প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত
তৌহিদী জনতা দিপু চন্দ্র দাশকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে
২০২৫ ডিসেম্বর ১৯ ১৭:৩৪:৩৮
শিতাংশু গুহ
অসহ্য। নির্মম। পাশবিক। ময়মনসিংহের ভালুকায় কারখানা শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাশকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তৌহিদী জনতা প্রকাশ্যে বেধড়ক পিটিয়ে অর্ধ-মৃত করে এবং এরপর মহাসড়কের কিনারায় একটি গাছে বেঁধে আগুন ধরিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে। দিপু আদৌ ইসলাম অবমাননা করেছে কিনা তা কারো জানা নেই, আর করলেও ধর্মের নামে এমন নৃশংসতা আমাদের সদ্য অষ্ট্রেলিয়ায় মুসলিম পিতা-পুত্রের ইহুদী হত্যা ও দিল্লীতে মুসলিম ডাক্তারদের হিন্দু হত্যার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। পেহেলগাম ও বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী ইসলামী তৎপরতার প্রসঙ্গ নাহয় টানলাম না!
বিবিসি বাংলা ১৮ই ডিসেম্বর ২০২৫ এ প্রতিবেদনটি প্রকাশে সতর্কতা দিয়ে বলেছে, এটি মানসিক চাপের কারণ হতে পারে। এতে বলা হয়েছে, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ময়মনসিংহে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সাথে আরো বলা হয়েছে, ওই যুবকের মরদেহ গাছের সাথে বেঁধে আগুন দেয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ভালুকা থানার ডিউটি কর্মকর্তা মি. মিয়া বলেছেন, দিপু নবীকে কটূক্তি করেছিল। তার লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। মামলা হয়নি। আত্মীয়-স্বজন মামলা করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। ফেইসবুকে বিবিসি’র পোষ্টে মুসলিম নামধারী অনেকে ‘আলহামদুল্লিলাহ’ লিখেছেন।
সামাজিক মাধ্যমে এর ভিডিও-ছবি এসেছে। ভিডিও দিলাম, দেখা যাচ্ছে, জনতা উল্লাসে নাচছে, ‘’আল্লাহু-আকবার’ ধ্বনি দিচ্ছে। এমন বীভৎস দৃশ্যে যাঁরা উল্লাস করতে পারে, এদের আপনি কি বলবেন? ‘হিন্দু নিউজ’ নামে একটি নিউজ পোর্টাল প্রায় একই খবর দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে বলা হচ্ছে, দিপু চন্দ্র দাশকে আধমরা অবস্থায় পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিবিসি ও হিন্দু নিউজ বলেছে হত্যার পর পোড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশের বড় বড় মিডিয়ায় খবরটি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। নবী ও ইসলামের অবমাননার অজুহাতে বাংলাদেশে হিন্দুদের জীবন অতিষ্ঠ করে দেয়া হচ্ছে, কয়েক শত হিন্দু যুবক-যুবতী এ মিথ্যা অভিযোগে জেলে পচছেন।
ধর্ম-অবমাননার অভিযোগে সংখ্যালঘু, বিশেষত: হিন্দুদের ওপর আক্রমন, বাড়িঘর লুটপাট, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ শুরু হয়েছিলো ২০১২-তে রামু থেকে। সেখানে ১০হাজার মুসলমান বৌদ্ধ পল্লীতে আক্রমণ করে সবকিছু ধ্বংস করে দেয়, বাড়ীঘর-মন্দির পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেই ঘটনার বিচার হয়নি। এরপর সাতক্ষীরা, রংপুর, নাসিরনগর, কুমিল্লা ও আরো ক’টি হিন্দু বসতি এলাকায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। অধিকাংশ ঘটনায় ইসলাম অবমাননার প্রমান মেলেনি, কিন্তু হিন্দুর কপাল পুড়েছে। সরকার একটি ঘটনার বিচার করেনি, বরং উস্কে দিয়েছে, এটি সকল সরকারের জন্যেই প্রযোজ্য।
বাংলাদেশে ‘ব্লাসফেমি’ আইন নেই, কিন্তু সিএসএ বা সাইবার সিকিউরিটি এক্ট দিয়ে সরকার হিন্দুদের ওপর ধর্মীয় অবমাননার মামলা করে। ইতিমধ্যে বেশ ক’জন এ মামলায় জেল খাটছেন। বাংলাদেশে শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মের অবমাননার অভিযোগ ওঠে, হিন্দুরা শাস্তি পায়, অথচ মুসলিম হুজুরেরা প্রতিনিয়ত হিন্দু ধর্মের অবমাননা করে থাকে, বিচার নাই? ক’দিন আগে বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান নির্বাচনী ভাষণে বলেছেন, ‘হিন্দুরা শয়তানের পূজা করে’, তার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি, বরং তিনি পুরুস্কৃত হয়েছেন, বিএনপি’র মনোনয়ন পেয়েছেন।
বাংলাদেশে হিন্দুরা অসহায়। প্রতিনিয়ত তাদের ভয়ের মধ্যে বাঁচতে হচ্ছে। সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা কেউ তাদের পাশে নেই, মৌলবাদী-জঙ্গী গোষ্ঠী নাবালিকা কন্যা অপহরণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তর, চাঁদাবাজি, জমি, ব্যবসা, বাড়ীঘর লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে। দেখার কেউ নেই। এ অবস্থায় ভারতের উচিত বাংলাদেশের হিন্দুদের পাশে দাঁড়ানো এবং কঠোর ব্যবস্থা নেয়া। বিশ্ব-মোড়ল হিসাবে আমেরিকা দর্শকের ভূমিকা নিতে পারেনা।
লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।
