প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত
নির্মমভাবে নিহত দিপু’র মৃত্য সংবাদ কি মূল্যহীন?
২০২৫ ডিসেম্বর ২২ ১৭:৪৪:৩৯
শিতাংশু গুহ
শনিবার ২০শে ডিসেম্বর সকালে ঘুম থেকে উঠে কম্পিউটার খুলতেই সাপ্তাহিক বাঙ্গালী পেলাম। দেখতে চাইলাম ময়মনসিংহের ভালুকায় দিপু চন্দ্র দাস-র খবরটি কিভাবে পরিবেশিত হয়েছে। নাই, ভ্যানিশ। প্রথম পাতা, শেষ পাতায় নাই, ভেতরে তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম, পেলাম না? প্রথম আলো, ডেইলি ষ্টার, উদীচী, ছায়ানটের খবর আছে, হাদীর হাস্যোজ্জ্বল ছবি দিয়ে লিড্ নিউজ আছে, নাই শুধু দীপুর মর্মান্তিক মৃত্যু সংবাদ। বেচারা দিপু, জন্মই তোমার আজন্ম পাপ, ‘মডারেট মুসলিম’ দেশে জন্ম গ্রহণ করে বিনা দোষে ইসলাম অবমাননার অপবাদ মাথায় নিয়ে তৌহিদী জনতার গনপিটুনি খেয়ে, জীবন্ত আগুনে পুড়েও নিউইয়র্কের ‘প্রগতিশীল’ একটি সাপ্তাহিকে ছোট্ট একটি শিরোনাম হবার যোগ্যতাও অর্জন করতে পারলে না, তোমার মৃত্যু বৃথা। পাঠক, আপনি কি জানেন এর কারণ কি? আমি জানি, কিন্তু বলবো না!
রবিবার ২১শে ডিসেম্বর সকালে পেলাম সাপ্তাহিক পরিচয়। ইউরেকা, পেয়েছি। মানুষ যখন বড় কিছু আবিষ্কার করে, বা খুঁজে পায় তখনই কেবল ‘ইউরেকা’ শব্দটি ব্যবহার করে? পাঠক, অনেক খোঁজাখুঁজির পর আমি সাপ্তাহিক পরিচয়ের শেষ পাতায় নীচের দিকে এক কলামে দিপু চন্দ্র দাসের খবরটি খুঁজে পেয়েছি, আনন্দ তো হতেই পারে? ভাবলাম, দিপু’র জীবনটা একেবারে ‘ষোলআনা’ মিছে নয়-তাঁর মৃত্য’র সংবাদটি’র কারো কারো কাছে কিছুটা ‘ভ্যালু’ আছে বটে! শেষ পাতা থেকে সংবাদটি ৪৬-র পাতায় গেছে, সেখানে বক্স করে বাকি অংশ ছাপা হয়েছে। বাংলাদেশের মিডিয়ায় দিপু’র করুন, অথচ নির্মম হত্যাকান্ড তেমন গুরুত্ব পায়নি। হিন্দু মরলে কি আসে যায়! সাংবাদিকরা কোন বিচ্ছিন্ন জগতের মানুষ নন, বাংলাদেশের মানুষের যা চরিত্র, সাংবাদিকের চরিত্র তো তা-ই হবে? তবে আমেরিকায় থেকে মানষিক জগতের একটু উন্নতি তো আশা করা যেতেই পারে!
সাপ্তাহিক বাঙ্গালী ও সাপ্তাহিক পরিচয় বেশ পুরানো গ্রহণযোগ্য পত্রিকা এবং দু’জন সম্পাদক আমার অত্যন্ত পরিচিত ও ঘনিষ্ট। সক্রিয়ভাবে ৪৭ বছর আমি সাংবাদিকতা পেশার সাথে জড়িত। আমি জানি দিপু’র সংবাদটি প্রথম পাতায় গুরুত্বসহ ছাপার যোগ্য, এমনকি এনিয়ে সম্পাদকীয় লেখা যেতে পারতো। এতে দিপু’র কিচ্ছু আসতো-যেতো না, সমাজের দোষত্রুটি ধরিয়ে দিলে সমাজ উপকৃত হতো, এবং এটি সাংবাদিকের কাজ। এনিয়ে ফেইসবুকে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু’র একটি নিবন্ধ পড়লাম, তাকে ধন্যবাদ। নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটি গঠনে সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোর ভূমিকা অপরিসীম। আমার এলেখা হতাশা থেকে উদ্ভুত। ৫ই আগষ্ট ২০২৪’র পর দেশে হিন্দুদের হতাশা আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। ভরসার কোন জায়গা নেই? পুলিশ, প্রশাসন, সরকার, রাজনৈতিক দল, জনতা, ব্যক্তি, সংগঠন প্রায় সবাই এন্টি-হিন্দু। এ অবস্থায় একমাত্র মিডিয়া ভরসা, মিডিয়া পারে মানুষের মধ্যে মানবিকতা জাগিয়ে তুলতে।
লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।
