদ্দে সবার জন্য ওষুধ নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। সরবরাহ কম হওয়ায় অনেক ওষুধ বিতরণ করা বন্ধ রয়েছে। তবে ওষুধ সরবরাহ বাড়ানো গেলে আমাদের এই সংকট কমে যাবে। রোগীদেরে স্বাভাবিকভাবে ওষুধ দেওয়া শুরু করা হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সম্প্রতি চাহিদা অনুযায়ী দপ্তরে একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে। ওই তালিকার বরাদ্দ খুব দ্রুতই চলে আসবে। আশা করছি শিগগিরই এ সংকটের সমাধান ঘটবে।’
(এইচআর/এএস/ডিসেম্বর ০৫, ২০২৫)
