ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

বেতনা নদী খননের মাটি লুটপাটে পুলিশের বাধা

পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে ট্রলি সরদারকে ছিনিয়ে আনলো একটি মহল, দুই পুলিশ আহত

২০২৫ ডিসেম্বর ২৪ ১৯:৩২:০৫
পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে ট্রলি সরদারকে ছিনিয়ে আনলো একটি মহল, দুই পুলিশ আহত

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে সাতক্ষীরার বেতনা নদীর খননকৃত মাটি লুটপাটকারী ট্রলী চালক সরদারকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। হামলায় বাধা দেওয়ায় দুই পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। আজ বুধবার সকালের দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহত পুলিশ সদস্যদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন, ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির সহকারি উপপরিদর্শক মাহাবুর রহমান ও সিপাহী মেহেদী হাসান।

ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির কর্তব্যরত উপপরিদর্শক সোহরাব হোসেন জানান, বেতনা নদীর খননকৃত মাটি নেহালপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে দীর্ঘদিন ধরে লুটপাট করে আসছিলো একটি মহল। এ চক্রের সর্দার ছিলো ধুলিহর সানাপাড়ার মৃত ইমান আলীর ছেলে ট্রলি চালক কিসমত আলী। সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে সাতক্ষীরা শহরের এক ঠিকাদার নেহালপুর এলাকার বেতনা নদীর খননকৃত মাটি কিনেছেন মর্মে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অর্ণব দত্ত তাকে মঙ্গলবার অবহিত করেন। একইসাথে ওই মাটি যাতে কেউ লুটপাট না করে তা দেখার জন্য তাকে নির্দেশনা দেন। তাৎক্ষণিক তিনি মঙ্গলবার ট্রলী চালকদের সর্দার ধুলিহর সানাপাড়ার কেসমত আলীসহ সকলকে অবহিত করেন।

সোহরাব হোসেন আরো জানান, বুধবার ভোরে কেসমত আলীর নেতৃত্বে ৭/৮ জন নেহালপুর স্লুইজ গেটের পাশে বেতনা খননের স্তুপকৃত মাটি কেটে ট্রলীতে ভরে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে মর্মে তিনি খবর পান। বিষয়টি তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জানান। একপর্যায়ে বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যসহকারি রাজকুমার মন্ডল বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে এসে তাদেরকে মাটি কাটতে বাধা দেন। তার উপর চড়াও হয় কেসমত ও তার সহযোগীরা। এক পর্যায়ে সকাল ১০টার দিকে তিনি ট্রলিভর্তি মাটিসহ কেসমতকে ধরে ফাঁড়িতে আটকে রাখেন। ফাঁড়িতে আটকে রেখে মারপিট করা হয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে দিলে কেসমতের ভাই রহমত, স্ত্রী শাহানারা ও ভাইপো বাবুরালীসহ ৩০/৩৫ জন ফাঁড়ির ফটক জোরপূর্বক খুলে ফেলে। তারা কেসমতকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে সহকারি উপপরিদর্শক মাহাবুর রহমান ও সিপাহী মেহেদী হাসান বাধা দেন। হামলাকারীরা ওই দুই পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে জখম করে কেসমতকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। ওই দুই পুলিশ সদস্যকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সাহেব আলী, নূর হোসেনসহ কয়েকজন জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বেতনা নদীর খননকৃত মাটি কেসমত এর নেতৃত্বে লুটপাট করা হতো। গত বছরের ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর অপর একটি গ্রুপ কেসমতের মাধ্যমে মাটি কেটে লুটপাট করে আসছে। কেসমতের পিছনে থাকা রাঘব বোয়ালরা নেপথ্যে থেকে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার মদত দিয়েছে।

এ ব্যাপারে কেসমত হোসেন দাবি করে বলেন, পুলিশের নিষেধ অমান্য করে তিনি বুধবার সকালে বেতনার মাটি কাটছিলেন এটা সত্য। কিন্তু তাকে ধরে আনার পর আর কখনো মাটি কাটবেন না বলার পরও ফাঁড়ির কর্মকর্তা উপপরিদর্শক সোহরাব হোসেন তাকে মারপিট করেছে।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মাসুদুর রহমান জানান, ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় কেসমতসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০/৩০ জনের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারি প্রকৌশলী লিয়াকত হোসেন বুধবার বিকেলে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

(আরকে/এসপি/ডিসেম্বর ২৪, ২০২৫)