প্রচ্ছদ » কৃষি » বিস্তারিত
ঝিনাইদহে ফুলের দামে হতাশ চাষীরা
২০২৫ ডিসেম্বর ২৮ ১৯:০২:০৮
হাবিবুর রহমান, ঝিনাইদহ : ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে মাঠ থেকে ফুল তুলছেন চাষীরা। গাঁদা, গোলাপ, জারবেরাসহ রঙিন ফুলে ভরে উঠছে ঝিনাইদহের ক্ষেতগুলো। তবে সেই রঙিন দৃশ্যের আড়ালে জমে উঠেছে হতাশা। বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ফুলচাষীরা পড়েছেন চরম লোকসানে। উৎপাদন খরচ বাড়লেও পাইকারি বাজারে ফুলের দাম ঠেকেছে তলানিতে। আগের বছরের তুলনায় ফুলের দাম কমেছে কয়েকগুণ। ফলে ক্ষেত থেকে ফুল তুলেই অনেক চাষীকে লোকসানের হিসাব কষতে হচ্ছে।
আড়তদাররা বলছেন, বাজারে ফুলের চাহিদা কম থাকায় দাম পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সামাজিক অনুষ্ঠান কমে যাওয়ায় ফুলের বিক্রি কমেছে। বাইরে থেকে এ বছর ব্যাপারীরা আসছে না। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় চাষীরা কম দামে ফুল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ঝিনাইদহের ৬ টি উপজেলায় ১৯০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৩১ হেক্টর জমিতে গাঁদা, ৩৮ হেক্টর জমিতে রজনীগন্ধা, ১৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের গোলাপ ও ৬ হেক্টর জমিতে জারবেরা ফুলের চাষ করা হয়েছে।
সম্প্রতি সদর উপজেলার গান্না ও কালীগঞ্জের বালিয়ডাঙ্গা এলাকার কয়েকটি ফুলবাগানে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চাষীরা অনেকে ফুলক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত। অনেকে আবার ক্ষেতে থেকে ফুলসহ গাছ তুলে ফেলে দিচ্ছেন। রজনীগন্ধা, জারবেরাসহ অন্যান্য ফুলের যতœ নিলেও গাঁদা ফুলের ক্ষেত অযত্ন অবহেলায় পড়ে রয়েছে।
কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলার কয়েকটি আড়ত ঘুরে জানা গেছে, প্রতি ঝোপা গাঁদাফুল ৫০ থেকে ৬০ দরে বিক্রি করা হচ্ছে। যা গত বছর ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। প্রতি পিস গেলাপ ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। এছাড়াও রজনীগন্ধা, জারবেরাসহ অন্যান্য ফুল এ বছর অর্ধেকেরও কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
বালিয়াডাঙ্গা বাজারের ফুলের আড়তদার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর ফুলের উৎপাদন গতবারের চেয়ে বেশি হয়েছে। তবে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আগের মত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে না। ফলে ফুলের চাহিদা কমে গেছে। এজন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ বছর ফুল কিনতে আসছেন না ব্যাপারীরা। যে কারণে কম দামে ফুল বিক্রি করতে হচ্ছে আমাদের।’
সদর উপজেলার গান্না এলাকার ফুলচাষী মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর সার ও কীটনাশকের দাম বেশি। এক বিঘা জমিতে ফুল চাষ করতে প্রায় দেড়লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। তবে বাজারে ফুল বিক্রি করে সেই টাকা এ বছর ওঠাতে পারছি না। গতবারের চেয়ে এবার ফুলের দাম অর্ধেকেরও কম। তাই বাগান থেকে ফুলগাছ তুলে ফেলছি। ভাবছি অন্য ফসল চাষ করবো।’
জেলা ফুলচাষী সমতির সভাপতি জমির হোসেন বলেন, ‘হঠাৎ করেই এবছর ফুলের দাম কমে গেছে। বাইরে থেকে আগের মত পাইকাররা আসছে না। জেলার শত শত ফুলচাষী দাম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ফুলচাষ ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলো কর্মহীন হয়ে পড়ছে। এ নিয়ে আমরা হতাশার মধ্যে রয়েছি। সরকার যদি আমাদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে দেশের অন্যতম ফুল উৎপাদনকারী জেলা ঝিনাইদেহর চাষীরা বেঁচে থাকবে।’
এ ব্যাপাারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘এ মৌসুমে ফুলের উৎপাদন বেশি হয়েছে। ফলে ফুলের দাম কিছুটা কম। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ ফুলচাষীদের তালিকা তৈরি করছি। আগামী মৌসুমে যেনো তাদের বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘সামনের ফেব্রুয়ারিতে কয়েকটি জাতীয় কর্মসূচি রয়েছে। আশা করছি সে সময় ফুল বিক্রি করে চাষীরা কিছুটা হলেও তাদের ক্ষতি পোষাতে পারবে।’
(এইআর/এসপি/ডিসেম্বর ২৮, ২০২৫)
