ঢাকা, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২

প্রচ্ছদ » প্রবাসের চিঠি » বিস্তারিত

প্রথম বছরের শেষে ট্রাম্পের নজরদারিতে নোয়েম ও প্যাটেল

২০২৫ ডিসেম্বর ২৭ ১৭:৫৬:৩০
প্রথম বছরের শেষে ট্রাম্পের নজরদারিতে নোয়েম ও প্যাটেল

ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক: প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর প্রথম বছর শেষের পথে। এই সময়ে দুই শীর্ষ কর্মকর্তা বিশেষ নজরদারির মুখে পড়েছেন—হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম এবং এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল। তাঁদের চাকরির স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

ট্রাম্প প্রকাশ্যে দুজনের প্রতিই সমর্থন জানালেও, নতুন বছরে নোয়েম ও প্যাটেল পদত্যাগ করবেন কি না বা সরিয়ে দেওয়া হতে পারে এ নিয়ে জল্পনা চলছে।

প্যাটেলের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পদের ব্যবহার, উচ্চপ্রোফাইল তদন্ত পরিচালনা (যেমন চার্লি কার্কের কথিত হত্যাকারীকে ধরার অভিযান) এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের কারণে সমালোচনা রয়েছে।

অন্যদিকে, নোয়েম ট্রাম্পের কঠোর বহিষ্কার নীতির মুখপাত্র হিসেবে সামনে থাকলেও, প্রশাসনের ভেতরে সীমান্তবিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত টম হোম্যান-এর সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যাবিগেইল জ্যাকসন এক বিবৃতিতে বলেন, “সেক্রেটারি নোয়েম, এফবিআই ডিরেক্টর প্যাটেল এবং প্রেসিডেন্টের পুরো আইনশৃঙ্খলা দল প্রেসিডেন্টের এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও আমেরিকাকে আবার নিরাপদ করতে অসাধারণ কাজ করছে।” তিনি আরও বলেন, এক বছরেরও কম সময়ে সীমান্ত সুরক্ষিত হয়েছে, অপরাধী অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কার করা হচ্ছে এবং বিপজ্জনক অপরাধীদের রাস্তা থেকে সরানো হচ্ছে। ২০২৬ সালেও প্রেসিডেন্টের দল ফল দিতে থাকবে।

নোয়েম প্রশাসনের দ্রুতগতির বহিষ্কার ও অভিবাসন প্রয়োগ জোরদারের প্রচেষ্টার প্রকাশ্য মুখ, যা ট্রাম্পের এজেন্ডার অন্যতম স্তম্ভ এবং নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। তবে সূত্রগুলো বলছে, নীতিনির্ধারণে চালিকাশক্তি ছিলেন ডেপুটি হোয়াইট হাউস চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার এবং হোম্যান। এতে নোয়েম ও হোম্যানের মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, যদিও এতে কারও বরখাস্ত হবে কি না—তা স্পষ্ট নয়।

প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর চিফ অব স্টাফ থাকা জেসন হাউসার বলেন, বহিষ্কার বাড়ানোর উদ্যোগের মধ্যে হোয়াইট হাউস পরিস্থিতি যাচাই করছে। তাঁর ভাষায়, “কমান্ড ও কন্ট্রোল কেমন, সবাই একই পাতায় আছে কি না এসব নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

জ্যাকসন আবার বলেন, নোয়েম ও হোম্যান প্রেসিডেন্টের এজেন্ডা বাস্তবায়নে একই পাতায় আছেন,' আর ঐতিহাসিকভাবে সুরক্ষিত সীমান্তই তার প্রমাণ'। সোমবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, আজ আমি ক্রিস্টি নোয়েমের সঙ্গে কথা বলেছি, টম হোম্যানের সঙ্গেও কথা বলেছি ওরা দারুণ কাজ করছে।

হাউসারের মতে, নোয়েমের নেতৃত্বে নীতির প্রচারে 'সোশ্যাল মিডিয়ার ঢাকঢোল' বড় ভূমিকা নিচ্ছে, যা ঐতিহ্যবাহী আইনশৃঙ্খলা পেশাদারদের সঙ্গে সংঘাত তৈরি করতে পারে। তিনি বলেন, নেতৃত্বের দক্ষতার অবমূল্যায়ন হয়েছে; বহু অভিজ্ঞ কর্মকর্তাকে পাশ কাটানো হয়েছে, আর তুলনামূলক অনভিজ্ঞ বা সংস্থার বাইরের লোকজনকে ব্যবস্থাপনায় বসানো হয়েছে—যার সমন্বয় অস্পষ্ট।

এক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা মনে করেন, নোয়েমের বরখাস্ত হওয়ার ঝুঁকি অতিরঞ্জিত। তাঁর কথায়, সব সিদ্ধান্ত ট্রাম্পই নেন… তিনি বিশ্বস্তদের সহজে সরান না।

প্যাটেলের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বিতর্কের সূত্র ব্রাউন ইউনিভার্সিটি-তে এক গুলিবর্ষণের পর, যাতে দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। প্যাটেল প্রথমে সামাজিক মাধ্যমে হেফাজতে নেওয়া এক সন্দেহভাজনের নাম প্রকাশ করেন; পরে ওই ব্যক্তি মুক্তি পায়—চার্লি কার্ক ঘটনার পরবর্তী পরিস্থিতির সঙ্গে যার মিল আছে।
ব্রাউন ইউনিভার্সিটির কথিত হামলাকারী ক্লদিও নেভেস ভ্যালেন্তে গত সপ্তাহে আত্মঘাতী গুলিতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। অনুসন্ধান চলার সময় প্যাটেল ও তাঁর সঙ্গী অ্যালেক্সিস উইলকিন্স-এর পূর্বে রেকর্ড করা এক পডকাস্ট অনলাইনে আসে; উপস্থাপক কেটি মিলার সময়টিকে দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেন। পরে হোয়াইট হাউসের ক্রিসমাস পার্টিতে তাঁদের উপস্থিতির ছবি পোস্ট হলে সমালোচকেরা অনুসন্ধানের মাঝেই পরিচালকের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট জিম হাইমস বলেন, “এটা অত্যন্ত গুরুতর কাজ… সামাজিক মাধ্যম বা ঝলমলে প্রচার নয়—আমেরিকানদের নিরাপত্তাই মূল।” হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট জেমি রাসকিন এফবিআই জেট ব্যবহারের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছেন।

মঙ্গলবার এমএস নাউ জানায়, প্যাটেল নিজের ও নিরাপত্তা দলের জন্য বিশেষ সাঁজোয়া বিএমডাব্লিউ এক্সএস ব্যবহার করছেন—প্রচলিত শেভি সাবার্বানের বদলে।

ট্রাম্প অবশ্য প্যাটেলকে সরানোর খবর নাকচ করে বলেন, তাঁর এফবিআই পরিচালক “দারুণ কাজ” করছেন; একই সঙ্গে প্রাথমিক অগ্রগতির ঘাটতির দায় ব্রাউন ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের দিকে ঠেলে দেন।

তবে ডেপুটি এফবিআই পরিচালক ড্যান বংগিনো—প্যাটেলের মতোই মাগা-ঘরানার—নতুন বছরে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সাবেক মিসৌরি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যান্ড্রু বেইলি-কে সহ-ডেপুটি পরিচালক হিসেবে আনার সিদ্ধান্তে প্যাটেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা আরও বাড়তে পারে।

তবে কংগ্রেসে প্যাটেলের বহু মিত্র এখনো তাঁর পক্ষে। প্রতিনিধি ড্যারেল ইসা বলেন, তাঁর নেতৃত্বে এফবিআই অনেক উন্নত হয়েছে… তিনি যে সংস্থাটি পেয়েছিলেন, সেটিকে আবার গড়ে তুলছেন।

(আইএ/এসপি/ডিসেম্বর ২৭, ২০২৫)