ঢাকা, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

ফরিদপুরে এবার আকস্মিকভাবে বন্ধ হলো পূর্ব নির্ধারিত ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ি উৎসব

২০২৫ ডিসেম্বর ২৭ ১৯:৫১:২৯
ফরিদপুরে এবার আকস্মিকভাবে বন্ধ হলো পূর্ব নির্ধারিত ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ি উৎসব

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুরে আবহমান বাংলার চিরাচরিত ও স্থানীয় নিজস্ব ঐতিহ্যকে ধারণ করা বহুল প্রতীক্ষিত ও কাঙ্খিত ঘুড়ি উৎসবটি শেষ মুহূর্তে বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় জেলা প্রশাসন।

আজ শনিবার পূর্ব নিধারিত এ উৎসবটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু হঠাৎ প্রশাসনের নির্দেশনায় তা বন্ধ হওয়ার সিদ্ধান্তে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় উৎসবপ্রেমী সাধারণ জনগণসহ এ উৎসবটির আয়োজকেরা।

অপরদিকে, জেলা প্রশাসন বলছে একাধিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থানীয় জননিরাপত্তা নিশ্চিতের তাগিদেই অনুষ্ঠানটি বন্ধ নয়, সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।

হঠাৎ ঘুড়ি উৎসব বন্ধের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে ফরিদপুর পুলিশ সুপার (এসপি) মোঃ নজরুল ইসলাম, পিপিএম-সেবা উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, 'এটা বন্ধ করা আমাদের কাজ নয়, আমাদের কাজ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। জেলা প্রশাসন থেকে এ উৎসবটি বদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।' নিশ্চয়ই জনগণের সার্বিক নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান এসপি নজরুল।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যার নিকট জানতে চাইলে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে তিনি জানান, 'অনুষ্ঠানটি বন্ধ নয়, বরং সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে, আর এটা করা হয়েছে স্থানীয় জনসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তার কথা মাথা রেখেই'।

তিনি আরও জানান, 'গতকাল শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে ফরিদপুর জেলা স্কুলের ১৮৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের সমাপনী অংশে নগর বাউল জেমসের সংগীত পরিবেশনের সময় সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে এবং জেলার স্থানীয় জনগণের জননিরাপত্তা সমুন্নত ও স্বাভাবিক রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।'

ডিসি আরও জানান, যেহেতু এ ঘুড়ি উৎসবটিতে প্রায় লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে, সেক্ষেত্রে বর্তমান পরিস্থিতিতে জননিরাপত্তার একটি ঝুঁকি তো থাকেই'। এ সময় তিনি গতকালের জিলা স্কুলে ঘটে যাওয়া অনাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কথা স্বরণ করিয়ে বলেন, সবার আগে জেলার মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা জরুরি।'

এছাড়া, স্থগিত হওয়া গণমানুষের ঐতিহ্যবাহী এ ঘুড়ি উৎসবটি পরবর্তীতে ঠিক কবে নাগাদ অনুষ্ঠিত হতে পারে সেটি ঠিক না জানাতে পারলেও, পরে সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে এ উৎসবটির অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সেই সাথে, ফরিদপুরের ঐতিহ্য ধারণ করা এ অনুষ্ঠানটি প্রতি বছরই নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হবে বলেও নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যা।

এর আগে, ফরিদপুরের এবারের ঘুড়ি উৎসবের ব্যাপারে খোঁজ নিতে আয়োজন কমিটির সভাপতি মো. ইমদাদ হাসানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে আজকের (শনিবার) নির্ধারিত ঘুড়ি উৎসবটি স্থগিত করা হয়েছে। এ সময়, ঘুড়ি উৎসবটি সফল ও উৎসবমুখর করতে আয়োজকদের সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও শেষ মুহূর্তে জেলা প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত অত্যন্তকে হতাশাজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত বলে উল্লেখ করেছে আয়োজক কমিটি।

উল্লেখ্য করা যেতে পারে, ফরিদপুরের এ ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ি উৎসবটি স্থানীয়দের চিত্তবিনোদনের জন্য একটি অন্যতম বাৎসরিক ও সম্প্রীতির উৎসব হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এ উৎসবটি স্থানীয়দের জন্য শুধু একটি আয়োজন নয়; এটি গ্রামীণ সংস্কৃতি ও আবহমান বাংলার নিজস্ব ঐতিহ্যকে ধারণ করে থাকে। প্রতিবছর এ উৎসব ঘিরে শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী, আবালবৃদ্ধবনিতা সহ সব বয়সের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়। যা জেলার স্থায়ী নাগরিকদের সামাজিক, সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির আঞ্চলিক বন্ধনকে আরও অটুট ও সুদৃঢ় করে থাকে। তাই, এমন একটি গণ উৎসব হঠাৎ প্রশাসনিক নির্দেশনায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সহ পথে-ঘাটে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। অনেককে আবার প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলে আলোচনা ও সমালোচনা করেছেন। কেউ কেউ আবার দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও সময় বিবেচনায় জেলা প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে জ্ঞাপন করেছেন ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

(আরআর/এসপি/ডিসেম্বর ২৭, ২০২৫)