ঢাকা, শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

গোপালগঞ্জে মাদ্রাসা ছাত্রীর আত্মহত্যা, ধর্ষক শিক্ষক ও সহায়তাকারি শিক্ষিকা গ্রেফতার

২০২৫ ডিসেম্বর ০৫ ২০:১৩:০৮
গোপালগঞ্জে মাদ্রাসা ছাত্রীর আত্মহত্যা, ধর্ষক শিক্ষক ও সহায়তাকারি শিক্ষিকা গ্রেফতার

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি :গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রুপা আক্তারের (১৪)আত্মহত্যার ঘটনায় দুই শিক্ষককে আসামী করে থানায় মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষক ও তার সহযোগি আরেক নারী শিক্ষক।

ওই শিক্ষার্থী মুকসুদপুর উপজেলার গোহালা ইউনিয়নের বামনডাঙ্গা আয়েশা সিদ্দিকা মহিলা হাফেজিয়া মাদ্রাসার পঞ্চম জামাতের শিক্ষার্থী ছিল। ওই শিক্ষার্থী বামনডাঙ্গা গ্রামের প্রবাসী কামরুল শেখের মেয়ে।

শুক্রবার সকালে মৃতের মা বেবী বেগম বাদী হয়ে শিক্ষক মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান শিকদার (৫১) ও শিক্ষিকা খাদিজা বেগমকে(৩০)আসামী করে এ মামলা দায়ের করেন।

মামলা দায়েরের পর আজ শুক্রবার সকালে পুলিশ শিক্ষিকা খাদিজা বেগমকে গ্রেফতার করে। এরআগে, গতকাল বৃহস্পতিবার(০৪ ডিসেম্বর)স্থানীয় এলাকাবাসী শিক্ষক মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান শিকদারকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।এরপর থেকে ওই শিক্ষক পুলিশ পাহারায় মাদারীপুর জেলার জেলার রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয় ।পরে আজ শুক্রবার পুলিশ তাকে মুকসুদপুর থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার গোহালা ইউনিয়নের বামনডাঙ্গা গ্রামের নিজ বাড়িতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রুপা আক্তার আত্মহত্যা করে। এরআগে, গত ২৬ নভেম্বর ওই মাদ্রাসা ছাত্রী শিক্ষক মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান শিকদার কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন। ধর্ষণের চিত্র মোবাইলে ধারন করে রাখা হয়েছে বলে জানাগেছে। আর একাজটি করেছেন মাদ্রাসার আরেক শিক্ষক এবং এই মামলার অপর আসামী খাদিজা বেগম। ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং একারণেই সে আত্মহত্যা করেছে। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। গণধোলাইয়ে অসুস্থ হওয়ায় পুলিশ তাকে পার্শবর্তী মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়।

অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান শিকদার বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার বারাশিয়া গ্রামের আব্দুল হামিদ শিকদারের ছেলে। খাদিজা বেগম মুকসুদপুর উপজেলার বামনডাঙ্গা গ্রামের ফজলু খালাসীর মেয়ে।

নিহতের বড় বোন সাদিয়া আক্তার বলেন, শিক্ষিকা খাদিজা বেগম আমার বোনকে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে রাখে। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় মাদ্রাসার ছাত্রদের পাঠিয়ে আমার বোনকে ডেকে পাঠাতো। সে যেতে না চাইলে ওই শিক্ষিকা ফোন দিয়ে ওই শিক্ষককে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতো। এসব কারণেই আমার বোন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আমি এ ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসি চাই।

ওই শিক্ষার্থীর মা বেবী বেগম জানান, গত ২৬ নভেম্বর শিক্ষক মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মাদ্রাসা ছুটির পর আমার মেয়েকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। আর এই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ ও ধর্ষণে সহযোগিতা করে শিক্ষিকা খাদিজা বেগম। ঘটনার পর আমার মেয়ে বাড়িতে এসে বিষয়টি আমাদের জানায়। এরপর থেকে আমার মেয়ে মাদ্রাসায় যাওয়া বন্ধ করে দেয়। লোকলজ্জায় আমরা বিষয়টি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করি।কিন্তু,ওই শিক্ষক তার সহযোগি শিক্ষিকার মাধ্যমে মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।একারণে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

মুকসুদপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, এ ঘটনায় অভিযুক্ত মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষিকাকে আসামী করে ধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত দুই আসামীকেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

ময়নাতদন্ত শেষে আজ শুক্রবার মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

(টিবি/এএস/ডিসেম্বর ০৫, ২০২৫)