ঢাকা, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগ

ঘুষের ১০ লাখ টাকা জব্দে ১১ দিনেও মামলা নেই

২০২৫ ডিসেম্বর ২৮ ১৮:২৬:১৯
ঘুষের ১০ লাখ টাকা জব্দে ১১ দিনেও মামলা নেই

# পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় দুদক মামলা করবে।

# দুদক বলছে এখনও নথি পায়নি।

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে ঘুষের ১০ লাখ টাকাসহ সড়ক বিভাগের সাবেক এক পিওন আটকের ১১ দিনেও কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করবে। দুদক বলছে, তারা এ সংক্রান্ত নথি এখনও পায়নি।

গত ১৭ ডিসেম্বর রাত ১১টার দিকে জেলা পুলিশের মিডিয়া গ্রুপে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ওই দিন শহরের পুলিশ লাইন্স মোড়ে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে একটি প্রাইভেটকার থামিয়ে তল্লাশি করা হয়। এ সময় একটি ব্যাগে থাকা দুটি খামে ১০ লাখ টাকা পাওয়া যায়।

জিজ্ঞাসাবাদে প্রাইভেটকারের আরোহী শরীয়তপুর সড়ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত পিওন মোশারফ হোসেন পুলিশকে বলেন, এই টাকা গোপালগঞ্জ সড়ক সার্কেলের উপসহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেনকে দেওয়ার জন্য এনেছিলেন। পরদিন পুলিশ সাবেক পিওন, প্রাইভেটকারের চালক ও উপসহকারী প্রকৌশলীকে জেলা কারাগারে পাঠায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগের দায়িত্বশীল একাধিক ব্যক্তি বলেন, শরীয়তপুর সড়ক বিভাগের কাজের দরপত্র অনুমোদন করাতে ওই টাকা গোপালগঞ্জ সড়ক সার্কেল ও জোনে দেওয়ার জন্য আনা হয়েছিল। টাকার একটি খামের ওপর লেখা ছিল ‘সার্কেল’, অর্থাৎ গোপালগঞ্জ সড়ক সার্কেল দপ্তরের নাম উল্লেখ ছিল। অন্য খামের ওপর কী লেখা ছিল, তা তারা দেখতে পারেননি বলে জানান।

এদিকে, ঘুষের টাকা জব্দের পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন জেলার ঠিকাদাররা। তারা বলছেন, গোপালগঞ্জ সড়ক সার্কেল ও জোনে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচ জেলা– গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী সড়ক বিভাগ গোপালগঞ্জের ওই দুটি দপ্তর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এসব জেলার যে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে এ দুই দপ্তরে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ২% হারে টাকা আদায় করা হয়। ঠিকাদাররা বলছেন, টাকা না দিলে শীর্ষ কর্মকর্তারা নিজেরাই কাজের সাইটে যান। বিভিন্ন অজুহাতে কাজ বন্ধ করে দিয়ে হয়রানি করা হয়।

এক ঠিকাদার বলেন, জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাদেকুল ইসলাম আমার কাছে ২ শতাংশ টাকা দবি করেন। আমি দেড় পার্সেন্ট টাকা দিয়েছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়ক বিভাগের দায়িত্বশীল একাধিক ব্যক্তি জানান, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাদেকুল ইসলাম ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জিকরুল ইসলাম ঘুষকান্ড থেকে বাঁচতে কৌশলে সব কিছু ম্যানেজ করছেন। তারা এ ঘটনার দায় উপসহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেনের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন।

তারা আরো বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ে পিরোজপুর-গোপালগঞ্জ ভায়া নাজিরপুর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ১২৬ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা মূল্যের ২য় প্যাকেজটি সাদেকুল ইসলাম শতকরা ৮.৩১% উর্ধ্বে ১৩৬ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকায় চুক্তি করেন। অতিরিক্ত ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা তিনি ঘুষ হিসেবে প্রদান করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করেন।

গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানান, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দপ্তরে টাকা ছাড়া কিছুই হয়না। তারা এখান থেকে কোটি-কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য করছেন। বেতন থেকে বাসা ভাড়া বাবদ টাকা কর্তন করেন না। সরকারি ডুপ্লেক্স বাস ভবনের পরিবর্তে তারা পরিদর্শন বাংলোতে অবস্থান করেন। তারা সরকারী খরচে আয়েশী জীবনযাপন করেন।অধীনের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের সাথে দুব্যাবহার করে আসছেন। তাদের কর্মকান্ডে গোপালগঞ্জ সড়ক সার্কেল ও জোনের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ।

ঘুষের ১০ লাখ টাকা জব্দের বিষয়ে গোপালগঞ্জ সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জিকরুল ইসলাম বলেন, কাকে দেওয়ার জন্য ওই টাকা আনা হয়েছিল, তা আমি জানি না। ওই খামে আমার দপ্তরের নাম লেখা ছিল কিনা তা আমি দেখিনি।

তিনি আরও বলেন, উপসহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেনকে পুলিশ কেন আটক করল, তা আমারও প্রশ্ন। ঠিকাদারদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, কাজের জন্য আমাদের দপ্তরে ২ শতাংশ হারে টাকা নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। আমি এখানে এক বছর ধরে কর্মরত। এখানে কখনও এভাবে টাকা আদায় করা হয়নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে গোপালগঞ্জ সড়ক সার্কেলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাদেকুল ইসলামকে বারবার কল দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।

গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সরোয়ার হোসেন বলেন, টাকা জব্দের বিষয়ে দুদক মামলা করবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রামপ্রসাদ মণ্ডল বলেন, এখনও ওই ঘটনার কোনো নথি আমাদের কাছে আসেনি। নিয়ম অনুযায়ী কোনো নথি হাতে পেলে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠাই। সেখান থেকে অনুমতি দিলে আমরা মামলা করি।

(বি/এসপি/ডিসেম্বর ২৮, ২০২৫)