প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত
নেপথ্যে দুই বিএনপি নেতার নাম
কানাইপুরে সরকারি জায়গায় অবৈধ দোকান, স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয়
২০২৫ ডিসেম্বর ১৪ ১৮:৪০:৩৩
রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুর সদরের কানাইপুর বাজার ও মহাসড়ক সংলগ্ন পুরো এলাকায় প্রায় দেড় শতাতিক দোকান রয়েছে যা সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে। তেমনই একটি দোকান সম্প্রতি লিখিত স্ট্যাম্পে ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে হাত বদল করা হয়েছে।
ফরিদপুর-মাগুড়া মহাসড়কের সাথে, কানাইপুর স্কুল মার্কেটের সামনে এবং বাসস্ট্যান্ড ও মাহিদ্র স্ট্যান্ড সংলগ্ন আজম মোল্লার দোকানটি ৮০ হাজার টাকা বিক্রি হলেও দোকানদার আজম মোল্লা পেয়েছেন মাত্র ৪০ হাজার টাকা। সরকারি জায়গার এ অবৈধ বেচা-কেনার সাথে উঠে এসেছে স্থানীয় বিএনপি'র দুই নেতা- কানাইপুর ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. মোতালেব শেখ ও সাধারণ সম্পাদক ইউসূফ আলী মোল্লা এবং কানাইপুর বাজার কমিটির সভাপতি মো. লিয়াকত মাতুব্বরের নাম।
তবে লিয়াকত মাতুব্বব জানিয়েছেন, 'এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না ভাই, সবকিছু জানেন মোতালেব মেম্বার ও ইউসুফ প্রফেসর। কে কয় টাকা খেয়েছে, কে কতো পেয়েছে তা আমি জানি না, তাঁদের জিজ্ঞেস করেন।
লিয়াকত আরও জানান, 'যে ছেলে দোকানটি কিনেছে, সে এতোগুলো টাকা কিভাবে কার কাছে দিবেন, সেটির ভায় পাচ্ছিলো। পরে, আমাকে বিষয়টি জানালে আমি সাথে গিয়ে ইউসুফ প্রফেসর ও মোতালেব মেম্বারের হাতে ৮০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দিয়ে স্ট্যাম্পে একটা স্বাক্ষর করে চলে এসেছি। এর বাইরে আমি কিছু জানিনা।
এ বিষয়ে কানাইপুর ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতালেব শেখ ওরফে মোতালেব মেম্বার ওই অবৈধ দোকানটি বেচা-কেনার ব্যাপারটি নিশ্চিত করে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, আমি সাক্ষী হিসেবে ছিলাম। আমার জানামতে সব টাকাই আজম মোল্লায় পাওয়ার কথা। তিনি আরো জানান, আশি বা পঁচাশি হাজারে দোকানটি সম্ভবত বিক্রি হয়েছে।'
এ বিষয়ে স্থানীয় কানাইপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আলী মোল্লা উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, ‘আমি আর মোতালেব মেম্বার মাঝখানে থেকে দোকানটি হস্তাস্তর করে দিয়েছি। আজম মোল্লা যেহেতু দোকানের মালামাল ও দোকান ঘরের টিনসহ বিক্রি করে দিয়েছে তাই সে চল্লিশ হাজার টাকা পেয়েছে। বাকী টাকা হয়তো যারা দালালি করেছেন তারা খেয়ে থাকতে পারেন।'
এ বিষয়ে ফরিদপুর সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভুমি) মো. শফিকুল ইসলাম উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, 'সরকারি জায়গায় দোকান তোলা বা কয়-বিক্রয়ে কোনো সুযোগ নাই।
এসিল্যান্ড শফিকুল ইসলাম আরও জানান, কানাইপুর বাজারের অবৈধ দোকান ও রাস্তা দখল উচ্ছেদে তালিকা করা হচ্ছে, উচ্ছেদ করা হবে।'
এ বিষয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রামানন্দ পাল উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, জায়গাটি সম্ভাবত সড়ক বিভাগের অধীনে। তবে সরকারি জায়গায় অবৈধ দোকান ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে হাত বদলের কোনো সুযোগ নেই।
তিনি আরও জানান, 'অবৈধ দখলকৃত সরকারি জমি দখলমুক্ত করতে ইতিমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। কানাইপুর বাজারে অবৈধ দখলে থাকা সরকারি জমি, রাস্তা ও খাল উদ্ধারে খুব শীঘ্রই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে।'
এর আগে, আজম মোল্লার দোকানটি বিক্রি করতে লোকমুখে প্রচারণা চালান বিএনপি নেতা ইউসূফ আলী মোল্লা। এরই সূত্র ধরে দোকানটি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন স্থানীয় রেজাউল নামে এক ব্যক্তি সহ একাধিক ব্যক্তি। কিন্তু তার সাথে দাম দরের বনিবোনা না হওয়ায় তাকে দোকানটি দেননি ইউসুফ প্রফেসর বলে জানান তিনি। রেজাউলের মতো একাধিক ব্যক্তির পর দোকানটি আশি বা পঁচাশি হাজার টাকায় কিনে নেন আহাদ মাতুব্বর নামের ওই ব্যক্তি, যিনি বর্তমানে ওই দোকানটি চালাচ্ছেন।
এদিকে সরকারি জায়গায় অবৈধ দোকান স্ট্যাম্প করে বিক্রির সাথে দুই বিএনপি নেতার নাম জড়ানোর বিষয়টি অবগত করে ফরিদপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ কে এম কিবরিয়া স্বপনের কাছে জানতে চাইলে, তিনি উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, 'দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ কোনো বেআইনি কাজ করলে দল তার দায় নিবে না, তার দায় তাকেই নিতে হবে। এছাড়া, দলের কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ প্রমানিত হলে বা কারো দ্বারা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হলে, তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণে একচুল ছাড় দেওয়া হবে না বলেও দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কিবরিয়া স্বপন।
(আরআর/এসপি/ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫)
