ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২

প্রচ্ছদ » জাতীয় » বিস্তারিত

রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ-বিজিবি-সেনাবাহিনী, নিরাপত্তায় মোড়ানো ঢাকা

২০২৫ ডিসেম্বর ২৫ ১৩:০০:১৭
রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ-বিজিবি-সেনাবাহিনী, নিরাপত্তায় মোড়ানো ঢাকা

স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘ ১৭ বছর যুক্তরাজ্যের লন্ডনে প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার আগমনকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাজুড়ে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মোড় ও স্থাপনায় অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানায়, তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ পরিকল্পনার আওতায় কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু করে তার চলাচলের সম্ভাব্য রুট ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। সন্দেহভাজন যানবাহন ও ব্যক্তিদের নিয়মিতভাবে তল্লাশি করা হচ্ছে।

এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন রয়েছে অন্যন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালনের এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা সংস্থার সদস্যদের তৎপরতা বেড়েছে। কোথাও কোথাও ট্রাফিক পুলিশের নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে, যাতে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না ঘটে।

সড়কে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় রাজধানীতে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে যাতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না ঘটে। সেই দায়িত্ব পালনে তারা প্রস্তুত।

এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদারে বিমানবন্দর, ৩০০ ফিট ও গুলশানসহ রাজধানীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রেড, ইয়েলো ও হোয়াইট-এই তিন জোনে ভাগ করে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা ছক। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট এবং বিএনপির চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে।

তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ। কেবল যাত্রীরাই এই সময়ে প্রবেশ করতে পারবেন।

বিমানবন্দরে অবতরণের পর সেখান থেকে তারেক রহমান সড়কপথে পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় যাবেন। বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফিট পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীরা তাকে সংবর্ধনা জানাবেন। ৩০০ ফিট এলাকায় তৈরি মঞ্চে তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।

জনসভা শেষে তারেক রহমান সরাসরি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন। সেখানে চিকিৎসাধীন মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করবেন। মায়ের সঙ্গে দেখা করার পর তিনি গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় উঠবেন।

পুলিশ বলছে, দেশে ফেরার পর তারেক রহমান এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গমনাগমনের সময় পাবেন পুলিশ প্রটেকশনসহ বিশেষ নিরাপত্তা। এছাড়া তারেক রহমানের বাসভবন ও অফিসেও থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। নিরাপত্তা ছাড়পত্র ছাড়া কাউকে তার ধারেকাছে ভিড়তে দেবে না পুলিশ। ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও ছদ্মবেশে গোয়েন্দারা তারেক রহমানের নিরাপত্তার দিকটি দেখভাল করবেন।

মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এবং বিএনপির পক্ষ থেকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত একাধিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সভা থেকে নিরাপত্তাব্যবস্থাকে তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো- রেড, ইয়েলো ও হোয়াইট জোন। রেড জোনে যারা প্রবেশের সুযোগ পাবেন, তাদের বিশেষ সিকিউরিটি কার্ড দেওয়া হয়েছে। ওই কার্ড ছাড়া কেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারবেন না। ইয়েলো জোনের জন্য থাকছে আলাদা কার্ড। যারা এই কার্ড পাবেন, তারাই কেবল ইয়েলো জোনে যেতে পারবেন।

রেড ও ইয়েলো জোনের বাইরে যে এলাকা থাকবে, সেটা বিবেচিত হবে হোয়াইট জোন হিসেবে। এই জোনে প্রবেশ করতে পারবেন সাধারণ মানুষ।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ও তারেক রহমানের বাসভবন দেওয়ালঘেঁষা হওয়ায় দুটি বাসা এবং তারেক রহমানের অফিসকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিকল্পনার আওতায় আনা হয়েছে। বাসা ও অফিসের মাঝখানের দূরত্ব ও চলাচলের পথকে অতিগুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই পুলিশের বিশেষ নজরদারি শুরু হয়েছে। প্রতিটি থানা এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

এছাড়া বিশেষ এসকর্টসহ একাধিক চেকপোস্ট রয়েছে। সাধারণত গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় ৯টি চেকপোস্ট চালু থাকে। যেখানে সার্বক্ষণিকভাবে ১৫০ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষ্যে চেকপোস্টের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে তার বাসভবনের আশপাশেও।

তারেক রহমান বিমানবন্দর থেকে গুলশানে আসার পথে কয়েক হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওইদিন তার নিরাপত্তা উপলক্ষে মাঠে আছে ঢাকা মহানগর পুলিশের সোয়াট টিম, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা। তার বাসা ও অফিস ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে পুলিশ।

ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রওনক আলম বলেন, আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। পুলিশ সদরদপ্তর থেকেও একটা নিরাপত্তা নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। ডিএমপি সদর দপ্তরের সেন্ট্রালি একটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শাহরিয়ার আলী বলেন, ডিএমপির পক্ষ থেকে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে, সে হিসেবে তারেক রহমানের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে নিরাপত্তায় পর্যাপ্তসংখ্যক গোয়েন্দা পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. বাহারুল আলম বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তার সুরক্ষায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পোশাকে ও সাদাপোশাকে মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

ওয়ান ইলেভেনের পর তারেক রহমান ২০০৮ সালে কারাগার থেকে বেরিয়ে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান। ২০১২ সালে তারেক রহমান সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন এবং এক বছরের মধ্যেই সেটি গৃহীত হয়। তারপর আর দেশে ফেরা হয়নি তার। তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান প্রয়োজনে কয়েকবার দেশে আসতে পারলেও তিনি পারেননি।

(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ২৫, ২০২৫)