প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত
কাপ্তাইয়ে সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ মসজিদ ও চিৎমরম বিহারের সহাবস্থানে নির্মিত হচ্ছে তোরণ
২০২৫ ডিসেম্বর ২৭ ১৩:২৯:৫৪
রিপন মারমা, কাপ্তাই : পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার ও স্থানীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকা। দীর্ঘদিনের পাহাড়ি-বাঙালি মৈত্রীকে আরও সুদৃঢ় করতে উভয় সম্প্রদায়ের সম্মতিতে নির্মিত হচ্ছে বিহারের প্রধান তোরণ।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উৎসবমুখর পরিবেশে শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় কাপ্তাই সড়ক সংলগ্ন চিৎমরম বড় কিয়ং ঘাটে এই ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী বিহারের তোরণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। বিহারের পূজনীয় ভিক্ষু সংঘ মঙ্গল সূত্র পাঠের মাধ্যমে কাজের শুভ সূচনা করেন।
এ সময় স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙালি জনগোষ্ঠী একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। যেখানে ধর্মীয় স্থাপনা নিয়ে অনেক সময় স্পর্শকাতরতা তৈরি হয়, সেখানে ব্যাঙছড়ি ও চিৎমরমের মানুষ অভিন্ন ভ্রাতৃত্বের এক অনন্য বার্তা দিচ্ছেন।আজানের ধ্বনি ও বিহারের শান্তি মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারের প্রস্তাবিত প্রধান ফটকের অতি সন্নিকটেই রয়েছে ব্যাঙছড়ি মুসলিম পাড়া বায়তুল জামে মসজিদ। বছরের পর বছর ধরে এখানে আজানের ধ্বনি আর বৌদ্ধ বিহারের শান্ত পরিবেশ মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। তোরণ নির্মাণ নিয়ে উভয় পক্ষই সহমত পোষণ করায় এলাকার দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক স্থিতিশীলতা আরও মজবুত হয়েছে।
স্থানীয় সমাজসেবক মো: জসিম উদ্দিন ও মসজিদ কমিটির প্রতিনিধি মো: সাত্তার বলেন:"আমরা বছরের পর বছর ধরে এখানে ভাই-ভাই হিসেবে বসবাস করছি। বৌদ্ধ বিহারের গেইট হওয়া মানে আমাদের এলাকারই উন্নয়ন। আমাদের মাঝে কোনো বিভেদ নেই, আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।"বিহার পরিচালনা কমিটির সদস্যরা জানান, মসজিদ ও বিহার এই জনপদের দুটি পবিত্র স্তম্ভ। বাঙালি প্রতিবেশীদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন এই আনন্দকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এই তোরণটি কেবল বিহারের প্রবেশপথ নয়, বরং এটি হবে অত্র অঞ্চলের সম্প্রীতির প্রতীক।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে উপস্থিত ছিলেন- বিহার কমিটির পক্ষ থেকে: কাপ্তাই উপজেলা বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক উথোয়াইমং মারমা, সমাজ সেবক মংসুইপ্রু মারমা, ক্যওজমং চৌধুরী,পাইসুই উ মারমা,মংসুইউ মারমা,গণমাধ্যমকর্মী প্রমুখ।
মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন- জসিম উদ্দিন, আব্দুল সাত্তার, মো: নিজাম উদ্দিন, আমান উল্লা মানিক ও আব্দুর রশিদ। উথোয়াইমং মারমা ও
সমাজ সেবক মংসুইপ্রু মারমা বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ এই নির্মাণ কাজে সহযোগিতা করছেন।স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলছেন, কাপ্তাইয়ের এই সৌহার্দ্য পুরো দেশের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তোরণটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যেন তা রাস্তার যানচলাচল, স্থানীয় ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বা মসজিদের প্রবেশপথে কোনো বিঘ্ন না ঘটায়।
উল্লেখ্য, ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ঐতিহ্যবাহী বিহারটি দীর্ঘ ১০০ বছর ধরে পাহাড়ে শান্তি ও ধর্মীয় অনুশাসন প্রচার করে আসছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই উদ্যোগ পাহাড়ের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করবে।
(আরএম/এএস/ডিসেম্বর ২৭, ২০২৫)
